মানুষের পাশে মানুষ জয় হোক মানবতার

| বুধবার , ৮ জুন, ২০২২ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ড বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও আগুনে হতাহতদের স্বজনদের আর্ত চিৎকারে ভারী হয়ে আছে পরিবেশ। কাঁদছে পুরো বাংলাদেশ। শুধু সীতাকুণ্ড নয়, শুধু চট্টগ্রাম নয়; সমগ্র দেশে চলছে হাহাকার- বিলাপ ধ্বনি। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মানুষ আবারো প্রমাণ করেছে মানুষের পাশে সবসময় মানুষ থাকে। ৬ জুন দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত ‘মানুষের পাশে মানুষ, আঁরা চাটগাঁইয়া, হৃদয়টা আমাদের বড়’ শীর্ষক প্রতিবেদনে মানবতার কথাটিই তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় আবারো চট্টগ্রামের মানুষ প্রমাণ করল, মানবতা মরেনি আজো, মানবতা মরে না কখনো। গত শনিবার রাতে ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় হতাহত ও তাদের স্বজনদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে নগরী। চট্টগ্রামের আকাশে এখন শুধুই কান্নার রোল। বাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি কাজ করছে রোভার স্কাউট, রেড ক্রিসেন্ট, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। হতাহতদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন বন্দর নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। কেউ ছুটে আসছেন রক্ত দিতে, আবার কেউ আসছেন ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রী নিয়ে। কেউ এসে বলছেন, আমার অমুক গ্রুপের রক্ত। কই দেব? কেউ আবার নিজের গাড়ি দিয়ে বলছেন, আমার গাড়ি নেন। রক্তদাতা নিয়ে আসেন। চট্টগ্রামের তরুণ, যুবক, স্বামী-স্ত্রী, বয়স্ক থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ এভাবেই ছুটে এসেছেন হাসপাতালে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বাসভর্তি হয়ে আসছেন সাহায্য করতে, রক্ত দিতে। কেউ ফ্রিতে ওষুধ, সরঞ্জাম দিচ্ছেন, কেউ ফ্রিতে ডোনার আনা-নেওয়া করছেন।

সবচেয়ে অবাক করার বিষয় যে, দল-মত নির্বিশেষে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তি সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। অর্থ বিলিয়ে দিয়েছেন প্রচুর মানুষ, ওষুধ সংগ্রহ করে দাঁড়িয়ে আছেন অনেকে আর শত শত লোক রক্তদানের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছেন। রক্তও সংগ্রহ হচ্ছে। উদ্ধারের কাজে যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ সরকারি সংস্থাগুলোর পরিশ্রমী কর্মীরা। তার পাশাপাশি হতাহতদের উদ্ধারের কাজে এগিয়ে গেছেন শত শত সাধারণ মানুষ। মানুষ যেভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তা অভাবনীয়। বুঝতে পারি মানবতা এখনো জেগে আছে। প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে দাঁড়িয়েছেন অনেকেই বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়ার জন্য, অনেকেই ছুটে গেছেন রক্ত দেওয়ার জন্য। এরকম আশা জাগানিয়া দৃশ্য দেখে যে কেউ খুশি হবেন নিঃসন্দেহে। মনে হয়েছে প্রতিটি মানুষ তার সাধ্যমত দাঁড়িয়ে গেছেন সাহায্যার্থে। নাগরিকের কর্তব্য পালনে তারা সচেষ্ট হয়েছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভূমিকাও ছিল অসামান্য। সীতাকুণ্ড ট্রাজিডিতে হতাহত মানুষের পাশে দাঁড়াতে মধ্যরাতেই ঘুমের ঘোর কাটিয়ে নিঃস্বার্থে ছুটে গেছে তারা। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, রাত ২টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে শত শত স্বেচ্ছাসেবী মানবিকতার ডাকে সাড়া দিয়ে জড় হতে থাকে। এদিকে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলো থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বরাবর খবর আসে রক্তসহ পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবকের চাহিদার কথা। খবর পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রক্তদানের জন্য আগ্রহী হয়ে ওঠে। রাতে ড্রাইভার সংকটের মধ্যেও দ্রুত সময়ের মধ্যে মানবিক ডাকে সাড়া দিয়ে ছুটে এসেছে তারা। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া কয়েকটি বাসে উঠতে না পেরে অনেকেই স্বেচ্ছায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে শহরের হাসপাতাল অভিমুখে রওনা হয়েছেন এবং অনেক শিক্ষার্থীকেই দেখা গেছে যাতায়াতের পর্যাপ্ত মাধ্যম না থাকায় দীর্ঘক্ষণ ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে। কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেভাবে সাড়া দিয়েছে, তা সত্যই প্রশংসনীয় ও অনুসরণীয়।

চট্টগ্রামের তথা দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আসুন আমরা সবাই এগিয়ে যাই। একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই। তাদের প্রতি একটু সহানুভূতি প্রকাশ করি। এভাবে যদি আমরা সবাই একটু একটু করে এগিয়ে আসি তাহলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। অসহায়দের আর বাঁচার জন্য আকুতি করতে হবে না। আমরা যেন এই মহাবিপদ থেকে সহসা পরিত্রাণ পাই, সেই প্রার্থনা করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে