মামলায় আটকা নদী খনন, দুর্ভোগে যাত্রীরা

কক্সবাজার-মহেশখালী নৌপথ

শাহেদ মিজান, কক্সবাজার | বৃহস্পতিবার , ১৪ আগস্ট, ২০২৫ at ১১:২৪ পূর্বাহ্ণ

খনন করা বালি ইজারাকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলায় কক্সবাজারমহেশখালী নৌপথের ৬নং ঘাটস্থ বাঁকখালী নদী খনন প্রকল্প আটকে গেছে। উচ্চ আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকায় সরকারি আদেশের আট মাস পেরিয়ে গেলেও খনন কাজ শুরু করা যায়নি। এতে তীব্র নাব্যতা সংকটে পড়ে নৌযান চলাচল স্থবির হয়ে গেছে। যার কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।

ঘাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উজানের ঢলে প্রতিবছর ভরাট হয়ে যায় বাঁকখালী নদীর মোহনায় অবস্থিত এই নৌপথের প্রধান স্টেশন ৬নং ঘাট। তাই প্রতিবছরই খননের প্রয়োজন পড়ে। এর মধ্যে প্রায় ৮ মাস আগে খননের আদেশ হয় এবং খননে উত্তোলিত বালি বিক্রির ইজারা নিলাম ঘোষণা করে বিআইডাব্লিটিএ। এই নিয়ে নিলামকারীদের মধ্যে জটিলতা সৃষ্টি হলে উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল নামে এক নিলাম ডাককারী আদালতে মামলা ঠুকে দেয়। এতে আটকে যায় কার্যক্রম। খনন না হওয়ায় আশঙ্কাজনকভাবে ভরাট হয়ে গেছে নদী। বিকাল হলেই ভাটার টানে পানি শুকিয়ে জেগে উঠে চর। এতে স্পিডবোটসহ সবধরনের নৌযান চলাচল পুরো বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে ঘাটের দায়িরত্বরত কর্মকর্তা শাহজাহান আলী বলেন, ‘কক্সবাজারমহেশখালী পারাপারে একমাত্র ঘাট এটি। এই ঘাট দিয়ে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের অধিক যাত্রী পারাপার হয়। সকাল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত যাত্রী পারাপার হয়। কিন্তু নাব্যতা সংকটের কারণে বর্তমানে বিকাল ৪টার পর থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সব ধরনের নৌযান চলাচল করতে পারছে না। আমরা বিআইডাব্লিটিএ এবং জেলা প্রশাসনকে বারবার সমস্যার কথা জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোনো সমাধান মিলছে না।’

এই ঘাটটি কক্সবাজারমহেশখালী নৌ যোগাযোগের প্রধান কেন্দ্র। কিন্তু নাব্যতা সংকটে পড়ে ঘাটটি দিনের অর্ধেক সময় বন্ধ থাকছে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগের শেষ নেই। এই ঘাটের নিয়মিত যাত্রী মহেশখালীর বাসিন্দা আবদুল খালেক বলেন, ‘আমি কক্সবাজার শহরে চাকরি করি। প্রতিদিন সকালবিকাল আসাযাওয়া করতে হয়। কিন্তু ৬নং ঘাটের নাব্যতা সংকটের কারণে সীমাহীন দুর্ভোগে আছি। গত এক বছর এই দুর্ভোগ নিয়ে যাতায়াত করছি।’

আরেক যাত্রী হামিদুল হক বলেন, ‘মামলা, অধিগ্রহণের টাকা উত্তোলনসহ নানা কারণে মাসের অধিকাংশ দিন আমাকে কক্সবাজার শহরে আসতে হয়। সকালে এসে কাজ সেরে ফিরতে বিকাল হয়ে যায়। কিন্তু এসময় ফিরতে গিয়ে পড়তে হয় ঘাটের বিপত্তিতে। কিন্তু বিপত্তি কাটাতে কাজ করছে না কর্তৃপক্ষ। বিকল্প হিসেবে নুনিয়াছড়া ঘাট থাকলেও দূরে হওয়ায় সেখানেও দুর্ভোগ রয়েছে।

নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় আর্থিকভাবে সংকটে পড়েছেন বোট মালিক ও চালকরা। তারা বলছেন, বিকালে মহেশখালী ফিরতি যাত্রীদের সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। স্পিডবোট চালক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘সকালে মহেশখালী ঘাট থেকে যাত্রী বেশি হয়। বিকালে আবার কক্সবাজার ৬নং ঘাট থেকে যাত্রী বেশি হয়। কিন্তু বিকালের যাত্রীদের আমরা পরিবহন করতে পারি না। কারণ অন্ধকার নামলে স্পিডবোট আর চালানো যায় না। এ কারণে স্পিডবোটের ভাড়া ও চালকদের মজুরি ঠিক মতো পাওয়া যায় না।’

এ ব্যাপারে বিআইডাব্লিটিএ জানিয়েছে, মামলাটি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। তাই খনন কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না।

বিআইডাব্লিটিএ’র সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান বলেন, ‘খনন করা বালি নিলামের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছিলো বিআইডাব্লিটিএ। এই প্রক্রিয়ায় দর নিয়ে ঝামেলার সৃষ্টিকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতে মামলা রুজু করে। সে কারণে খনন কার্যক্রম চালানো যাচ্ছে না।’

তবে অন্তত স্পিডবোটের জন্য আশার বাণী শুনিয়েছেন বিআইডাব্লিটিএ’র সহকারী পরিচালক মো. খায়রুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘মামলা জটিলতার কারণে খনন কার্যক্রম কখন করা যাবে তার নিশ্চয়তা নেই। তাই জরুরি ভিত্তিতে অন্তত স্পিড বোট চলতে পারে মতো, স্কেভেটর দিয়ে প্রয়োজনীয় অংশ খনন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’

এদিকে মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালর চেয়ারম্যান আতিক উদ্দিন বলেন, ‘খোলা ডাকে আমি প্রতি সিএফটি বালি সাড়ে ৫ টাকা দর দিয়ে সর্বোচ্চ ডাককারী। কিন্তু আমাকে না দিয়ে সাড়ে ৪ টাকা ডাককারীকে বালি দেয়া হয়েছে। আমার অধিকার খর্ব করায় উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেছি। আদালত আমার আবেদন নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত খনন কার্যক্রম স্থগিত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। বিআইডব্লিউটিএ সুপ্রিমকোর্টে আপিল করে। সুপ্রিমকোর্ট হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখেছেন।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকায় ফিরেছেন প্রধান উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬