১৯৭৪–৭৫ সাল দেশে তখন সীমাহীন দুর্ভিক্ষ চলছে দেশে। প্রতিনিয়ত রাস্তাঘাটে কত অঘটন। চোখের সামনে মানুষের মৃত্যু এ–যেন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছিল। নতুন বাংলাদেশ শূন্যের কোটায় দাঁড়িয়ে। চারিদিকে বিধ্বস্ত সড়ক মহাসড়ক কলকারখানা। কাজ নেই কর্মহীন মানুষ। লক্ষ লক্ষ বেকার। সব মিলিয়ে দেশের অবস্থা ছিল খুবই করুণ। একদিন আমার মন খুব খারাপ ছিল বৃদ্ধ মা বাবার জন্য। বাসা (শহরের) থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম ১১। ১২টায় রৌদ্রের মধ্যে। হঠাৎ ১০–১২ বছরের একটি ছেলে হাফপ্যান্ট পড়া দৌড়ে আমার দিকে আসছে। পিছনে তার বড় ভাই ধাওয়া করছে। আমি আগে থেকে তাদের জানতাম। কাছাকাছি বাসা আসা যাওয়া ছিল। আমাকে এরা ইজ্জত করতো। ছোট ছেলে দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। বললো আঙ্কেল আমাকে ভাইয়া মারছে। বড় ভাইকে আঙ্গুল দেখিয়ে ডাক দিলাম। জিজ্ঞেস করলাম কেন? বললো আমার প্রচুর ক্ষুধা লেগেছিল সামান্য পান্তাভাত খেতে চেয়েছিলাম। তাদের অভাবী সংসার ছিল। আমি তাকে বুকে জড়িয়ে বাসায় নিয়ে পেট ভরে খেতে দিলাম। তার বিস্তারিত কথা শুনে আমার পরিবার তাকে রেখে দিল এবং লেখা পড়া দায়িত্ব নিল। ছেলেটা খুব ভালো এবং সৎ ছিল। তার সততার কারণে সকলের মন জয় করলো। আমার খুশিতে মন ভরে গেল। সেখান থেকে লেখাপড়া শিখে একদিন বিদেশ চলে গেল। অতীতকে স্মরণে রেখে জীবনকে গড়ে তুললো। বিদেশে গাড়ি বাড়ি ব্যবসা, দেশে ব্যবসা গাড়ি জায়গা বিল্ডিং এখন তার প্রচুর। এত টাকা সম্পদ হিসাব রাখতে পারে না। তার এত উন্নতির জন্য আমি আনন্দিত এবং দোয়া করি। বহু বছর পর একদিন আমি তার কাজ থেকে মৌখিক সামান্য সহযোগিতা চেয়েছিলাম কিন্তু দুর্ভাগ্য সে ঐ টুকু সহযোগিতা করলো না। সেই ৭৪–৭৫ সালের কথাটা আমার খুব মনে পড়লো এবং হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। টাকা বা সম্পদ চাইনি। এখন ভাবছি শুধু শুধু কেন সামান্য মৌখিক সহযোগিতা চাইতে গেলাম। মানুষের যখন অর্থ সম্পদ হয়ে গেলে কিছু কিছু মানুষ অতীতের ছোট খাটো কথা গুলো কি আর মনে থাকে! কখনো কখনো আপনি যতই ভালো হোন, যতই দয়ালু হোন, যতই যত্নবান হোন, যতই ভালোবাসুন, না খেয়ে খাওয়ান। কিছু মানুষের জন্য সেটা কখনো যথেষ্ট নয়। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কী মানুষ পেতে পারে না। কিন্তু মানুষ কিছুতেই বুঝে না। জীবন কত ছোট।












