২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগের ইঙ্গিত দিয়ে ৫ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা দেন। এদিন শিক্ষার্থীদের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে সারাদেশে কমপক্ষে ৯৩ জন নিহত হন।
শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা প্রথমে ৬ আগস্ট ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। কর্মসূচিটি বাস্তবায়নে সারাদেশ থেকে ছাত্র–জনতাকে ঢাকায় আসার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু অসহযোগ আন্দোলনে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ নিহত এবং সরকারদলীয় কর্মী ও পুলিশের যৌথ দমন অভিযানের কারণে এ কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে এনে ৫ আগস্ট নির্ধারণ করা হয়। খবর বাসসের।
রাজধানীর শাহবাগে বিকেল ৩টার দিকে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগ গৃহযুদ্ধ সৃষ্টির লক্ষ্যে তাদের দলীয় ক্যাডারদের রাস্তায় নামিয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও গন্তব্য এক– বিজয় ছাড়া কিছু নয়। আমরা এখনো সময় দিচ্ছি। সরকার যদি সহিংসতা চালিয়ে যেতে থাকে, আমরা জানিয়ে দিতে চাই, আমরা গণভবনের দিকে তাকিয়ে আছি। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত তিনি শিক্ষার্থীদের শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
এদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে নিহতদের মরদেহ নিয়ে মিছিল বের করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি ঢামেক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যায়। মিছিলে অংশ নেওয়া ছাত্র–জনতা ‘আমার ভাই মরলো কেন, শেখ হাসিনা জবাব চাই’, ‘লড়াই, লড়াই, লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘দফা এক দাবি এক, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। মিছিল শাহবাগ থানার সামনে পৌঁছানোর পর পুলিশ দাবি করে, কিছু আন্দোলনকারী থানায় ইটপাটকেল ছুঁড়েছে। এর পরপরই পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে।
এর আগে, ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা দেন। সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে ছাত্র–জনতার প্রতি ১৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয়।
৪ আগস্ট সহিংসতা চরম পর্যায়ে পৌঁছালে সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন। রাজধানী ঢাকায় অন্তত ১২ জন নিহত হন। তাদের অধিকাংশকে মৃত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। দেশজুড়ে উত্তাল পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়ি এবং দলীয় কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সরকার দেশব্যাপী কারফিউ জারি ও ফোর–জি মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়। সরকার ৫ আগস্ট থেকে তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করে। শুধু ৪ আগস্টেই সারাদেশে ৯৩ জন নিহত হন।