মানুষকে বুঝিয়ে ঘরে রাখার চেষ্টা

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২ জুলাই, ২০২১ at ৬:৩৩ পূর্বাহ্ণ

সরকার ঘোষিত সাত দিনের ‘কঠোর বিধিনিষেধের’ প্রথম দিন গতকাল বৃহস্পতিবার নগর জুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি ছিল ঠিকই, তবে শাস্তি প্রদানের চেয়ে তাদের মধ্যে ‘বুঝিয়ে শুনিয়ে’ মানুষকে ঘরে পাঠানোর প্রবণতা ছিল লক্ষ্যণীয়। প্রচার-প্রচারণার পরও মুখে মাস্ক কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সচেতনতা দেখা যায়নি অনেকের মধ্যেই। যাদের মুখে মাস্ক ছিল না, তাদের মাস্ক প্রদান করতে দেখা গেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। কঠোর বিধিনিষেধের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, লকডাউন সুন্দরভাবেই চলছে। আমরা বড় ধরনের কোনো মামলা বা গ্রেপ্তারের দিকে এখনও যাইনি। আশা করি, নগরবাসী সরকারের নির্দেশনা মেনে ঘরে থাকবেন। যারা বের হয়েছেন, আমাদের চেকপোস্টে কিংবা টহল টিমের কাছে তারা যথাযথ কারণ দেখাচ্ছেন। প্রয়োজন হচ্ছে না, তাই আমরা আপাতত কঠোর হচ্ছি না। প্রয়োজনে অবশ্যই কঠোর হব। অলিগলিতে কিছু মানুষ অহেতুক বের হচ্ছেন বলে জানতে পেরেছি। থানার টহল টিমগুলোকে এ ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এটাও বন্ধ হয়ে যাবে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান অহেতুক লোকজনকে ঘর থেকে বের না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যেহেতু জনস্বার্থে দেয়া লকডাউনে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে প্রত্যেককে এসব মেনে চলতে হবে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সকাল ৮ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। শিল্পকারখানা চালু থাকায় শুধুমাত্র তাদের যানবাহন ছাড়া সব যন্ত্রচালিত যানবাহন বন্ধ থাকবে। জেলা প্রশাসক জানান, আইনশৃক্সখলা বাহিনী লকডাউন কার্যকরে সক্রিয় রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ১০০ ভলান্টিয়ার কাজ করছেন।
গতকাল সকাল থেকেই নগরীর সড়কে গণপরিবহনের দেখা মেলেনি। মূল রাস্তার আশপাশে দোকানপাট বন্ধ ও লোকজনের চলাচল ছিল সীমিত। কিন্তু, পাড়ায়-অলিগলিতে লোকজনের জটলা ঠিকই ছিল। আবার নগরীর বাইরে থেকে নগরীতে লোকজন প্রবেশ করতেও দেখা গেছে। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে সুনির্দিষ্ট কারণ জানাতে পারলে ছাড় মিলছে।
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কর্ণফুলী ব্রিজ, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর ২ নং গেট, জিইসি মোড়, ওয়াসা মোড়, লালখান বাজার, কাজীর দেউড়ি, আন্দরকিল্লা ও জামালখান ঘুরে দেখা যায় সড়ক ছিল মূলত রিকশার দখলে। মাঝে মাঝে কিছু মোটর সাইকেল, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার দেখা গেছে। তবে সংখ্যায় খুবই কম। সড়কে বের হওয়া অনেকের, বিশেষ করে রিকশা চালকদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। বিভিন্ন চেকপোস্টে মাস্কবিহীন লোকজন দেখলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের মাস্ক দেয়া হয়েছে। মোটরযানগুলোকে চেকপোস্টে চলাচলের যথাযথ কারণ ব্যাখ্যা করতে হয়েছে। প্রয়োজন ছাড়া বের হওয়ায় মামলা দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট গাড়ির বিরুদ্ধে। রাস্তায় চলাচলকারী মানুষের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া না হলেও আইনশৃক্সখলা বাহিনী সবাইকে সতর্ক করে সরিয়ে দিতে দেখা গেছে।
দক্ষিণ চট্টগ্রাম থেকে নগরীর প্রবেশ পথ শাহ আমানত সেতু এলাকায় মোটর সাইকেল, প্রাইভেট সিএনজি টেক্সি করে লোকজনকে শহরে ঢুকতে দেখা গেছে। সবাইকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে। শাহ আমানত সেতু এলাকায় চেকপোস্টে দায়িত্বরত মেজর আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, জরুরি প্রয়োজনেই অধিকাংশ লোকজন ঢুকছেন। আমরা সর্বোচ্চ সহানুভূতি ও মানবিকতা প্রদর্শন করছি। যারা প্রয়োজনে আসছেন তাদের জন্য কোনো বাধা নেই। কিন্তু অন্যদের আমরা অ্যালাউ করতে পারছি না। তাদের আমরা প্রাথমিকভাবে সতর্ক করছি।
ডবলমুরিং থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন দুপুরে বলেন, বাদামতলী মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে আমরা লকডাউনের বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে সকাল ৯ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত অপ্রয়োজনে রাস্তায় চলাচলরত ১০ টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, আরো পাঁচটি আটক করেছি। এ সময়ে রাস্তায় অহেতুক ঘুরে বেড়ানো ২১ জনকে আটক করি। তাদের দুই ঘন্টা চেকপোস্টে বসিয়ে রেখে মাস্ক পরিয়ে ও চূড়ান্ত সতর্ক করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, কয়েকটি গার্মেন্টস গাড়ি না দেয়ায় তাদেরকে আমরা সকাল সাড়ে ৬ টা থেকে সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত নিজেদের উদ্যোগে গাড়ির ব্যবস্থা করে কর্মস্থলে পৌঁছে দিয়েছি। থানার সকল অফিসার, কনস্টেবল রাস্তায় অপ্রয়োজনীয় গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। উপযুক্ত কারণ ব্যাখ্যায় ব্যর্থ গাড়ি চালকদের কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া অপ্রয়োজনে রাস্তায় আসা মানুষকে এক ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রেখে বিধিনিষেধ ও এর কার্যকারিতা সম্পর্কে বুঝিয়েছি।
বাকলিয়া থানার ওসি মো. রুহুল আমিন বলেন, কর্ণফুলী থানাধীন মইজ্জারটেকে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের কোনো গাড়ি শহরে প্রবেশ করতে পারছে না। এছাড়া, আমার থানা এলাকায় গাড়িতে টহল পুলিশ দল রাস্তায় অপ্রয়োজনীয় বের হওয়া লোকজন ও গাড়িকে চূড়ান্ত সতর্ক করে ঘরে পাঠিয়ে দিচ্ছে। যাদের মাস্ক নেই তাদের মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ।
কঠোর বিধিনিষেধ প্রতিপালনে ব্যর্থতার অভিযোগে জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট ৩৭ টি মামলায় ১৩ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা আদায় করেছেন। জেলা প্রশাসনের নয় জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নগর জুড়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন। লকডাউন চলাকালে নগরীর বাকলিয়া-চকবাজার এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুমা জান্নাত, খুলশী এলাকায় ইনামুল হাসান, কোতোয়ালী এলাকায় মো. উমর ফারুক, বায়েজিদে জিল্লুর রহমান, পাঁচলাইশ-চান্দগাঁও এলাকায় রেজওয়ানা আফরিন, হালিশহর এলাকায় মাসুদ রানা, বন্দর-ডবলমুরিং এলাকায় নূরজাহান আকতার সাথী, আকবরশাহ-পাহাড়তলী এলাকায় ফাহমিদা আফরোজ এবং কর্ণফুলী এলাকায় দায়িত্ব পালন করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্লাবন কুমার। জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উমর ফারুক বলেন, লকডাউনে যারা বিনা কারণে ঘর থেকে বের হয়েছে তাদের জরিমানা করা হয়েছে। যেসব দোকান খোলা ছিল তাদের জরিমানা করা হয়েছে ও দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের সংক্রমণ বিস্তার রোধে জেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসনের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ৫৫২ শনাক্ত
পরবর্তী নিবন্ধসরকারি অ্যাম্বুলেন্সে যাত্রী, চালককে জরিমানা