‘মানুষ বন্ধক’ রেখে ইয়াবা বাণিজ্য, কারবারি গ্রেপ্তার

| বৃহস্পতিবার , ১৮ মে, ২০২৩ at ৫:১৩ পূর্বাহ্ণ

মিয়ানমারের ডিলারের কাছে ‘মানুষ বন্ধক’ রেখে বাংলাদেশে ইয়াবা আনা এক ‘মাদক কারবারি’কে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় তার এক সহযোগিকে গ্রেপ্তার ও ৪০ হাজার ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে কক্সবাজার ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও ইউনিয়নের আল মাছিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার মসজিদের সামনের রাস্তা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছেন র‌্যাব১৫ এর সিনিয়র সহকারি পরিচালক (আইন ও গণমাধ্যম) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী। গ্রেপ্তার জাকির আহমেদ জকির (৩৯) টেকনাফ সদর ইউনিয়নের হাজমপাড়া এলাকার মৃত সালেহ আহমদের ছেলে। তার সহযোগি মো. ইসমাইল (৩৫) একই এলাকার নুরুল বসরের ছেলে। জকিরের নামে টেকনাফ থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। খবর বিডিনিউজের।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাম জানান, গত ১৫ জানুয়ারি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জসিম নামক একজন বাংলাদেশিকে মিয়ানমারের ইয়াবা ডিলারদের নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে ভুক্তভোগী জসিম নিজেই জানায়, টেকনাফ হাজম পাড়ার জকির তাকে কৌশলে মিয়ানমারের ইয়াবা ডিলারের নিকট বন্ধক রেখে ২৫ লাখ টাকার ইয়াবা নিয়ে গেছে। কিন্তু টাকা পরিশোধ না করায় ইয়াবা ডিলাররা তাকে শারীরিক নির্যাতন করছে। ভিডিওটি দৃষ্টিগোচর হলে র‌্যাব১৫ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধিসহ অভিযান অব্যাহত রাখে। তবে ভিডিওটি প্রকাশের পরেই সংশ্লিষ্ট মাদক কারবারীরা আত্মগোপনে চলে যায় বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা আবু সালাম।

তিনি জানান, এর সূত্র ধরে র‌্যাব জানতে পারে জকির মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে সাগর পথে মহেশখালী হয়ে চৌফলদন্ড ঘাটে আসবে এবং ওখান থেকে ঈদগাঁওতে ইয়াবা চালান পৌঁছে দেবে। এমন খবরে র‌্যাব১৫ মঙ্গলবার দিনগত মধ্যরাতে আল মাছিয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসার মসজিদের সামনে তল্লাশী অভিযান শুরু করে। এক পর্যায়ে দুইজন ব্যক্তি একটি সিএনজি অটোরিকশা থেকে নেমে কৌশলে পালানোর চেষ্টা করলে র‌্যাবের আভিযানিক দল তাদের আটক করে। পরে তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৪০ হাজার ইয়াবা এবং তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাম আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জকির জানায়সে টেকনাফ ও উখিয়া থানা এলাকার ইয়াবা গডফাদার এবং তার সহযোগীদের সহায়তায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন লোককে সীমান্তবর্তী মায়ানমার এলাকায় বন্ধক রেখে ইয়াবার বড় বড় চালান নিয়ে আসে। এ ব্যাপারে মামলা করে আটক জকির ও তার সহযোগিকে কক্সবাজার সদর থানায় সোর্পদ করা হয়েছে বলে জানান র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনী জানায়, সম্প্রতি মিয়ানমারে ‘মানুষ বন্ধক’ রেখে মাদক আনার বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা জানা গেছে। মিয়ানমার থেকে মাদক আনতে দেশের কারবারিরা সাধারণত অগ্রিম টাকা পাঠাতেন। কিন্তু আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে কোনঠাসা হয়ে পড়া কারবারিরা বড় বড় চালানের টাকা অগ্রিম দিতে পারছেন না। তাই তারা কৌশল বদলে সমঝোতার ভিত্তিতে নিজের প্রতিনিধিকে স্বজন হিসেবে পরিচয় দিয়ে মিয়ানমারের ডিলারদের কাছে ‘বন্ধক’ রেখে আসেন। মাদকের চালানের টাকা হাতে পাওয়ার পর সেই জিম্মিকে মুক্তি দেন ডিলাররা। আর টাকা না পেলে বা দেরি হলে প্রতিনিধির ওপর চালানো হয় নির্মম নির্যাতন।

তেমনি এক বন্দি টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মিঠাপানির ছড়ার আবুল কাশেমের ছেলে জসিম উদ্দিন। তাকে বন্ধক রেখে মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান এনে টাকা পরিশোধ না করে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে এপারের ইয়াবা কারবারিরা। এ জন্যে তার ওপর চলে নির্যাতন। জসিম ছাড়াও টেকনাফ সদরের পল্লানপাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ আইয়ুব, বাহারছড়ার বাসিন্দা আলী হোছনসহ বেশ কয়েকজনের ওপর এমন নির্যাতনের ঘটনার কথা জানা গেছে বলে জানান আইনশৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাবেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
পরবর্তী নিবন্ধবিনা টিকিটে ট্রেনে উঠতে চবি ভর্তিচ্ছুদের অবরোধ