আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বক্তা মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী বলেছেন, স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির ভালোবাসা, যে কাজগুলো করলে আল্লাহতায়ালা বান্দাকে ভালোবাসে। আর আল্লাহ যদি কাউকে ভালোবাসে তাহলে আসমানে ফেরেশতাদেরকে জানিয়ে দেন। আসমানের ফেরেশতারা জমিনের মানুষের হৃদয়ে একটা ভালোবাসা পয়দা করে দেন। পৃথিবীতে ৮ শ্রেণির লোক আছে যাদেরকে আল্লাহতায়ালা তাদের কাজের জন্য ভালোবাসেন। পৃথিবীতে যেমন আমরা মানুষের ভালোবাসা চাই। আল্লাহর ভালোবাসা সম্পর্কে কোরআনের ৭ জায়গায় বর্ণনা আছে। তিনি বলেন, দেশের যে নাগরিকরা আছেন তারা ভালো এবং সভ্য না হওয়ার কারণে দেশে পরিবর্তন হচ্ছে না। সুতরাং একটি কল্যাণময় রাষ্ট্রের জন্য নাগরিকদের চরিত্র আগে পরিবর্তন করতে হবে। নাগরিকদের উন্নত চরিত্র শিক্ষা দেওয়ার জন্য উন্নতমানের বান্দা হতে হবে। একটি উন্নত রাষ্ট্র এই নয় যে শুধু ব্রিজ কালভার্টের উন্নয়ন। ওই রাষ্ট্রের নাগরিকদের উন্নত মানবিক চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলে এবং মানবিক চরিত্র গঠন করতে পারলেই একটি উন্নত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঐতিহাসিক প্যারেড ময়দানে (শহীদ রজব আলী ময়দান) ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের উদ্যোগে পাঁচ দিনব্যাপী ঐতিহাসিক তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের দ্বিতীয় দিনের প্রধান মুফাসসিরের আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা খাইরুল বাশার ও তাফসিরুল কুরআন মাহফিল বাস্তবায়ন কমিটির প্রচার বিভাগীয় দায়িত্বশীল মুহাম্মদ উল্লাহর পরিচালনায় মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহের।
বিশেষ অতিথি ছিলেন, ইসলামী চিন্তাবিদ ও সাবেক এমপি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, ইসলামী চিন্তাবিদ ও তাফসীর বাস্তবায়ন কমিটির পৃষ্ঠপোষক মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, মাহফিলে দ্বীনের আলোকে সমাজ পুনর্গঠনে মহিলাদের ভূমিকার উপর আলোচনা করেন পুরাতন রেল স্টেশন জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মামুনুর রশীদ।
প্রধান মুফাসসিরের আলোচনায় মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী আরো বলেন, চট্টগ্রামের এই প্যারেড ময়দান শহীদ আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর হাতে গড়া ময়দান। তাঁর জীবনের যত আলোচনা সমস্ত আলোচনার মূল আলোচনা করেছেন এই ময়দানে। দীর্ঘ ৩২ বছর একটানা পাঁচদিন করে আলোচনা করেছেন। আমরা তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।
এতে উপস্থিত ছিলেন, রাজনীতিবিদ অধ্যাপক আহসান উল্লাহ, পরিষদের সহ–সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমদ মির্জা, মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও আবুল হোসাইন, সেক্রেটারি অ্যাড. সৈয়দ আনোয়ার, ডা. এ কে এম ফজলুল হক, মুহাম্মদ ইসহাক, অধ্যক্ষ বদরুল হক, অধ্যক্ষ মাওলানা জাকের হোসাইন, মাওলানা মহসিন আল হোসাইনী প্রমুখ। মাহফিলে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সুরকার ও গীতিকার চৌধুরী গোলাম মাওলা ও তার সাথীরা এবং চবি দুর্নিবারের কণ্ঠশিল্পীরা।
সাবেক এমপি আ ন ম শামসুল ইসলাম বলেন, ১৬ বছর এদেশে অত্যাচার নির্যাতন স্বৈরাচার সবকিছুই আমরা দেখতে পেয়েছি। আজেকর এদিনে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ছে আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর কথা। সেই কোরআনের পাখি ৩৫ টি দেশে তাফসির মাহফিল করেছেন। এ তাফসির মাহফিলের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষ হেদায়েত পেয়েছে। অনেক বিধর্মী ইসলামের সুশীতল ছায়ায় এসেছেন। প্রিয় ভাইয়েরা ভয় পেলে চলবে না। মহান আল্লাহ আপনাদের পরীক্ষা করে দেখবেন। আপনাদের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এমন কোনো নবী আসেননি যারা নির্যাতনের শিকার হননি। আজকে ইসলামি আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ শহীদ হয়েছেন, তাদেরকে আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌস দান করবেন। আমাদের আল্লাহর রাস্তায় অটল থাকতে হবে। আল্লাহ এবং তার রাসুলকে অনুসরণ করে জীবন পরিচালনা করতে হবে। শহীদ হওয়ার জন্য সাহাবিদের মতো প্রতিযোগিতা করতে হবে।
মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, প্যারেড ময়দান শহীদ আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর স্মৃতি বিজড়িত ময়দান। তার জীবনের দীর্ঘ ৩২ বছর কুরআনের তাফসির করেছেন। বিনা অপরাধে মেডিকেল কিলিংয়ের মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আজকের মাহফিল থেকে সাঈদী হত্যার সাথে জড়িত সকলের শাস্তি দাবি করছি। আল্লামা সাঈদী কুরআনের তাফসির করে পুরো চট্টগ্রামকে বিশ্ব মঞ্চে পরিচিত করেছেন। ইসলাম হচ্ছে পরিপূর্ণ জীবন বিধানের নাম। বাংলাদেশ বিশ্বের ২য় মুসলিম প্রধান দেশ হয়েও ইসলামকে বিজয়ী শক্তি হিসেবে দেখতে পারেনি। ১৬–১৭ বছর মানুষকে তাফসির মাহফিল শুনতে দেয়নি ফ্যাসিস্ট সরকার। শহীদ আল্লামা সাঈদী, মতিউর রহমান নিজামীকে হত্যা করতে পেরেছে কিন্তু কুরআনকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। ফ্যাসিবাদবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। কোনো ফ্যাসিবাদকে বাংলাদেশের মাটিতে ফেরত আসতে দেয়া যাবে না। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের মাটিতে যাতে আর কোনো দিন ফ্যাসিবাদ ফেরত না আসে, সেজন্য ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
