বিশ্বকাপ আয়োজনের অভিজ্ঞতা যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নয়। ফুটবল বিশ্বকাপের মত বিশাল যজ্ঞ আয়োজন করেছে দেশটি। শুধু তাই নয়, অলিম্পিকের মত আসরও বসেছে মার্কিন মুলুকে। সে হিসেবে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কোনো কিছুই না। তবে এই বিশ্বকাপ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় খেলাধুলার র্যাংকিংয়ে ক্রিকেট অনেক দূরে। বলা যায়– একরকম অপরিচিত একটি খেলা ক্রিকেট মার্কিনীদের জন্য। তবে এই নতুন স্বাদটা নিতে পুরোপুরি প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে সবচাইতে জনপ্রিয় টি–টোয়েন্টি ক্রিকেট। এই খেলাটি শুরু হয়েছে ২০০৫ সালে। তবে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে মাত্র দুই বছর সময় নেয় আইসিসি। ২০০৭ সালে প্রথম টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর বসে দক্ষিণ আফ্রিকায়। এরপর থেকে প্রতি দুই বছর অন্তর অন্তর বসছে এই বিশ্বকাপের আসর। এবারে বসছে বিশ্বকাপের দশম আসর। যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে কানাডা এবং স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র। ম্যাচটি যুক্তরাষ্ট্র সময় আজ অনুষ্ঠিত হলেও বাংলাদেশ সময় কাল ভোর ছয়টায় মাঠে গড়াবে। ডালাসের প্রেইরি ভিউ স্টেডিয়ামে এই ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে। ক্রিকেটকে বিশ্বব্যাপি আরো বেশি ছড়িয়ে দেওয়ার যে মিশন আইসিসির তারই অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে বেছে নেওয়া হয়েছে বিশ্বকাপের ভেন্যু হিসেবে। সে সাথে বাড়ানো হয়েছে অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যাও। যদিও ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণে ছোট দলগুলো বেশ ভাল খেলছে। যার প্রমাণ তারা রাখছে প্রতিনিয়তই।
এবারে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ দুটি। যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশ্বকাপ আয়োজনটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য ছোট একটি বিষয়। তাই এবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সর্বাধিক ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ক্যারিবীয়ান দ্বীপপুঞ্জে। যুক্তরাষ্ট্রের তিন ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে ১৬টি ম্যাচ। ডালাসের প্রেইরি ভিউ স্টেডিয়াম ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অপর দুটি ভেন্যু হচ্ছে নিউইয়র্কের নাসাও কাউন্টি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট স্টেডিয়াম এবং সেন্ট্রাল ব্রাওয়ার্ড রিজিয়নাল পার্ক স্টেডিয়াম ফ্লোরিডা। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ম্যাচের পরদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজের গায়ানা ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ক্যারিবীয়ান দ্বীপপুঞ্জের প্রথম ম্যাচ। যে ম্যাচে মুখোমুখি হবে পাপুয়া নিউগিনি এবং স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের ছয়টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বকাপের ৪৪টি ম্যাচ। এবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ যেমন হচ্ছে দুটি দেশে তেমনি এবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে রেকর্ড ২০টি দল। এই ২০টি দলকে চার গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। গ্রুপ পর্ব শেষে চার গ্রুপের সেরা দুটি করে দল নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে সুপার এইট পর্ব। এই পর্ব শেষে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষ চারটি দল খেলবে সেমিফাইনালে। এরপর ফাইনাল। আগামী ২৯ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে অনুষ্ঠিত হবে এবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল।
এবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বের দুটি ম্যাচ খেলবে যুক্তরাষ্ট্রে আর দুটি ম্যাচ খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। যুক্তরাষ্ট্রের সময় আগামী ৭ জুন এবং বাংলাদেশ সময় ৮ জুন সকাল সাড়ে ছয়টায় বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে টাইগাররা। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ শ্রীলংকা। এরপর ১০ জুন বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে আটটায় নিউইয়র্কে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকার। এরপর বাংলাদেশ দল পাড়ি জমাবে ক্যারিবীয়ান দ্বীপপুঞ্জে। যেখানে শান্তদের প্রথম ম্যাচ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১৩ জুন রাত সাড়ে আটটায়। গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ মাচটি খেলবে বাংলাদেশ দল ১৭ জুন ভোর সাড়ে পাঁচটায় নেপালের বিপক্ষে। এরপর সুপার এইট পর্বে কোয়ালিফাই করতে পারলে আরো বাড়বে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচাইতে সফলতম দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ইংল্যান্ড। এই দুই দল দুইবার করে এই ট্রফি জিতেছে। একবার করে বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, অস্ট্রেলিয়া। এবারের আসরেও স্বাগতিক হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফেভারিট মানছে অনেকেই। আবার ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান এমনকি আফগানিস্তানকেও ফেভারিট মানছে বিশেষজ্ঞরা। তবে যেহেতু এটি ক্রিকেটে সংক্ষিপ্ততম ভার্সন সেহেতু এই ক্রিকেটে অনুমান করাটা বেশ কঠিন। এবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে বিশ্বে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে মাত্র ৫ মাসে একটি সাধারণ খোলা মাঠকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যুতে পরিণত করে চমক সৃষ্টি করেছে। যা বিশ্বে বিরল ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্রে যে ১৬টি ম্যাচ হবে তার ৮টি হবে এই মাঠে। যেখানে বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলবে এই মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে।
টেস্ট খেলুড়ে ১১ টি দেশের সাথে আইসিসির সহযোগী সদস্য ৯টি দেশ খেলছে এবারের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। বিশটি দলকে চার গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। যেখানে ‘এ’ গ্রুপে রয়েছে কানাডা, ভারত, পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ড এবং স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্র। ‘বি’ গ্রুপে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নামিবিয়া, ওমান এবং স্কটল্যান্ড। ‘সি’ গ্রুপে রয়েছে আফগানিস্তান, নিউজ্যিলান্ড, পাপুয়া নিউগিনি, উগান্ডা এবং আরেক স্বাগতিক ওয়েষ্ট ইন্ডিজ। ‘ডি’ গ্রুপে রয়েছে বাংলাদেশ, নেপাল, নেদারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং শ্রীলংকা। গ্রুপ পর্ব শেষ হবে ১৮ জুন আফগানিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে। সে দিনই নিশ্চিত হয়ে যাবে কোন আটটি দল যাবে সুপার এইট পর্বে।