বিএমএ চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী ও তাঁর মামা চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যখাতের শীর্ষ ঠিকাদার জমজম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী দিদারুল আলমের অবৈধ সম্পদের খোঁজে সারা দেশে তল্লাশি শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। ইতোমধ্যে তাদের সম্পদের তথ্য চেয়ে ৫৫টি তফসিলি ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক, রেজিস্ট্রি অফিস, ভূমি অফিস ও বিআরটিএতে চিঠি দিয়েছে দুদক। তবে শুরু থেকেই নিজের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী। প্রসঙ্গত, ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকে জমা হওয়া একটি অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। ‘ডা. মোহাম্মদ ফয়সল ইকবাল চৌধুরীর (সাধারণ সম্পাদক, বিএমএ চট্টগ্রাম) বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, বদলি, নিয়োগ বাণিজ্য, ক্লিনিক ব্যবসা ও কমিশন ব্যবসাসহ জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ’ শীর্ষক ওই অভিযোগপত্রে বেশি কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করা হয়। তন্মধ্যে অন্যতম জমজম এন্টারপ্রাইজ।
জানা যায়, চলতি বছরের মার্চে ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে দুদকে জমা হওয়া একটি অভিযোগটি (অভিযোগ নং-৬০/২০২০) অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ২৬ আগস্ট দুদকের দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেল বিভাগের পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক পত্রে সেটি অনুসন্ধানের পদক্ষেপ নিতে মহাপরিচালক (তদন্ত-২) এর কাছে নথিটি পাঠানো হয়। এরপর অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিনকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ৪ ডিসেম্বর অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথি চেয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আন্দরকিল্লা জেনারেল হাসপাতালে পত্র দেয় অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা। পরে চট্টগ্রামের ১৫ বেসরকারি ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকা ও চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের কাছেও সংশ্লিষ্ট নথি চেয়ে পত্র দেওয়া হয়। তাছাড়া দিদারুল আলমের গ্রামের বাড়ি রাউজানে সাম্প্রতিক সময়ে তিনি কী পরিমাণ জমিজমা কিনেছেন এবং বাড়ি ও মার্কেট গড়েছেন সে বিষয়েও খোঁজ শুরু করেছে দুদক।
দুদকে অনুসন্ধানধীন অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগ ও বদলি, কোটি কোটি টাকার খাবার সরবরাহ, আউট সোর্সিং কর্মচারী নিয়োগ, বেসরকারি ক্লিনিকে চাঁদাবাজি, এমেচার, নন এমেচার যন্ত্রপাতি ক্রয়, ওষুধ ক্রয়ের ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। নামে বেনামে প্লট, ফ্ল্যাটসহ বিপুল অর্থের মালিক বনেছেন। হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ও ওষুধ ক্রয় এবং আউট সোর্সিং কর্মচারী সরবরাহে ঘুরে ফিরে নির্দিষ্ট কয়েকটি ঠিকাদার কাজ পেয়েছেন। নিজের পছন্দের ঠিকাদার ব্যতিরেখে অন্য কোনো ঠিকাদার যাতে টেন্ডারে অংশ নিতে না পারে সেজন্য জটিল ও কঠিন শর্ত সংযোজন করে দেওয়া হতো ফয়সল ইকবালের ইন্ধনে।
অভিযোগে বলা হয়, বেশি লাভজনক কাজগুলো পান জমজম এন্টারপ্রাইজ। জমজম এর মালিক দিদারুল আলম হচ্ছেন ডা. ফয়সল ইকবাল চৌধুরীর মামা। এছাড়া এস কে ট্রেডার্স, শাপলা এন্টারপ্রাইজ, এম এ কাসেম এন্টারপ্রাইজ, এম ব্রাদার্স, জিসান এন্টারপ্রাইজ, ফেরদৌস ট্রেডার্স, সাদমান এন্টারপ্রাইজ, আলী এসোসিয়েটস নামের ঠিকাদাররাই ঘুরে ফিরে চট্টগ্রামের সরকারি হাসপাতালগুলোর টেন্ডার ভাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ‘ডা. ফয়সল ও তাঁর মামা দিদারুল আলমের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের খোঁজে সারাদেশে তল্লাশি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তফসিলি ৫৫টি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকেও পত্র দেওয়া হয়েছে। একইসাথে তাদের নামে থাকা জমিজমার তথ্য জানতে ভূমি অফিসে এবং নতুন কেনা জমি, প্লট ও ফ্ল্যাটের তথ্য জানতে রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ব্যক্তিগত গাড়ির তথ্য জানতে বিআরটিএতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’