মানুষ হইতে সাবধান!

রাজিউর রহমান বিতান | বুধবার , ১২ জুন, ২০২৪ at ৮:০১ পূর্বাহ্ণ

আমরা কুকুরসহ অনেক বোবা প্রাণীকে নানাভাবে অপমান করি,অসম্মান করি। আমরা ভাবি আমরাই আশরাফুল মাখলুকাত,আমরাই শ্রেষ্ঠ!! কিন্তু আচারআচরণে আমরা কখনো কখনো ওদের চেয়েও নিকৃষ্ট! আমরা ভুলে যাই ওরাও আমাদের মতই সর্বশক্তিমান আল্লাহরই সৃষ্টি।

অনেক বাসাবাড়ির সদর দরজার সম্মুখে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখা হয় ‘কুকুর হইতে সাবধান’! অর্থাৎ হিংস্র কুকুর আছে বাড়িতে, তাই সাবধান হতে হবে!

অথচ ক্ষেত্র বিশেষে মানুষ কুকুরের চেয়েও বেশি হিংস্র ও ভয়ংকর…! যার বাড়িতে এই সাইনবোর্ড ঝুলানো আছে দেখা যায় সেই মানুষটি চরম সুবিধাবাদী ও দুর্নীতিপরায়ণ যেটা সমাজের জন্য আরো বেশি ক্ষতির কারণ!

মানুষ দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে। ঋণখেলাপী হয়, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করে। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে। নিজ দেশের সাথে বেঈমানি করে। অন্য দেশের সাথে যুদ্ধ বাঁধিয়ে বোমা মেরে লক্ষ মানুষকে হত্যা করে! যেসব অপকর্ম বোবা প্রাণীদের ধর্মে নেই, কর্মেও নেই! তাছাড়া কুকুর, ঘোড়াসহ অনেক বোবা প্রাণী প্রভুভক্ত, নিমকহালাল এবং মানুষের পরীক্ষিত ও বিশ্বস্ত বন্ধু। মানুষের বিপদে নিজের জীবনবাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে! প্রয়োজনে প্রাণও উৎসর্গ করতে দ্বিধা করে না। অথচ মানুষ তার পেট ভরে গেলেও খায়, নিজের ভাগেরটাও খায় অন্যের হকেরটাও গিলে খায়! অন্যের রিজিকও কেড়ে খায়। একজন মানুষ শত সহস্র মানুষের রিজিকও কেড়ে নেয়, আত্মসাৎ করে কারণ মানুষের ক্ষুধা সীমাহীন! মানুষ নিজের ভাণ্ডারে অফুরন্ত খাবার স্টক করে, সিন্ডিকেট করে বাজারে পণ্যের অস্থিতিশীলতা তৈরী করে! যেটা কুকুর, বিড়ালরা করে না! কুকুরবিড়াল এবং মানুষের তুলনায় নিম্ন শ্রেণির অন্য বোবা প্রাণীরা শুধু নিজের যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই খাওয়ার জন্য, বাঁচার জন্য লড়াই করে! অন্যদিকে মানুষ একাই অসংখ্য মানুষের খাবার কেড়ে খায়। অন্যায় ও অবৈধভাবে পণ্য গুদামজাত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দেয় অতি মুনাফালোভিরা। কার আগে কে দুর্নীতি করে ধনী হবে সেই অশুভ প্রতিযোগিতা করে নিজেদের মধ্যে! চুরির ভাগে কম পড়লে প্রকাশ্যে কামড়াকামড়িও করে মানুষরূপী এসব রাক্ষসের দল! অথচ এই মানুষ শিক্ষিত,জ্ঞানীগুণী, বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন হয়েও অন্যকে বঞ্চিত করে শুধু নিজের পেট ভরানো নিয়েই সদা তৎপর থাকে। নিজের ভুঁড়ির স্ফীতি ও সেখানে পুঞ্জীভূত তেলচর্বির রোশনাই নিয়েই এরা বড়াই করে নির্লজ্জ হয়ে! অন্যের ক্ষুধা কিংবা বঞ্চনায় ভ্রূক্ষেপ নেই এই সর্বভুকদের! এরপরও এই বেপরোয়া সর্বগ্রাসি মানুষের অন্তহীন খিদা মিটে না। এসব বিবেচনায় কখনো সুযোগ হলে বোবা প্রাণী সম্প্রদায় ওদের সমাজেও হয়তো এভাবে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে রাখতো ‘মানুষ হইতে সাবধান’!

পূর্ববর্তী নিবন্ধজীবন পরিক্রমায়
পরবর্তী নিবন্ধমানুষ ও ধন