মাসোহারায় পাচার হচ্ছে ফরেস্ট রিজার্ভের গাছ

করেরহাট বনবিট

মীরসরাই প্র্রতিনিধি | শনিবার , ১৬ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

পার্বত্য প্র্রবেশদ্বার মীরসরাই উপজেলার করেরহাট বন তল্লাশি কেন্দ্র। পার্বত্য এলাকার প্র্রতিটি গাড়ি থেকে দিনে রাতে নিচ্ছে টাকা। কি বাবদ এই টাকা নেয়া হচ্ছে তা সকলের অজানা। একটি সিন্ডিকেট আছে যা বণ্টন হচ্ছে তাদের মধ্যে। এই টাকা বনবিভাগ স্বয়ং তুললেও ভাগ বাটোয়ারায় রয়েছে সিন্ডিকেট। কারা পাচ্ছে এর ভাগ তা অপ্রকাশিত হলেও যেন ওপেন সিক্রেট বিষয়টি। আবার অবশিষ্ট বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে, অপরদিকে করেরহাটস্থ বন বিভাগের বিরুদ্ধে উঠেছে কাঠ পাচারসহ নানা অভিযোগ।
১৫ এপ্রিল করেরহাট বনবিটের তল্লাশি কেন্দ্রে দেখা যায়, প্র্রতিটি কাঠ বা বনজ সামগ্রী বহনকারী ট্রাক এসে তল্লাশি কেন্দ্রের সামনে দাঁড়াচ্ছে। এরপর গাড়ির মালামালের সাথে থাকা নির্ধারিত লোকটি কাগজপত্রের সাথে কিছু টাকা আলাদা করে নিয়ে অফিসকক্ষে প্র্রবেশ করে। আগে টাকা প্র্রদান অতঃপর কাগজপত্র দেখিয়ে এসে গাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। তল্লাশি কেন্দ্রে টেবিলে কর্মরত ব্যক্তির নাম জানালেন আয়াত উল্লাহ। পদবি এফজি ( ফরেস্ট গার্ড)। কাগজপত্রের সাথে টাকাটা কিসের নিচ্ছেন জানতে চাইলে বললেন, কই টাকা তো নিচ্ছি না। কাগজপত্র বহন করা ব্যক্তির হাতে রাখা টাকাটা কাকে দিল জানতে চাইলে বললেন তা তো জানি না। একই সাথে স্টেশন কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখানে কোনো টাকা নিই না। তাহলে প্র্রতিটি গাড়ি থেকে নেয়া টাকাটা কোন খাতে কে নেয় কেউ বলতে অস্বীকার করেন।
অথচ প্র্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, প্র্রতি গাড়ি থেকে আইটেম হিসেবে ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা ধার্য রয়েছে। যা দিয়েই এই গেট পার হতে হয় সব গাড়িকে।
কয়লা এলাকার পান ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান, করেরহাট বারইয়ারহাট- খাগড়াছড়ি মহাসড়কের কয়লা থেকে করেরহাট বিট দিয়ে রাতের আঁধারে মাসোহারার বিনিময়ে পাচার হচ্ছে ফরেস্ট রিজার্ভের গাছ। ভালুকিয়া গ্রামের লেবুচাষি মাদল হক জানান, বন বিভাগের সাথে লিয়াঁজো থাকা সংশ্লিষ্ট একটি সিন্ডিকেট সরাসরি এই কাঠ পাচারের সাথে সম্পৃক্ত। আবার অভিযোগ রয়েছে কখনো প্র্রকাশ্য দিবালোকে কখনো রাত নামলেই তৎপর হয়ে ওঠে করেরহাটের কাঠ খেকো সিন্ডিকেট। অবাধে চলে কাঠ পাচার। এমনকি নিজেরাই বন ধ্বংস করার অভিযোগ রয়েছে এদের বিরুদ্ধে। প্র্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, করেরহাট বারইয়ারহাট-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের কয়লা থেকে করেরহাট বিট দিয়ে রাতের আঁধারে মাসোহারার বিনিময়ে পাচার হচ্ছে ফরেস্ট রিজার্ভের গাছ। মোটা অংকের অপ্রকাশিত লেনদেনের মাধ্যমে বনকর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কাঠ পাচারের মতো অপরাধ করে যাচ্ছে তারা।
সূত্র জানায়, করেরহাট রেঞ্জ এলাকার রিজার্ভ বন থেকে দিনের বেলায় বনখেকোরা এই সব গাছ কেটে পাহাড়ের ভিতরে নির্দিষ্ট জায়গায় লুকায়িত রাখে। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে গাছগুলো প্রকারভেদে ট্রাক, মিনি পিকআপ বোঝাই করা হয়। পরে তা বন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে গভীর রাতে সময় সুযোগ বুঝে পাচার করা হয়। এ সুযোগে বন উজাড করে সাবাড় করে দিচ্ছে বনখেকোরা।
স্থানীয়রা জানান, রাতের অন্ধকারে মীরসরাই উপজেলা ১নং করেরহাট ইউনিয়নের করেরহাট চেক পোস্টের উপর দিয়ে কাঠ, সামাজিক বনায়নের গাছ, বিভিন্ন ফলজ ও বনজ বাগান, রাবারসহ নানা মূল্যবান বনজ সামগ্রী পাচার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এ ছাড়া ছোট-মাঝারি বিভিন্ন প্রকারের গাছ কেটে রাতের আঁধারে ইটভাটা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, প্র্রতিদিন রাতের আঁধারে কাঠ চোরাই সিন্ডিকেট করেরহাট বিট কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই চালাচ্ছে এই অপকর্ম। বিশেষ করে বনজ সেগুন, গামারি, সামাজিক বনায়নের মেনজুরি, ইউক্লেপ্টাস সহ সামাজিক বনায়নের কাঠ, বন বিভাগের কাঠ ও রাবারসহ বিভিন্ন চোরাই পণ্য।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত করেরহাট বিট কর্মকর্তা মঈন উদ্দিনের কাছে কাঠ পাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘করেরহাট বিট অফিসের আগে বিজিবি আছে তারা কি করছে বলে উল্টো প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। সব সময় কি পাহারা দিয়ে বসে থাকা সম্ভব।’ টাকা নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন গাড়ি থেকে ফ্রি ম্যান দিয়ে টাকা তোলা হয় তাদের বেতন দেওয়ার জন্য।’ করেরহাট বন রেঞ্জ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন এলাহী বলেন, ‘টাকার বিনিময়ে অবৈধ কাঠ পাচারের সাথে কোনো বন কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে হাতির হামলায় নিহত এক
পরবর্তী নিবন্ধশিল্পপতি করম আলীর ইন্তেকাল