মার্কেটে জনস্রোত

ঈদবাজারে উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ১০ মে, ২০২১ at ৫:৩৭ পূর্বাহ্ণ

সরকারি কঠোর নির্দেশনার মাঝেও ঈদবাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাজারে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মানুষের উপস্থিতি। বড় মার্কেট ও অভিজাত শপিংমলগুলোতে মানুষের উপস্থিতি কম থাকলেও নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজার, তামাকুমন্ডি লেইন, টেরীবাজার, জহুর হকার্স মার্কেটে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ঈদবাজারে আসা অনেকের মুখে ছিল না মাস্ক। যারা পরেছেন, তাদের বেশিরভাগ থুতনিতে ঝুলিয়ে রেখেছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মার্কেটগুলোতে সচেতনতামূলক প্রচারণা ও জরিমানা করে দায় সারছেন কর্মকর্তারা।
গতকাল রোববার সকাল থেকে নগরীর বিপনি বিতান, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, সানমার ওশান সিটি, ফিনলে সেন্টার, আমীন সেন্টার, ভিআইপি টাওয়ার, মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, আখতারুজ্জামান সেন্টারে তেমন ভিড় দেখা যায়নি। তবে রেয়াজুদ্দিন বাজার, তামাকুমন্ডি লেইন, জহুর হকার্স মার্কেট কেন্দ্রিক মার্কেট দোকানগুলোতে ছিল মানুষের ভিড়। করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যেও মানুষে পূর্ণ বাজারের অলিগলি। তবে টেরীবাজারে অপেক্ষাকৃত কম ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া ফুটপাতের দোকানগুলোতে ছিল মানুষের ভিড়। দোকানগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা।
ঈদ কেনাকাটার শেষ মুহূর্তে রেডিমেড কাপড়, জুতো, কসমেটিকসের দোকানগুলোতে মানুষের উপস্থিতি ছিল বেশি। এছাড়া মার্কেট, বিপণীর বাইরেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টেইলার্সগুলোতেও এখন ব্যস্ত সময় চলছে। নতুন অর্ডার নেওয়া বন্ধ থাকলেও সেলাইকৃত কাপড় সরবরাহ নিয়েছেন বেশিরভাগ মানুষ। নিউ মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসছেন রিয়াজ উদ্দিন নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, করোনা সংক্রমণের ভয়ে ঈদের কেনাকাটা করা হয়নি। এখন বাচ্চাদের আবদার রাখার জন্য আসতে হয়েছে। যে দোকানে মানুষ বেশি সেখানে ঢুকছি না। যেখানে ক্রেতা কম সেই দোকানগুলোতে ঢুকছি। বিকেলে জহুর হকার্স মার্কেটেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। কম আয়ের মানুষদের কেনাকাটার জন্য জনপ্রিয় হলেও সাম্প্রতিক সময়ে মার্কেটটি আর নিম্নআয়ের মানুষের নেই। নেই সেই পুরনো কাপড়ের জমজমাট ব্যবসাও। ঈদ উপলক্ষে মার্কেটটির প্রায় সব দোকানে উঠেছে দেশি-বিদেশি কাপড়।
পাথরঘাটা থেকে আসা রেহেনা বেগম নামে এক গৃহিণী বলেন, করোনার কারণে গত বছর ঈদে কেনাকাটা হয়নি। এবার ছেলেমেয়েরা মানছে না। তাদের জন্য কেনাকাটা করতে এসেছি। আগে জহুর হকার্সর মার্কেটে কম দামে কাপড়চোপড় পাওয়া যেত। এখন দেখি বড় মার্কেটগুলোর মতোও এখানে দোকানগুলোতে দাম হাঁকানো হচ্ছে। তবে কিছু দোকানে অপেক্ষাকৃত সস্তায় কাপড় পাওয়া যাচ্ছে।
রেয়াজুদ্দিন বাজারের একটি দোকানে পাঞ্জাবি দেখছিলেন রেজাউল হক নামের এক যুবক। মুখে মাস্ক ছিল না। তিনি বলেন, মার্কেটে মানুষের ভিড়। গরমে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। তাই মাস্ক পকেটে রেখে দিয়েছি।
একই চিত্র ছিল দোকানগুলো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও। অনেক দোকানের বিক্রয়কর্মী মাস্ক পরে না। শোয়েব নামের এক বিক্রয়কর্মী বলেন, সকাল থেকে এসেছি। রোজা রেখেছি। ক্রেতাদের সাথে কথা বলতে বলতে হাঁপিয়ে উঠেছি। মাস্ক রাখতে অস্বস্তি লাগছে, তাই খুলে রেখেছি।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি সালেহ আহমদ সুলেমান বলেন, শবে কদরের কারণে সন্ধ্যার পর দোকানগুলোতে ক্রেতা ছিল না। তবে দিনের বেলা ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বেচাকেনা হয়েছেও বেশ।
তিনি বলেন, প্রায় প্রত্যেক দোকানদার ব্যবসায়ীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল। দোকানগুলো বাধ্যতামূলকভাবে স্যানিটাইজার রাখার নির্দেশনা ছিল। দোকানের সবাইকে মাস্ক পরা নিশ্চিতের বিষয়ে সমিতির পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এখন ক্রেতাদের ভিড়ের কারণে ইচ্ছে থাকলেও অনেকে স্বাস্থ্যবিধি খেয়াল রাখতে পারছেন না। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসংক্রমণের নতুন ঢেউ, লড়ছে ভারতের প্রতিবেশীরাও
পরবর্তী নিবন্ধলেখক গবেষক আহমদ মমতাজের ইন্তেকাল