আল্লাহ পাক মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর যারা অবিশ্বাসী তারা ভোগে নিমগ্ন থাকে এবং পশুর ন্যায় উদর পূর্তি করে, তাদের বাসস্থান জাহান্নাম। (সুরা মোহাম্মদ : আয়াত ১২)। পশুশক্তির বিনাশ ও মনুষ্যত্বের বিকাশের জন্য সিয়াম সাধনার বিধান আমাদের ওপর ফরজ করেছেন। প্রবৃত্তিকে শাসন মানতে অভ্যস্ত মানুষকে পাশবিকতা থেকে উদ্ধার করাই সিয়ামের উদ্দেশ্য। প্রবৃত্তি ও বিবেকের দ্বন্দ্বের মাধ্যমে কারো পশুত্ব এবং কারো মনুষ্যত্ব শক্তির জয়-পরাজয় হয়। প্রবৃত্তি যখন বিবেককে শাসন করে তখন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব আশরাফুল মখলুকাতের সমস্ত গুণাবলীর বিপর্যয় ঘটে এবং পশুর চেয়ে অধম প্রাণিতে পরিণত হয়। তাই কুপ্রবৃত্তিকে শাসন করে বিবেককে জাগ্রত করতে হয়। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের মন আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। শরীর নিয়ন্ত্রণাধীন। আলোর গতির চেয়ে মনের গতি অনেক বেশি। মনকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন কাজ। সে কঠিন কাজটি করতে নফসকে আগে চিনতে হবে।
হাদিসে পাকে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, মান আরাফা নাফসাহু ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু। অর্থাৎ যে নফসকে চিনতে পেরেছে, সে তার রবকে চিনতে পেরেছে। নফসের পরিশুদ্ধির দ্বারা মহান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যায়। নফসের পরিশুদ্ধির মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর অলি হতে পারে। আবার নফসের প্রতারণায় মানুষ জাহান্নামের জ্বালানিতে পরিণত হয়।
প্রিয় নবী (দ.) ইরশাদ করেছেন, মানুষের ভিতরে এমন একটি টুকরো আছে, যে টুকরোটি পরিশুদ্ধ হলে পুরো শরীর পরিশুদ্ধ হয়ে যায়। এই টুকরোটি নষ্ট হয়ে গেলে পুরো শরীর নষ্ট হয়ে যায়। সে অংশটি হল আত্মা। আত্মশুদ্ধির ও আত্মশাসনের উদ্দেশ্যই সিয়াম সাধনার বিধান। শরীয়তের সম্পর্ক মানুষের বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে। তরীকতের সম্পর্ক ভিতরের (আত্মার) সাথে। নিয়ত ও ঈমান অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাহ্যিক বিধান সঠিক হওয়া অভ্যন্তরীণ বিষয় সঠিক হওয়ার ওপর নির্ভর করে। তাই ইসলামে অভ্যন্তরীণ বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ বিষয় আত্মার বিষয়। এটি আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে হয়ে থাকে। নিয়ত অভ্যন্তরীণ আর আমল বাইরের। নবী পাক (দ.) মোমিনের নিয়ত ভালো আমলের চেয়ে উত্তম বলে ঘোষণা করেছেন। ঈমান ছাড়া আমলের দাম নেই। কিন্তু আমল ছাড়া ঈমানের দাম আছে। ঈমান ভিতরের, আমল বাইরের। বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জাতিসংঘের মতো প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। শান্তি কতটুকু প্রতিষ্ঠা হয়েছে তা চিন্তার বিষয়। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে চিত্তশুদ্ধিতে প্রকৃত শান্তি সমাজে প্রতিষ্ঠা করা যায়।