মানুষকে সচেতন করার পদক্ষেপ নিতে হবে

| শনিবার , ৫ মার্চ, ২০২২ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

‘মানব পাচার’ একটি সামাজিক ব্যাধি। সভ্যতা বিবর্জিত জঘন্য একটি অপকর্ম। জাতিসংঘের মতে মানব পাচার হলো- ‘ভয় দেখিয়ে বা জোর করে অথবা কোনোভাবে জুলুম করে, হরণ করে, প্রতারণা করে, ছলনা করে, মিথ্যাচার করে, ভুল বুঝিয়ে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে, দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে, অথবা যার উপরে কর্তৃত্ব আছে পয়সা বা সুযোগ-সুবিধার লেনদেনের মাধ্যমে তার সম্মতি আদায় করে শোষণ করার উদ্দেশ্যে কাউকে সংগ্রহ করা, স্থানান্তরিত করা, হাতবদল করা, আটকে রাখা বা নেওয়া।’
সংজ্ঞাটির ব্যাখা যা-ই হোক না কেন, এ কথা সত্যি যে নানাবিধ কারণে মানুষ নানাভাবে পাচারের শিকার হচ্ছে। চাকরির প্রলোভন, উন্নত জীবনের স্বপ্ন, নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা বা বসবাসের ভালো পরিবেশ দেওয়ার কথা বলে একশ্রেণির মানুষ এই ছলচাতুরি করে পাচারের সুযোগ নেয়।
মানব পাচার বিশ্বব্যাপি একটি সমস্যা এবং একটি ঘৃণ্য অপরাধও বটে। পাচারের শিকার মানুষদের মানবাধিকার নানাভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। প্রতি বছর পাচারের শিকার হয়ে সারা বিশ্বে অনেক মানুষের জীবনে সর্বনাশ ঘটছে। জাতিসংঘের মাদকদ্রব্য ও অপরাধ বিষয়ক কার্যালয়ের (ইউএনওডিসি) মানব পাচারের তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, পাচারের শিকার প্রতি তিনজনের একজন শিশু। তারা অনেকেই যৌন নিপীড়ন ও জোরপূর্বক কায়িক শ্রম দিতে বাধ্য হয়। তাই এটাকে কেউ কেউ ‘আধুনিক দাসত্ব’ বলছেন।
ইউএনওডিসির মতে, সারা বিশ্বের কোথাও না কোথাও মানুষ নানাভাবে পাচারের শিকার হচ্ছে, অর্থাৎ পৃথিবীর কোনোস্থানেই মানুষ পাচারকারীর খপ্পর থেকে নিরাপদ নয়। জাতিসংঘের এই সংস্থাটির মতে, পাচারের শিকারের অধিকাংশ নারী ও শিশু (প্রায় ৭০ ভাগ)।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মানব পাচার চক্রে বিভিন্ন দেশের নাগরিক যুক্ত থাকে। তাই এ চক্রের সব সদস্যকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার কাজটি কঠিন। যেহেতু আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে, সেহেতু পাচার চক্রের সব সদস্যকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব না হলে এদের খপ্পরে পড়ে দেশের বহু তরুণ সর্বস্ব হারাবেন, এমন আশঙ্কা থেকেই যায়। জানা গেছে, বর্তমানে ভারতের বিভিন্ন শহরে এখনো বহু বাংলাদেশি তরুণ জিম্মি রয়েছেন। এদের যাতে দ্রুত উদ্ধার করা যায় সে জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আদম ব্যবসায়ী চক্রের প্রতারণার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত থাকলেও প্রতারকদের বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান অব্যাহত থাকার বিষয়টি দৃশ্যমান নয়। এ কারণেই আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্যরা নানা কৌশলে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। দেশে কর্মসংস্থানের সংকট দূর না হলে এ ধরনের সমস্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করার আশঙ্কা থেকেই যায়।
প্রতি বছর কত মানুষ পাচারের শিকার হচ্ছে তার সঠিক তথ্য-উপাত্ত না থাকলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ বছরে প্রায় এক মিলিয়ন (বা ১০ লাখ) মানুষ বাংলাদেশ থেকে পাচারের শিকার হয়েছে।
আমাদের দেশ থেকে সীমান্তপথে ভারতে অথবা সাগরপথে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশে নিয়মিত পাচার হচ্ছে। মূলত নারী ও শিশুরা বেশি সংখ্যায় পাচারের শিকার হচ্ছে। কারণ, আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থার আলোকে তারা বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী হিসেবে বরাবরই স্বীকৃত। সামপ্রতিককালে বিদেশে চাকরি দেওয়ার নামেও পাচারকারীরা নতুনভাবে এই ঘৃণ্য অপকর্মটি করে যাচ্ছে যা খুব দ্রুত থামানো দরকার।
মানব পাচারের ভয়াল এই থাবা থেকে বাংলাদেশকে নিরাপদ রাখতে হবে, যা খুব সহজ নয়। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে, আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর প্রচুর সংখ্যক মানুষ পাচারের শিকার হচ্ছে। কেউ বা পাচার হয়ে ফিরে কিছুদিন পরে ফিরে আসছে, আবার কেউ চিরদিনের জন্য নিখোঁজ হয়ে রয়েছে। অনেক সময় সামাজিক লোকলজ্জার ভয়েও পাচারের শিকারের পরিবার ঘটনাটি জানায় না। ফলে ঘটনা আমাদের আর জানা হয় না, জানা যায় না কার মাধ্যমে এই সর্বনাশটি ঘটল।
তাই প্রতারণা করে যাতে কেউ পার পেতে না পারে সে জন্য জোরালো অভিযান অব্যাহত রাখা দরকার। মানব পাচার চক্রের সদস্যদের বেপরোয়া হয়ে ওঠার রহস্যও উদঘাটন করা জরুরি। এসব বিষয়ে দেশের মানুষকে সচেতন করার পদক্ষেপ নিতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে