প্রাণঘাতী করোনা থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য বাধ্য হয়ে মাস্ক পরছেন সবাই। কিন্তু এটি পরে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। তাদের চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। মাস্কের আড়ালে ঢাকা অপরাধীরা ঠিকই রয়ে যাচ্ছে নগরীর নির্জন রাস্তায়। আর সুযোগ বুঝে কেড়ে নিচ্ছে সব। এ ধরনের একাধিক ঘটনা ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন আজাদীকে। যারা থানায় যেতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ পুলিশের উল্টো জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হবে যে কেন তিনি বাড়ির বাইরে বের হয়েছেন।
সিএমপির উপ পুলিশ কমিশনার বিজয় বসাক মাস্ক পরে অপরাধ সংঘটনের বিষয়টি স্বীকার করে আজাদীকে জানিয়েছেন, মাস্ক পরা থাকুক আর না থাকুক, অপরাধ করলে ধরা পড়তেই হবে। তিনি বলেন, আগে তো এখনকার মতো সিসি ক্যামেরা ছিল না। কিন্তু তখনও তো মামলা ডিটেক্ট হয়েছে। তবে বিভিন্ন বেশ ধারণ করলে অপরাধী শনাক্তে একটু সময় লাগে, এই আর কী। নগর জুড়ে সার্বক্ষণিক পুলিশ টহল রয়েছে। সন্দেহভাজনদের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। আমাদের পুলিশ ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে।
গত ১৮ মে গভীর রাতে নগরীর জুবিলী রোডে বাংলাদেশ সাপ্লাইয়ার্স নামে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা চুরি এবং বেসরকারি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে চুরির চেষ্টাকারী আসামী মনির হোসেনও চুরি করতে ঢুকেছিল মুখে রুমাল জাতীয় মাস্ক পরে। এটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নগরীতে সম্প্রতি যেকোন অপরাধে অপরাধীরা নিজেদের বাঁচাতে মাস্ক ব্যবহার করছেই।
ওয়াসার মোড়ের মোবাইল ফোন ব্যবসায়ী জালাল আহম্মেদ আজাদীকে বলেন, আমার বাসা বেটারিগলি। রাতে বাসায় গেলেও টেনশনে থাকি। একজন নিরাপত্তাকর্মী আছেন। তবে শহরের যে অবস্থা তাতে ভয় লাগে। তাই কিছু মোবাইল ফোন বাসায় নিয়ে রেখেছি। তিনি বলেন, এখন সবার মুখ ঢাকা। কে কখন কীভাবে চুরি করবে ঠিক নেই। মাদকসেবীরা দোকানের শাটার ভেঙে ফেলতে পারে।
গার্মেন্ট পণ্যের শো রুম পিক পয়েন্টের কর্ণধার অমিত হাবিব আজাদীকে বলেন, সরকারি নির্দেশনার পাশাপাশি ব্যবসা মন্দা হওয়ায় তিনি দোকান বন্ধ রেখেছেন। তবে দোকানে চুরি হয় কিনা সে আশঙ্কায় রয়েছেন তিনি। এখন রাত দিন সমান। সবাই নিজেদের জীবন নিয়ে চিন্তিত। কোথায় কী হচ্ছে তা কেউ খবর নেবে না। দোকান কেউ তুলে নিলেও মানুষ বাইরে বের হবে না।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। অনেক মানুষ অভাবে আছে। তাদের অনেকেই অপরাধে জড়াতে পারে। কিছু মানুষ সব সময় অন্যের অর্থ বা সম্পদ জোর করে লুট করতে চায়। এরা পেশাদার অপরাধী। অপরাধীরা বিভিন্ন পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে তাদের কৌশল পরিবর্তন করে। করোনা আসার পর তারা সুযোগ নিচ্ছে। রাস্তায় সবাই মাস্ক পরার কারণে সাধারণ মানুষ দ্রুত আঁচ করতে পারছে না যে, কে অপরাধী আর কে অপরাধী নয়।
তবে সিএমপির বিভিন্ন থানার ওসিরা অপরাধীদের সাম্প্রতিক এ কৌশলকে মোটেও হুমকি বলে মনে করছেন না। ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন আজাদীকে বলেন, মাস্ক পরলেই যে অপরাধীদের ধরতে অসুবিধা হবে, তা ঠিক নয়। তবে কিছুটা বিপত্তি তো লাগেই। তিনি বলেন, আগেও তো মুখোশ পরে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটেছে। সেই সব মামলার অপরাধীরা কি শনাক্ত হয়নি ? হয়েছে তো।
কোতোয়ালী থানার ওসি নেজাম উদ্দীন যদিও আজাদীকে বলেছেন, মাস্ক পরে যাতে নগরীতে অপরাধ না হয়, সেটি নিশ্চিতে আমরা কাজ করছি। পুলিশের টহল ও ফুট পেট্রলিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। অপরাধীদের ধরতে পুলিশও নানা কর্ম কৌশল নিয়ে কাজ করছে। একের পর এক আসামি ধরা পড়ছে।