চুরি যাওয়ার তিন দিনের মাথায় মায়ের কোলে ফিরে গেল পাঁচ দিন বয়সী নবজাতকটি। সন্তানকে ফিরে পেয়ে মা তাসমিন আক্তারের চোখে আনন্দাশ্রু চিকচিক করছিল। অন্যদিকে নিঃসন্তান যে মা শিশুটিকে চুরি করে বুকে জড়িয়ে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন, আসল মায়ের কোলে তাকে তুলে দিতে গিয়ে সেই শিমু দাশের চোখের জল বাঁধ মানছিল না।
গতকাল ইপিজেড থানায় এমন আবেগঘন দৃশ্য চোখে পড়ে। এ ঘটনায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন দম্পতি শিমু দাশ (২০) ও রিমন মল্লিক (২৬)। তাদের বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার তৈলারদ্বীপ গ্রামে। এর আগে গ্রেপ্তার করা হয় ওই হাসপাতালের তিনজনকে। তারা হলেন নগরীর ইপিজেড থানার নেভি হাসপাতাল গেটের মমতা মাতৃসদন-২ হাসপাতালের প্রোগ্রাম অফিসার মোরশেদ আলম (৪২), অফিস সহকারী মো. কাশেম (৩০) ও নাইট গার্ড মো. সেলিম (৩৯)। ওই নবজাতক আনোয়ারা উপজেলার গহিরা এলাকার মো. শহিদ ও তাসমিন আক্তার দম্পতির সন্তান। ২৭ আগস্ট সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শিশুটির জন্ম হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ইপিজেড থানার ওসি আব্দুল করিম আজাদীকে বলেন, গর্ভের সন্তান নষ্ট হওয়ায় মুষড়ে পড়া নারী মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা পূরণে স্বামী ও হাসপাতাল কর্মচারীদের সহায়তায় নবজাতকটিকে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল। মৌখিক অভিযোগ পেয়ে আমরা প্রথমে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করি। তিন কর্মচারী ঘটনার সময় হাসপাতালে ছিলেন। তাদের আচরণ আমাদের কাছে সন্দেহজনক মনে হওয়ায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে হেফাজতে নিই। একপর্যায়ে তারা স্বীকার করে, তারা তিনজনসহ আরও কয়েকজন নার্স-আয়া মিলে নবজাতকটি চুরিতে সহযোগিতা করেছে। নবজাতক যাদের হেফাজতে আছে তাদের ঠিকানা শনাক্ত করি। টানা ৩০ ঘণ্টার অভিযানে আনোয়ারা উপজেলার পূর্ব বারখাইন এলাকা থেকে নবজাতক চুরিতে জড়িত মূল হোতা শিমু ও তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করি।
তিনি বলেন, যে মহিলা বাচ্চাটি চুরি করেছিল সে পেশায় একজন পোশাককর্মী। দীর্ঘদিন ধরেই তার সন্তান হচ্ছিল না। ওই হাসপাতালে সে টিকা নিতে গিয়েছিল। এ সময় নার্স সেজে বাচ্চাটি চুরি করে পালিয়ে যায়। তবে বাচ্চাটিকে উদ্ধার করলেও আমরা তদন্ত বন্ধ করছি না। এ কাজে আর কেউ জড়িত আছে কিনা তদন্ত করে দেখছি।
চুরি হওয়া নবজাতকের মামা রায়হান উদ্দীন আজাদীকে বলেন, গত শুক্রবার অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চাটির জন্ম হয়। বাচ্চাটির সবকিছুই মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। রোববার বিকেলে এক নারী নার্স সেজে বাচ্চাকে ইনজেকশন দিতে হবে বলে ক্লিনিকের নিচতলায় নিতে চাইলে আমার বোন তাকে ওই ক্লিনিকের নার্স মনে করে অনুমতি দেন। পরে নিচতলায় গিয়ে খোঁজাখুঁজি করলে বাচ্চাকে পাওয়া যায়নি। সিসিটিভির ফুটেজে এক নারী নবজাতককে নিয়ে চলে যেতে দেখা যায়।
গ্রেপ্তার শিমু দাশ বলেন, আমি ইপিজেড এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করি। নবজাতকটিকে চুরি করে আমার গ্রামের বাড়ি আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন এলাকায় নিয়ে যাই। তিনি বলেন, বিয়ের পর দীর্ঘদিন বাচ্চা হচ্ছিল না। সন্তান গর্ভে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। চেয়েছিলাম দত্তক নিয়ে হলেও একটি সন্তানের মুখ দেখতে। সেজন্য বিভিন্ন সময় মাতৃসদনটিতে যাওয়া-আসা করতাম। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রোববার শিশুটির জন্ম হলে সোমবার সন্ধ্যায় নার্স সেজে ওই ওয়ার্ডে যাই। ইনজেকশন দেওয়ার কথা বলে শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালের নিচে নামি।