সুদানের আবেই এলাকায় শান্তিরক্ষা মিশনে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ভয়াবহ ড্রোন হামলায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য জাহাঙ্গীর আলম নিহত হয়েছেন। তার সঙ্গে নিহত হয়েছেন আরো পাঁচজন। আহত হয়েছেন আটজন। মেস ওয়েটার হিসেবে কর্মরত জাহাঙ্গীর আলমের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের তারাকান্দি মধ্যপাড়া গ্রামে।
পরিবার জানায়, হযরত আলী ও পালিমা বেগম দম্পতির তিন ছেলের মধ্যে জাহাঙ্গীর ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি ১১ বছর ধরে সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার ও তিন বছর বয়সী একমাত্র ছেলে ইরফানকে রেখে পেশাগত দায়িত্বের খাতিরে মাত্র এক মাস সাত দিন আগে সুদান যান তিনি। পরিবারে তার মৃত্যুর খবর আসার পর থেকেই চলছে শোকের মাতম। গ্রামজুড়ে ছড়িয়েছে বিষাদের ছায়া। খবর বিডিনিউজের।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর–আইএসপিআর জানায়, শনিবার দুপুরে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় ছয় বাংলাদেশি নিহত এবং আটজন আহত হন। গতকাল তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে। পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রূপম দাস বলেন, আমি ঘটনা শোনার পরই পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। জাহাঙ্গীরের বাবা মো. হযরত আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন, আমি অসুস্থ থাকায় যাওয়ার সময় আমাকে বলেছিল কাজ–কাম কম করতে। দেশে ফিরে আমাকে সাহায্য করবে। আমাদের সবাইকে সে দেখাশোনা করত। যাওয়ার সময় কিছু টাকা দিয়ে গিয়েছিল। নিহতের মা পালিমা বেগম ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। যাকে কাছে পাচ্ছেন তাকে বলছেন, ছেলেকে তার কোলে এনে দিতে। ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানিয়ে তিনি বলছিলেন, আমার বাবাকে এনে দেন। সে ছিল আমার ঘরের আলো। জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর খবর শোনে স্ত্রী রুবাইয়া আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই শাহিন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমার ভাই পরিবারকে খুব ভালোবাসতেন। আমাদের খুব আদর করতেন। যখন যা চেয়েছি তাই দিয়েছেন। কিছুদিন আগেও আমাকে ফোন দিয়ে বলছে, মা–বাবার সেবা–যত্ন করতে। বিকালে স্ত্রীর সঙ্গে কথা, রাতে সবুজের মৃত্যুর খবর : সুদানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের ঘাঁটিতে হামলায় নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর একজন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মো. সবুজ মিয়া। তার মৃত্যুর খবরে উপজেলার মহদিপুর ইউনিয়নের ছোট ভগবানপুর গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবার, স্বজন ও গ্রামবাসীর কান্নায় ভারি হয়ে ওঠেছে পরিবেশ। সবুজ মিয়া ওই গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমান ও ছকিনা বেগমের ছেলে।
পরিবার জানায়, মাত্র দুই বছর বয়সে বাবাকে হারান সবুজ। দরিদ্র পরিবারের সন্তান সবুজ অভাব অনটনের মধ্যে বড় হন। এক মাস সাত দিন আগে ৭ নভেম্বর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দিতে সুদানে যান সবুজ মিয়া। সেখানে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অসামরিক লন্ড্রি কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। সবুজের মৃত্যুর খবরে তার মা ছকিনা বেগম ও স্ত্রী নুপুর আক্তার বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন।
নুপুর আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সুদানে যাওয়ার পর শনিবার বিকালে কয়েক মিনিটের জন্য ওর (সবুজ) সঙ্গে কথা হয়েছিল। এরপর রাত ১২টার দিকে খবর পাই ও আর নেই।
ছেলে হারানোর খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা ছকিনা বেগম। বিলাপ করত করতে তিনি বলছিলেন, বাবা হামার একমাত্র বুকের ধন আছিল। গত মাসেই সুদান গেছে। ফোনে কথা কয়া খোঁজ নিত। এখন হামার খোঁজ নিবে কে? হামার বাবার লাশ বাড়িতে চাই। ওকে বাড়িতে আনলে হামার আত্মা শান্তি পাবে। সবুজের মৃত্যুতে গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
পরিবার জানায়, এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবুজ ছিলেন ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় মা ও স্ত্রীকে নিয়েই বাড়িতে থাকতেন তিনি। দেড় বছর আগে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ নাটোর জেলার বাসিন্দা নুপুর আক্তারকে বিয়ে করেন সবুজ। তাদের কোনো সন্তান নেই।
সবুজ মিয়া প্রায় ১১ বছর আগে প্রতিবেশী এক চাচার মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অসামরিক ধুপি হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি লন্ড্রি কর্মচারীর পদে উন্নীত হন। তিন মাস আগে ছুটিতে বাড়িতে এসে আবার কর্মস্থলে যোগ দেন।
পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাবের আহমেদ বলেন, নিহতের বিষয়ে খোঁজ–খবর নেওয়া হচ্ছে এবং সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতার উদ্যোগ নেওয়া হবে।












