মানবিক পুলিশ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া পুলিশ কনস্টেবল শওকত হোসেনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত ১৬ এপ্রিল সিএমপির বন্দর বিভাগের উপ–কমিশনার শাকিলা সোলতানা তার চাকরিচ্যুতির আদেশে স্বাক্ষর করেন। সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের দপ্তরে এ আদেশ পাঠানো হয়েছে।
আদেশে বলা হয়েছে, ‘৭১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্ত (শওকত হোসেন) শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যা থাকায় এবং বেওয়ারিশ মানুষ নিয়ে মানবিক কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয় এমন বক্তব্য লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।’
এ বিষয়ে সিএমপির উপকমিশনার (সদর) মোহাম্মদ আবদুল ওয়ারীশ আজাদীকে বলেন, কনস্টেবল শওকত হোসেনের চাকরিচ্যুতির আদেশ হয়েছে। ৭১ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিতির জন্য তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হলে সে জানায়, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত সমস্যার পাশাপাশি বেওয়ারিশ মানুষ নিয়ে মানবিক কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। এর পরই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
আদেশের কপিতে আরও বলা হয়, কর্ণফুলী থানায় দায়িত্বরত কনস্টেবল শওকত হোসেন ২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর অসুস্থ হলে দামপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। ওই বছরের ৮ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এরপর চিকিৎসক এক সপ্তাহের পূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ দিয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেন। কিন্তু ওই বছরের ৯ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭১ দিন তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।
গত ১১ ফেব্রুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে লিখিত জবাব দেন শওকত। সেখানে উল্লেখ করেন, বেওয়ারিশ মানুষকে নিয়ে মানবিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকায় পুলিশ কনস্টেবল পদে তার চাকরি করা সম্ভব নয়।
নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার বাসিন্দা শওকত হোসেন ২০০৫ সালে পুলিশ কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ২০০৯ সালে ঢাকা থেকে বদলি হয়ে রাঙামাটিতে যান। সেখান থেকে আসেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় পুলিশ হাসপাতালে। চাকরির পাশাপাশি তিনি তিন বছরের ডিপ্লোমা এবং দুই বছরের প্যারামেডিকেল কোর্স সম্পন্ন করেন। ২০১১ সাল থেকে তিনি চট্টগ্রাম মহানগরীর অসহায়, দুস্থ ও বেওয়ারিশ মানুষকে নিভৃতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু করেন। হাসপাতালের নিয়মিত দায়িত্ব পালনের পর তিনি মহানগরীতে ঘুরে ঘুরে স্বজনহারা, নাম–পরিচয়হীন অসুস্থ মানুষকে সেবা দিতেন, ওষুধপথ্য জোগাড় করে দিতেন। ধীরে ধীরে তার সঙ্গে একাধিক কনস্টেবল স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে এ কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়েন।
দীর্ঘদিন নিভৃতে কাজ করে যাওয়া শওকত হোসেন ২০১৯ সালের ২৯ নভেম্বর পুলিশের কল্যাণ সভায় রাস্তায় পড়ে থাকা অসহায় মানুষকে সেবা দেওয়ার বিষয়টি তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মাহাবুবুর রহমানের সামনে উপস্থাপন করেন। তখন শওকত হোসেনের মানবিকতার বক্তব্য শুনে কমিশনার ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ‘মানবিক পুলিশ ইউনিট’ গঠন করেন। বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে সিএমপি–ই সর্বপ্রথম এমন উদ্যোগ চালু করে ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করে।