মা কথাটি পৃথিবীতে একটি মধুরতম শব্দ। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত। মা, মাতৃভূমি, মাতৃভাষা মানুষের সবচেয়ে প্রিয়। যিনি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দশমাস দশদিন গর্ভে ধারণ করে, সন্তানের মুখ দেখতে সমস্ত কষ্টই সহ্য করেন, তিনিই মা। মায়ের মত এমন দরদী পৃথিবীতে আর নেই। তাই বলা হয় মায়ের ‘একধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম, পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না’। সত্যিই তাই। মায়ের জন্যই সন্তান পৃথিবীর আলো দেখতে পায়। একটা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই তাকে নিজের জীবনের সব সুখ বিসর্জন দিয়ে পরম যত্নে ছোট থেকে বড় করা, পড়ালেখা শেখানো পর্যন্ত জীবনের সমস্ত প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করার জন্য মা সবসময় সন্তানের পাশে থাকেন। এতটা ত্যাগ আর কষ্ট স্বীকার করে সন্তান লালন পালন করে বড় করেন কোনো রকম প্রতিদানের আশা না করেই। এই মা ই নিজে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে সন্তানের মাথায় ছাতা ধরেন। তাই মায়ের প্রতি সন্তানের ঋণ কখনোই শোধ হবার নয়। এই কষ্টের পিছনে পিছনে তাঁর একটাই আশা থাকে তাঁর সন্তান একদিন বড় হবে, মানুষের মত মানুষ হবে। কিন্তু যে সন্তান বড় হয়ে মাকে বোঝা মনে করে, মায়ের প্রতি কর্তব্য পালন করতে হবে ভেবে মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠায়, যে সন্তান মাকে তার নতুন ফ্ল্যাটে পুরানো আসবাবপত্রের মত পুরানো মনে করে তাচ্ছিল্য করে, যে সন্তান তার প্রবাস জীবনের আরাম আয়েশের যাপিত জীবনের জন্য বৃদ্ধ অসহায় মাকে বোঝা ভেবে বিমানবন্দরের এককোণে মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে, সে একটু পর ফিরছে বলে ফেলে রেখে চলে যেতে দ্বিধাবোধ করে না, সেসব হতভাগা সন্তানদের যেন বিবেকবোধ আর মনুষত্ব্যবোধ জাগ্রত করেন বিধাতা। মা ছাড়া পৃথিবীর এই সুন্দর আলো, রূপ, রস, গন্ধ ভোগ করা, ভোগবিলাসের যাপিত জীবনের সুখ ভোগ করার মত যোগ্যতা কি সে আজ অর্জন করতে পারত? সে আজ যে ব্যবহার আর আচরণ তার জন্মদাত্রী মায়ের সাথে করছে, তার সন্তান বড় হয়ে যদি ঠিক একই রকম আচরণ আর ব্যবহার তার সাথে করে, সে কি পারবে তা মেনে নিতে! কিন্তু এটাই প্রকৃতির চরম বাস্তবতা আর শিক্ষা যে ভালো করলেই ভালো পাবে। আর মায়ের মর্যাদা রক্ষায় হোক প্রত্যেক সন্তানের অঙ্গীকার।