মাসে পাচার ১০ কোটি টাকার কাপড়

চট্টগ্রামের দুই ইপিজেড থেকে যায় টেরীবাজার ও ইসলামপুরে ।। ঝুট ব্যবসার আড়ালে সক্রিয় প্রভাবশালী চক্র

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ১৬ জানুয়ারি, ২০২২ at ৬:১৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের দুটি ইপিজেড থেকে প্রতি মাসে অন্তত দশ কোটি টাকার কাপড় পাচার হচ্ছে। ইপিজেড থেকে সরাসরি কাপড়ের চালান পৌঁছে যাচ্ছে ঢাকার ইসলামপুর ও চট্টগ্রামের টেরীবাজারে। ঝুট ব্যবসার আড়ালে কোটি কোটি টাকার কাপড় ও যন্ত্রপাতি পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। র‌্যাবের হাতে বিভিন্ন সময় একাধিক চালান আটকের জের ধরে সংশ্লিষ্ট একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে কাপড় পাচারের ঘটনা বেরিয়ে আসে। স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চোরাচালানি চক্র বিভিন্ন ঘাট ম্যানেজ নানা পন্থায় কাপড় পাচার করে। চট্টগ্রাম ইপিজেড এবং কর্ণফুলী ইপিজেডে প্রায় ২শ গার্মেন্টস কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ইপিজেডে রয়েছে ১৪২টি পোশাক কারখানা। এসব কারখানায় প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক কাজ করেন। অপরদিকে কর্ণফুলী ইপিজেডে রয়েছে ৫০টি পোশাক কারখানা, যেখানে কাজ করেন প্রায় ৭২ হাজার শ্রমিক। শ্রমঘন এসব প্রতিষ্ঠানের বন্ডেড সুবিধা রয়েছে। আর এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে অধিকাংশ গার্মেন্টস কারখানায় নিয়মিত কাপড় পাচারের ঘটনা ঘটে। ঝুট ব্যবসার আড়ালে পাচার করা হয় দামী কাপড়, মেশিনারিজ। বিনা শুল্কে আমদানি করা কাপড় স্থানীয় খোলাবাজারে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা চলছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কাপড় আনা হয়। এসব কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরি করে তা পুনরায় বিদেশে রপ্তানির বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তৈরি পোশাকের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ শুল্ক পরিশোধ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রির সুযোগ থাকলেও কার্যত এই সুযোগ কোনো পোশাক কারখানা গ্রহণ করে না। তৈরি পোশাক কারখানাগুলো বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কাপড় দিয়ে পোশাক তৈরি করে। কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল আমদানির সময় কিছুটা বাড়তি পণ্য আনা হয়। পোশাক প্রস্তুতের পর বেশ কিছু কাপড় থেকে যায়। এসব কাপড় বাইরে বিক্রি করার সুযোগ না থাকলেও তা ঝুট ব্যবসার আড়ালে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণা দিয়েও কাপড় আনা হয়। শার্টের কাপড়ের ভিতরে আনা হয় স্যুটের কাপড়। সবকিছুর মূলে রয়েছে ঝুট ব্যবসা। ঝুট ব্যবসার আড়ালে কোটি কোটি টাকার কাপড় পাচার হচ্ছে বলে গোপন অনুসন্ধানে নিশ্চিত হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রামের দুটি ইপিজেডকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালী একটি ঝুট ব্যবসায়ী চক্র গড়ে উঠেছে। এই চক্রটির একটি তালিকাও সংশ্লিষ্ট এজেন্সির পক্ষ থেকে প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রভাবশালী এই চক্রটি ঝুট ব্যবসার আড়ালে কোটি কোটি টাকার কাপড় পাচারের সাথে জড়িত বলে উল্লেখ করে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এরা প্রতি মাসে গড়ে ১০ কোটিরও বেশি টাকার কাপড় পাচার করে। শুধু কাপড় নয়, চক্রটি ঝুটের ভিতরে পুরাতন মেশিনারিসহ বিভিন্ন দামি মালামাল বের করে নিয়ে আসে। গেটে এবং তল্লাশির স্থানগুলো ম্যানেজ করে চক্রটি অবাধে চালান নিয়ে আসে। পরবর্তীতে তা ঢাকার ইসলামপুর ও চট্টগ্রামের টেরীবাজারে বিক্রি করে। চট্টগ্রাম থেকে বিভিন্ন কুরিয়ারে চালানগুলো ঢাকায় পাঠানো হয় বলে সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে গতকাল চট্টগ্রাম ইপিজেডের শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, ঝুট ব্যবসা বৈধ। এটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে করা হয়। কিন্তু ঝুট ব্যবসার আড়ালে কাপড় পাচারের কোনো তথ্য আমাদের জানা নেই। এটার সুযোগও নেই। কারণ প্রতিটি কারখানা থেকে কোন পণ্য কতটুকু বাইরে যাচ্ছে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়। এসব পণ্য গেটে তল্লাশির পরই কেবল ছাড়া হয়। তবে কাস্টমস কর্মকর্তারা ম্যানেজ হলে সেক্ষেত্রে ইপিজেড কর্তৃপক্ষের বেশি কিছু করার থাকে না। বিভিন্ন সময় ইপিজেডের বাইরে চোরাচালানের কাপড় আটকের ব্যাপারটি এই ধরনের ‘অঘটন’ বলে স্বীকার করেন তিনি।
কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামের কমিশনার একেএম মাহাবুবুর রহমান বলেন, গার্মেন্টস ঝুটসহ বিভিন্ন কৌশলে ইপিজেড থেকে তৈরি পোশাক, ফেব্রিঙ ও বিভিন্ন পণ্য খোলা বাজারে যাওয়ার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। আমরা বিষয়টি মাথায় রেখে ইপিজেডের গেটে তদারকিও বাড়িয়েছি। গত ৩ মাসে এ ধরনের ৩/৪টি চালান বের হওয়ার সময় জব্দ করেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধওমিক্রন পরবর্তী করোনা মহামারি পর্যায়ে থাকবে না
পরবর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে স্বাস্থ্য সহকারীদের ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ