মানহানিতে কারাদণ্ড বাদ, শাস্তি হবে জরিমানা

ডিজিটাল আইনের নাম হচ্ছে সাইবার সিকিউরিটি আইন আগের মামলাগুলো চলবে

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ৮ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:২৭ পূর্বাহ্ণ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম বদলে সাইবার সিকিউরিটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে। এর নতুন নাম হবে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট। একই সঙ্গে আইনের অনেকগুলো ধারায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে।

মানহানিতে কারাদণ্ড বাদ, শাস্তি হবে জরিমানা : মানহানিকর তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের অপরাধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থাকা কারাদণ্ডের বিধান বাতিল করে নতুন আইনে শুধু জরিমানার বিধান করতে যাচ্ছে সরকার। মানহানির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কেউ জরিমানার অর্থ পরিশোধ না করতে পারলে তখন ৩ থেকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া যাবে।

মানহানির জন্য সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পরিবর্তন করে সাইবার সিকিউরিটি আইন করা হচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।

আইনমন্ত্রী গতকাল সচিবালয়ে তার দপ্তরে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ২৯ ধারা সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছে। শুধু শাস্তি হবে জরিমানা, সেই জরিমানা অনাদায়ে ৩ থেকে ৬ মাসের কারাদণ্ড থাকবে। সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। কারাদণ্ড উঠিয়ে দিয়ে শুধু সাজা রাখা হয়েছে। দেওয়ানী আইনে যদি মানুষ ক্ষতিপূরণ চায় সেখানে কিন্তু ক্ষতিপূরণের কোনো লিমিট নেই। ১০০ কোটি টাকাও ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে। সেইসব ক্যালকুলেশনে অনধিক ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। সর্বনিম্ন যে কোনো পরিমাণ জরিমানা করা যাবে। এক টাকাও জরিমানা করা যাবে, কিন্তু ২৫ লাখ এক টাকা জরিমানা করা যাবে না।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় বলা আছে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে Penal Code (Act XLVof ১৮৬০এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তজ্জন্য তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

যদি কোনো ব্যক্তি উপধারা () এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে ওই ব্যক্তি অনধিক ৫ (পাঁচ) বছরের কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮ ধারায় সাজা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড থেকে কমিয়ে নতুন আইনে দুই বছর করা হচ্ছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, এটা আগে অজামিনযোগ্য ছিল, সেটিকে জামিনযোগ্য করা হচ্ছে।

২৮ ধারায় বলা আছে, () যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করার বা উসকানি দেওয়ার অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে, তাহলে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে। এই অপরাধে তাকে অনধিক ৫ (পাঁচ) বছরের কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ (দশ) লাখ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। যদি কোনো ব্যক্তি ওই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহলে তিনি অনধিক ১০ (দশ) বছরের কারাদণ্ডে, বা অনধিক ২০ (বিশ) লাখ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

সংসদের আগামী সেপ্টেম্বর মাসের অধিবেশনে সাইবার সিকিউরিটি আইন পাস করা হবে জানান আইনমন্ত্রী।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাগুলো চলবে : বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে নতুন আইন হলেও আগের আইনে গত পাঁচ বছরে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেই মামলাগুলো চলবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের পর গতকাল দুপুরে সুপ্রিম কোর্টে নিজ কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা জানান। গত পাঁচ বছরে এই আইনে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মামলার সংখ্যা ৭ হাজার ১টি বলে সম্প্রতি আইনমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছিলেন।

সাইবার নিরাপত্তা আইন যেন ডিএসএর রূপান্তর না হয় : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) ‘বিতর্কিত’ ধারাগুলো সাইবার নিরাপত্তা আইনে যুক্ত না করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশটিআইবি। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি সাইবার নিরাপত্তা আইন যেন কোনোভাবে স্বাধীন মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের হাতিয়ারে পরিণত না হয়, তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে।

দেশের সাংবাদিক, আইনজীবী, বুদ্ধিজীবীদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আপত্তি ও উদ্বেগের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ব্যাপক সমালোচিত ৫৭সহ কয়েকটি ধারা বাতিল করে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হলেও পুরনো আইনের বাতিল হওয়া ধারাগুলো নতুন আইনে রেখে দেওয়ায় এর অপপ্রয়োগের শঙ্কা ছিল উদ্বেগের কেন্দ্রে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় বানের পানিতে ভাসছে ৪ লাখ মানুষ
পরবর্তী নিবন্ধআজ নগরীর সব স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে