মানবতার আর্তনাদ আজ বিশ্বজুড়ে। কিন্তু বাংলাদেশে মৃত্যু যেন পাখির মতো। আমরা যেন বাস করছি এক মৃত্যু উপত্যকায়। আপনি বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে নামি–দামি রেস্টুরেন্টে খেতে যাবেন খাবার শেষ না হতেই আপনি আপনার পরিবার নিয়ে আগুনে পুড়ে ছাই আর সাবধানে গাড়ি নিয়ে আধুনিক সড়কে বাড়িতে ফিরতে যাবেন, হঠাৎ নির্মাণাধীন রড়, ইট কিংবা গার্ডার পড়বে আপনার ওপর। একটু বর্ষাকালে বৃষ্টি হলেই আপনি ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে যাবেন বৃষ্টির পানিতে আপনি নালায় পড়ে মরে যাবেন আপনার মৃত্যু লাশটা পাওয়া যাবে না কেউ আপনার মৃত্যুর দায় নেবে না। চট্টগ্রাম সীতাকুণ্ড মৃত্যুর ট্র্যাজেটি, নিমতলী, চুড়িহাট্টা, বঙ্গবাজারের সঙ্গে যুক্ত হল নতুন নাম ‘বেইলি রোড়’! আমরা দেশের সার্বিক অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে তাকালে দেখি শহর, গ্রাম থেকে মহানগর, অজগ্র টাওয়ার, অজগ্র রেস্তোরাঁ, অজগ্র ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। গ্রাম থেকে শহর সার্বিক উন্নয়নের বড় একটি প্রতিনিধিত্বকারী
দিক হলো! কী সুন্দর আলিশান সব বাড়ি, চোখ ধাঁধিয়ে যায়। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সব কক্ষ কী সুন্দর সাজানো, গোছানো। লিফট আছে বিভিন্ন ধরনের। কিন্তু সরু একটা তিন ফুট সিড়ি। বিকল্প এঙিটওয়ে নেই। নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। অন্যদিকে আগুন লাগলে এসি ভবনে বাতাস থাকে না। ফলে কার্বন মনোঙাইড নামের বিষাক্ত গ্যাস জায়গায় করে নেয়। কার্বন মনোঙাইড গ্যাসের কারণে ও অক্সিজেনের কারণে মানুষ মরা যায়। বেইলি রোড় ট্র্যাজেডিতে নিহত সংখ্যা ৪৬ জন। আমরা মনে করি এ–ই টা একটা হত্যা। সহজ ভাষায় যাকে বলে বিষাক্ত ধোঁয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। কোনো ভবনে অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকলে ফায়ার সার্ভিসের নোটিশ টানিয়ে দিতে হবে। ফায়ার সার্ভিসকে মামলা করতে হবে। তবে মূলত দরকার সরকারি সংস্থাগুলোর সম্মিলিত ঊদ্যোগ ও সমম্বয়। সেটা না হলে অঘটন কত ঘটবে আমরা জানি না। গ্রীষ্মকাল আসছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা আর কত মৃত্যু আর কত ভয়াবহতা আমাদের দেখতে হবে?
এখন থেকে যদি প্রাণ নিয়ে বাঁচতে চান, পরিবার নিয়ে রেস্টুরেন্টে কিম্বা কোন শপিংয়ে যান বা কোথায়ও বেড়াতে যান বা চিকিৎসার জন্য যান বা শিক্ষা অর্জনের জন্য যান আগে দেখে নিবেন অগ্নিকাণ্ড বা অন্য কোনও দুর্ঘটনা হলে বাঁচার পথ আছে কিনা। নিজের জীবনকে নিজেই পাহারা দিতে হবে। কাজের চেয়ে জীবন বড়, জীবন আপনার, দায়িত্বটাও আপনার। আপনাকে চিন্তা করতে হবে।