প্রত্যেক ধনবান প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানদের উপর যাকাত আদায় করা ফরজ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক ৮২ বার নামাজ ও যাকাতের কথা যুক্তভাবে বলেছেন। যাকাতের কারণে মানুষের সম্পদের দোষত্রুটি দূরীভূত হয়। মানুষের নিকট আল্লাহ প্রদত্ত ধন ৪০ ভাগের ১ ভাগ বন্টন করে অবশিষ্টাংশ ভোগের অনুমতি দিয়েছেন। হাকিমুল উম্মাত মুফতি এয়ার খান নাঈমী (রহ.) তাঁর রচিত গ্রন্থ ‘আছরারুল আহকাম’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন, ‘বনী ইস্রাঈলের উপর সম্পদের এক চতুর্থাংশ যাকাত ফরজ ছিল। হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের এক নেকীর দশগুণ সাওয়াব পাওয়া যায় বলেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সম্পদের এক–চল্লিশাংশ ফরজ করেছেন যাতে তা দশগুণ হয়ে চতুর্থাংশের সাওয়াব পাওয়ার উপযোগী হয়। পৃথিবীর মানুষের কাছে প্রিয়বস্তুর মধ্যে ধন–সম্পদ অন্যতম। বহু কষ্টে অর্জিত ধনসম্পদ অন্যকে বন্টন করে দেয়া কঠিন ও ত্যাগের কাজ। মহান আল্লাহকে ভালবেসে এই কঠিন কাজটি সম্পাদন করেছে কিনা পরীক্ষা করতে বান্দার উপর যাকাত ফরজ করেছেন।
কৃপণতা মানুষের মনে মলিনতা সৃষ্টি করে। কৃপণতার মলিনতা থেকে স্বীয় মনকে পবিত্র করার একমাত্র উপায় হল যাকাত প্রদান। তাই যাকাত প্রদানকারি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রিয় ব্যক্তি। যাকাত প্রদান না করলে মানুষের হৃদয় পাষাণ হয়ে যায়। সম্পদশালীদের এই মন্দ স্বভাব হতে মুক্ত করার শিক্ষা যাকাতই দিয়ে থাকে। যাকাত প্রদানের মাধ্যমেই মানুষে মনুষে সৌহার্দ্য সমপ্রীতি সৃষ্টি হয়, সহানুভূতি–সহনশীলতার মতো সদগুণগুলির চর্চা হয়।
যাকাতের গুরুত্ব সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে ইতিহাসে দ্বিতীয় ওমর খ্যাত হযরত ওমর বিন আবদুল আজিজ (র.) বলেছেন, ‘নামাজ আমাদেরকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিকট অর্ধপথ নিয়ে যায় রোজা দরজা পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়, আর যাকাত প্রবেশের অধিকার প্রদান করে।’ শেষে লেখক মুহম্মদ আবদুল হাই নদভীর ভাষায় বলতে চাই, ‘যাকাত ভ্রাতৃত্বের পরোক্ষ সাক্ষী, সাম্যের আর্থিক ভিত্তি, সামাজিক কল্যাণের রক্ষক এবং রাষ্ট্রীয় উন্নতির পরিপোষক। যাকাত অর্থনৈতিক বৈষম্যের পথকে রোধ করে অর্থনৈতিক সাম্যের পথকে উন্মুক্ত করে এবং দেশে শৃঙ্খলার পথকে সুগম করে দেয়।