মামলা জট কমছে না

চট্টগ্রামের আদালতগুলোতে দুই লাখের অধিক মামলা বিচারাধীন

হাবীবুর রহমান | শুক্রবার , ৫ জুলাই, ২০২৪ at ৭:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামের আদালতগুলোতে মামলা জট কমছেই না। একদিকে নিষ্পত্তি হচ্ছে অন্যদিকে নতুন মামলা দায়ের হচ্ছে। বর্তমানে ফৌজদারি মামলার পাশাপাশি জট হয়ে পড়ে থাকা দেওয়ানি মামলার সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো। আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামের ৪১ দেওয়ানি আদালতে এক লাখের বেশি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এরমধ্যে পটিয়া, বাঁশখালীসহ ২১ চৌকি আদালতেই রয়েছে ৬৫ হাজারের বেশি মামলা। চট্টগ্রামের সিএমএম (মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত) আদালত সূত্র জানায়, তাদের আটটি আদালতে ৫০ হাজারের বেশি মামলা রয়েছে। একদিকে নিষ্পত্তি হচ্ছে, অন্যদিকে নতুন মামলা ফাইল হচ্ছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সূত্র জানায়, তাদের সাতটি ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে ১৫ হাজারের বেশি মামলা। নারী নির্যাতন, হত্যাসহ নানা অপরাধের অভিযোগে মামলাগুলো দায়ের হয়। এছাড়া, অর্থঋণ আদালতে প্রায় ৫ হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম আজাদীকে বলেন, বর্তমানে কোর্টটিতে ফাইলিংয়ের চেয়ে নিষ্পত্তির সংখ্যাই বেশি। এরপরও উল্লেখযোগ্যভাবে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা কমছে না। আদালতের সংখ্যা বাড়ানো হলে এ সমস্যার সমাধান মিলবে।

সুপ্রিম কোর্টের একটি সূত্র জানায়, আদালতগুলোতে মামলার চাপ কমাতে সম্প্রতি অন্যান্য আদালতের পাশাপাশি অর্থঋণ আদালতের সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে মনোযোগী হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে সাড়া দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় অর্থমন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। সব রকম প্রসিডিং শেষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে এটি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সরকার আদেশ জারি করবে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে নতুন দুটি অর্থঋণ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হবে। জেলা আইনজীবী সমিতি জানায়, সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি জেলা আইনজীবী সমিতির অভিষেক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে নতুন একটি অর্থঋণ আদালত, তিনটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, দুটি অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, দুটি সাব আদালত আদালত বাড়ানোর জন্য সমিতির নেতারা আবেদন জানিয়েছেন। পাশাপাশি হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের বিষয়টিও ছিল।

আইনজীবীরা বলছেন, নতুন আদালত প্রতিষ্ঠার দাবি অনেক দিনের। কিন্তু আশানুরূপ আদালতের সংখ্যা বাড়েনি। যদি আদালতের সংখ্যা বাড়ানো হয় সেক্ষেত্রে অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টিকেও আমলে নিতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়ন না হলে সুফল মিলবে না। অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বলেন, খুব শীঘ্রই অর্থঋণ আদালতের সংখ্যা বাড়ার তথ্যটি আনন্দের। এতে মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়বে। বেশি পরিমাণে খেলাপি ঋণ আদায় হবে। মামলা জট কমে আসবে। তবে স্টাফ, অবকাঠামো নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় আদালতের সংখ্যা বাড়িয়ে ফায়দা নেই।

জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রামে অসংখ্য মামলা বিচারাধীন রয়েছে। বন্দর নগরী হওয়ায় এখানে মামলা বেশি। এমন অবস্থায় আদালতের সংখ্যা বাড়ানোর বিকল্প আর কিছু নেই। বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয় অবগত আছে। আমরা নানা সময় সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানিয়েছি। আশা করছি, সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি দেখছেন। মনে হচ্ছে, খুব শীঘ্রই চট্টগ্রামে আদালতের সংখ্যা বাড়ানো হবে। এটি হলে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও লাঘব হবে।

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী আজাদীকে বলেন, অনেক বছর আগে থেকে আদালতের সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলছি আমরা। এখন শুনতে পাচ্ছি, নতুন আদালত হবে। বিচারপ্রার্থীদের জন্য এটি ভালো খবর। তবে অবকাঠামো সংকট রয়েছে। আদালত প্রতিষ্ঠার আদেশ জারি হলে অবকাঠামোর উন্নয়নও ঘটাতে হবে। একটি এজলাসে একাধিক বিচারক দ্বারা বিচারকাজ পরিচালনা সম্ভব না। তিনি বলেন, নতুন আদালত বাড়ানোর সাথে সাথে কোর্ট হিলের নতুন আদালত ভবনের উপরে ফ্লোর বাড়াতে হবে। নারীশিশু ভবন নামে পরিচিত সিভিল ভবনের উপরও ফ্লোর বাড়াতে হবে। অন্যথায় আদালতের সংখ্যা বাড়িয়ে সুফল পাওয়া যাবে না। তিনি আরো বলেন, নতুন আদালত ভবনের উপরে ফ্লোর বাড়ানোর বিষয়ে এক সময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বাজেট হয়েছিল। ইঞ্জিনিয়ার এসে পরিমাপও করেছিলেন। কিন্তু বরাদ্দ না পাওয়ায় সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, চট্টগ্রামে বর্তমানে ৯৪ টি আদালত রয়েছে। এরমধ্যে বাঁশখালী, পটিয়াসহ সাব জজ আদালত হচ্ছে ২১ টি। সিএমএম আদালত রয়েছে আটটি, সিজিএম আদালত রয়েছে ১০ টি, মহানগর দায়রা জজ আদালত রয়েছে ১৫ টি, জেলা ও দায়রা জজ আদালত রয়েছে ১৮ টি, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল রয়েছে সাতটি, পারিবারিক আদালত রয়েছে তিনটি, একটি করে জননিরাপত্তা ট্রাইব্যুনাল, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল, সন্ত্রাস দমন ট্রাইব্যুনাল, দেওলিয়া আদালত, পরিবেশ আদালত, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল, বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালত, মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল ও ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ আদালত রয়েছে দুটি। এসব আদালতে দুই লাখের অধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৃচ্ছ্রের নতুন নির্দেশনা সরকারি ব্যয়ে বিদেশ ভ্রমণ ও গাড়ি কেনা বন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধমুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায় আপাতত বহাল