বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে মানুষের নফ্সকে দমন করতে আল্লাহ পাক এবং তাঁর প্রিয় হাবীব (দ.) পথ বাতলিয়েছেন। নফ্স দমন হলে রুহ তাজা হয়। পবিত্র কোরআনে পাকে বর্ণনা আছে, ‘রুহ প্রভুর নির্দেশ হতে আগত’। নফ্স সম্পর্কে এ ধরনের কোনো উক্তি নেই। নফ্স মানুষের অসৎ কর্ম থেকে সৃষ্টি হয়। তাই প্রত্যেক নফসের মৃত্যু হবে বলে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাঁর। পবিত্র কালামে পাকে ঘোষণা করেছেন। প্রত্যেক রুহের মৃত্যুর কথা কোথাও নেই। রুহের ক্ষেত্রে ‘ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন’। অর্থাৎ আল্লাহর নিকট থেকে আগমন আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন। কোরআন পাকে অন্যত্র বর্ণনা আছে, ‘অনন্তর উহাকে পূর্ণাঙ্গ করেছেন এবং তন্মধ্যে স্বীয় (আল্লাহর) আত্মা (রুহ) ফুৎকার করিয়াছেন’ এখানেও আল্লাহ্ পাক নফসকে ফুৎকার না করে আত্মা বা রুহ ফুৎকার করেছেন (সূত্র : ইসলামী প্রবন্ধ সম্ভার : সৈয়দ গোলাম মোরশেদ)।
আল্লাহ পাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন ইবাদতের মাধ্যমে রুহকে তাজা করতে শরীরকে নয়। শরীরকে নিয়ে ব্যস্ত থাকলে রুহ দুর্বল হয়ে যায়। নফস্ ধ্বংসের মাধ্যমে রুহের জাগরণ হয়। রুহ স্রষ্টার কাছে প্রত্যাগমন করে পরকালের জীবনে অনন্ত সুখী হতে চায়। কিন্তু নফসানিয়ত তার সম্মুখে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের নফসানিয়ত ধ্বংস করার বড় হাতিয়ার হল রমজানের রোজা। সিয়াম সাধনা রুহকে নফসানিয়তের প্রভাব মুক্ত করে স্রষ্টার সাথে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ করেন। ভোগের জন্য আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত মানুষকে প্রেরণ করেননি। অনন্ত কালের সামান্য সময়ের জন্য আগত মোসাফির দুনিয়াকে নিয়ে ব্যস্ত! শত চেষ্টা কৌশলেও যে জীবনে (পরকালে) কোনো সুফল পাওয়া যাবে না, সে জীবন নিয়ে এত উদাসীন কেন? প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম হাদিসে পাকে ইরশাদ করেছেন, ‘যে নিজেকে চিনেছে সে আল্লাহকে চিনেছে।’ নিজের সত্তাকে আবিস্কার করতে না পারলে তাকে জাগিয়ে তুলতে পারবে না। সত্তাকে জাগিয়ে তুলতে না পারলে নফসানিয়তের কাছে পরাভুত হতে বাধ্য। রমজানের রোজার কারণে নফসানিয়ত দূরীভূত হয়, আত্মার সাথে পরমাত্মার সাক্ষাৎ ও সংযোগ ঘটে। মানুষের উদ্দেশ্য সাধনই হলো স্রষ্টার সংযোগ। এই সংযোগের জন্য সকল নফসানিয়তের বন্ধনকে মুক্ত করতে হবে। তাতেই আমাদের মুক্তি।