মানবাধিকার ও আর্থসামাজিক অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি

| শনিবার , ১০ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৮:১৩ পূর্বাহ্ণ

আজ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়। ১৯৫০ সালে এই দিনটিকে জাতিসংঘ বিশ্ব মানবাধিকার দিবস হিসেবে ঘোষণা দেয়। সেই থেকে বিশ্বজুড়ে এ দিনটি পালিত হচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সরকারি ও বেসরকারিভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের সংবিধানে মানবাধিকার, সুশাসন নিশ্চিতকরণ, মৌলিক নীতির বাস্তবায়ন ও মৌলিক অধিকার রক্ষায় নিশ্চয়তা বিধান রয়েছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদান করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তবে আমাদের সরকার রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে ভাসানচরে শরণার্থী ক্যাম্প স্থাপন করেছে। তাঁদের পূর্ণাঙ্গ জীবন লাভের একটি সুযোগ দিয়েছে। এর থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশের মধ্যে নয় সারা বিশ্বে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। সারা বিশ্বব্যাপী তা প্রশংসিত হয়েছে। তবে অতি দ্রুত রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমিতে ফিরিয়ে দেয়ার সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি।
এদিকে, ১০ ডিসেম্বর বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানিসহ ১৫টি দেশ ও সংস্থা। বিবৃতিতে বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়ার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। ৬ ডিসেম্বর অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ডেনমার্ক, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এই বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্রে সংরক্ষিত স্বাধীনতা উদযাপন করি এবং ঘোষণাপত্রে বর্ণিত বিভিন্ন অঙ্গীকারের মধ্যে স্বাধীন মতপ্রকাশ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও নির্বাচন বিষয়ে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রের অঙ্গীকার রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরি। অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ, সমতা, নিরাপত্তা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক মানবিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অনুসরণীয় মূল্যবোধ ও নীতি হিসেবে আমরা গণতান্ত্রিক শাসনকে সমর্থন ও উৎসাহিত করি। আমরা বাংলাদেশের বন্ধু ও অংশীদার হিসেবে এ দেশের সাফল্যকে আরও উৎসাহিত করতে আগ্রহী এবং মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে অবাধ, সুষ্ঠু, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করছি।
তবে বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাগরিক ও মানবাধিকার কর্মীরা ১৫ কূটনৈতিক মিশনের যৌথ বিবৃতিটাকে ভালো দৃষ্টিতে দেখছেন না। তাঁরা বলছেন, রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত হয়ে বিবৃতি দেওয়া কূটনৈতিক আচরণ পরিপন্থি। সমপ্রতি কূটনৈতিকদের আচরণ নাগরিক সমাজের উদ্বিগ্নের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৮ ডিসেম্বর সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন গণমাধ্যমে পাঠনো এক বিৃতিতে মানবাধিকার কর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কর্মসূচি, নির্বাচন, মানবাধিকার ইস্যু সহ বিভিন্ন বিষয়ে হুট করে কূটনৈতিকদের মন্তব্য বা বিবৃতি অনাকাঙ্ক্ষিত। বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, বাংলাদেশের বন্ধু ও অংশীদার রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে যেকোন পরামর্শ অবশ্যই গ্রহণযোগ্য, তবে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে কোন প্রকার বিবৃতি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য অসম্মানজনক।
এ কথা স্বীকার্য যে, বাংলাদেশ সরকার গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে সব সময়ই এগিয়ে আছে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ পঞ্চমবারের মতো এই কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। এটি জাতিসংঘের মানবাধিকার ব্যবস্থায় বাংলাদেশের অবদান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কাউন্সিলের দায়িত্ব পালনে আমাদের সক্ষমতার প্রতি আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের গভীর আস্থার প্রমাণ। বিশ্বব্যাপী মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষায় জাতিসংঘের নেতৃত্বকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ সবার সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে।
২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠনের পর ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন, ২০০৯’ প্রণয়ন করেন শেখ হাসিনা এবং সে অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা করেন। সরকার ইতোমধ্যে কমিশনকে শক্তিশালী করতে কমিশনের জনবল ও বাজেট বরাদ্দ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছে। মানবাধিকার সুরক্ষার লক্ষ্যে কমিশনকে আধুনিকায়ন করা ও কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্ষমতা এবং সুযোগ সুবিধা বাড়ানোসহ সকল ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান হিসেবে এ কমিশন দেশে মানবাধিকার সুরক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও মানবাধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশের সাফল্য সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে। বলা অনাবশ্যক যে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শাসন এবং আর্থসামাজিক অন্তর্ভুক্তিতে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মানবিক নেতৃত্ব ও বিশ্ব শান্তির জন্য তাঁর সাহসী-সময়োপযোগী পদক্ষেপ প্রশংসার দাবি রাখে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে