চট্টগ্রামে ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল মোরশেদ চৌধুরীর আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার তদন্ত করবে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে মামলাটি পিবিআই’তে হস্তান্তর এবং নথিপত্র বুঝে নেওয়ার কথা জানিয়েছেন পুলিশের তদন্ত ইউনিটটির চট্টগ্রাম মেট্রোর জনসংযোগ কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার চাকমা। গতকাল শনিবার তিনি জানান, এখন মামলার তদন্তের কাজ শুরু করবেন তারা। খবর বিডিনিউজের।
গত ৭ এপ্রিল পাঁচলাইশ থানার হিলভিউ আবাসিক এলাকার নাহারভিলা থেকে বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মোরশেদের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মোরশেদের স্ত্রী ইশরাত জাহান চৌধুরী বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেছেন। এতে মোরশেদের দুই ফুফাত ভাই জাবেদ ইকবাল চৌধুরী ও পারভেজ ইকবাল চৌধুরীসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। অন্য দুই আসামি হলেন- সৈয়দ সাকিব নাঈম উদ্দিন ও যুবলীগ নেতা শহীদুল হক চৌধুরী রাসেল। এই মামলায় নাম আসায় আলোচনায় আসেন সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে শারুন চৌধুরী। মামলা করার পর প্রথমে চট্টগ্রামে ও পরে ঢাকায় গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রয়াত মোরশেদের স্ত্রী ইশরাত জাহান। তিনি অন্যদের পাশাপাশি আত্মহত্যার পেছনে শারুন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন। পাশাপাশি চট্টগ্রাম নগর পুলিশের এক উপ-কমিশনার ও সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধেও মোরশেদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের চাপ দেয়ার অভিযোগ করেছিলেন ইশরাত। শারুন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে সংবাদ সম্মেলনে ওঠা অভিযোগের পর বলেছিলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ঘটনায় তাকে জড়িয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হচ্ছে। পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হাত ঘুরে এ মামলার তদন্ত যায় নগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে। গোয়েন্দা পুলিশ এই মামলার আসামি পারভেজ ইকবালের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মো. আরাফাত নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) সালাম কবির গত ২৭ এপ্রিল জানিয়েছিলেন, গ্রেপ্তারের পর আরাফাত আসামি পারভেজ ইকবাল তার মাধ্যমে টাকা লেনদেন করেছে বলে তথ্য দেন। এই মামলার আরও ‘গুরুত্বপূর্ণ’ তথ্যও তিনি দিয়েছেন। আদালতে বাদি পক্ষও মামলাটি পিবিআই’কে তদন্তের জন্য দিতে আবেদন করেছিলেন বলে জানান আইনজীবী মুজিবর রহমান চৌধুরী। তিনি জানান, মামলাটি নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছ থেকে পিবিআই’কে তদন্তের আদেশ দেয়ার জন্য আদালতে আবেদনা করা হয়েছে। তবে আদালতের আদেশ তার হাতে আসেনি বলে জানান তিনি।
২৪ এপ্রিল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে মোরশেদের স্ত্রী ইশরাতের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে মোরশেদ তার আপন ফুফাতো ভাইদের সঙ্গে ব্যবসা করছিলেন। কোনো নথিপত্র ছাড়া তারা মোরশেদকে ২৫ কোটি টাকা ঋণ দেন। তিনি সুদ-আসলে ৩৫ কোটি টাকা শোধ করেছিলেন। কিন্তু আরও পাওনা থাকার কথা বলে তা পরিশোধের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছিল মোরশেদকে। তার স্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের দিকে এসে মোরশেদ ওই ব্যবসার কথা পরিবারের অন্যদের জানান এবং বলেন, তিনি আর ব্যবসাটা করতে চান না।
ফুফাত ভাইদের কাছ থেকে আট বছরে নেওয়া ২৫ কোটি টাকা দিয়ে কী ধরনের ব্যবসা করেছিলেন মোরশেদ, সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেননি তার স্ত্রী ইশরাত। এই চাপের পাশাপাশি নানাভাবে হুমকি দেওয়া হত বলে ইশরাত জানান। তিনি বলেন, সেটাই সহ্য করতে পারেননি মোরশেদ।