সিয়াম পালন করে দরিদ্রের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ মস্তিস্ক ও স্বাধীন মুসলমানদের উপর যাকাত দেয়া ফরজ। যখন পূর্ণ নেছাব পরিমাণ (যতটুকু সম্পদ থাকলে যাকাত ফরজ হয়) ধন–সম্পদের পূর্ণ মালিক হয় কোনো মুসলমান, যা অধিকারে পূর্ণ এক বছর থাকে, তখন তার উপর যাকাত ওয়াজিব হয়। নাবালক, পাগল ও মুকাতিব গোলাম (যে গোলামের মুক্তি মালিকের সাথে কোনো চুক্তির উপর নির্ধারিত, তাকে মুকাতিব গোলাম বলে, যেমন – মালিকের সাথে গোলামের এরূপ চুক্তিবদ্ধ হল যে, সে যদি একটা নির্দ্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে পারে তবে সে মুক্তি পাবে) তাদের উপর যাকাত ফরজ নয়। যার সম্পদ পরিমাণ ঋণ আছে তার উপর যাকাত ফরজ নয়। ঋণ বাদ দিয়ে যদি সে নেছাব পরিমাণ মালের মালিক হয় তবে সে অতিরিক্ত মালের যাকাত দিতে হবে। বসবাসের ঘর, পরিধেয় কাপড়, ঘরের আসবাবপত্র, আরোহনের পশু, সেবা–শুশ্রুষার গোলাম ও ব্যবহারিক হাতিয়ার বা যন্ত্রপাতির যাকাত দিতে হয় না। যাকাত আদায় করার সময় অথবা আসল মাল হতে যাকাতের মাল পৃথক করার সময় যাকাতের নিয়ত করতে হবে। নতুবা যাকাত আদায় হবে না। যে ব্যক্তি তার সমস্ত মাল দান করে দিল কিন্তু যাকাতের নিয়ত করল না এতে সে যাকাতের দয়া হতে মুক্তি পাবে।
রৌপ্যের যাকাত : দুইশত দিরহামের কম হলে রৌপ্যের যাকাত দিতে হয় না। দুইশত দিরহাম অর্থাৎ সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য কারো মালিকানায় এক বছর থাকলে তাকে পাঁচ দিরহাম যাকাত দিতে হবে। ঈমাম আবু হানিফা (রহ.) এর মতে, দুইশতের উপর চল্লিশের কম হলে অতিরিক্তের জন্য যাকাত দিতে হবে না। তবে চল্লিশ হলে আরও এক দিরহাম যাকাত দিতে হবে। অতঃপর প্রত্যেক চল্লিশ দিরহামে এক দিরহাম যাকাত দিতে হবে। ঈমাম আবু ইউসুফ ও ঈমাম মোহাম্মদ (রহ.) বলেন, দুইশতের বেশি হলে যাকাত সেই হারেই হিসেব করে দিতে হবে। কোনো জিনিসে যদি রৌপ্যের অংশ বেশি হয়, তবে তাকে রৌপ্যের হিসেব ধরে যাকাত দিতে হবে। কিন্তু এর মধ্যে যদি খাদ বেশি হয়, তবে তাকে আসবাবপত্রের হিসেব ধরবে। এই সকল জিনিসের দাম ধরে যাকাতের নেছাব ধরবে।
স্বর্ণের যাকাত : স্বর্ণ বিশ মিছকাল বা সাড়ে সাত তোলার কম হলে যাকাত দিতে হবে না। কাজেই কারো নিকট যদি বিশ মিছকাল স্বর্ণ এক বছর থাকে, তবে তাকে আধা মিছকাল পরিমাণ যাকাত দিতে হবে। তারপর প্রত্যেক চার মিছকালের জন্য দুই কিরাত করে যাকাত দিতে হবে। ঈমাম আবু হানিফা (রহ.) এর মতে চার মিছকালের কম স্বর্ণের যাকাত দিতে হবে না।