মানবতা জাগ্রত ছিল বলেই তাঁরা সমাজের প্রেরণা

প্রফুল্ল-কল্যাণী স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৬:৩৫ পূর্বাহ্ণ

কুণ্ডেশ্বরীয়ান অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের উদ্যোগে বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ ও তাঁর সহধর্মিণী কল্যাণী সিংহের স্মরণসভা ও প্রফুল্ল-কল্যাণী স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে বায়ান্ন বাংলা গবেষণা সংস্থা প্রকাশিত ‘প্রফুল্ল-কল্যাণী’ স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন ও আমাদের প্রফুল্ল-কল্যাণী শীর্ষক ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যলয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, আমার মনে হয়, একটি প্রতিষ্ঠানের সাবেক শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র একটি অনুষ্ঠান করে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। তাদের প্রতিষ্ঠানের উন্নতির জন্য কাজ করা উচিত। আমি দেখেছি সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলে এই ধরনের অ্যালামনাই এসোসিয়েশন আছে। এখন কুণ্ডেশ্বরী বালিকা মহাবিদ্যালয় একটা অ্যালামনাই এসোসিয়েশন করেছে।

একইসাথে তারা প্রফুল্ল-কল্যাণী স্মারকগ্রন্থও প্রকাশ করেছে। এজন্য তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। একুশে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক বলেন, লায়ন প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ একাধারে সমাজ ও মানবকল্যাণী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁর বাবা নূতন চন্দ্র সিংহ মুক্তিযুদ্ধের একজন শহীদ। আমি যতটুকু জানি, ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন সময়ে কুণ্ডেশ্বরীর প্রায় সকলেই বর্ডার অতিক্রম করে ভারতে চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু নূতন চন্দ্র সিংহকে কেউ নিতে পারেননি। উনি বলেছিলেন-এই দেশের মাটি ছেড়ে আমি যাবো না। তিনি দেশকে ভালোবাসতেন তাই দেশ পাড়ি দেননি।

সেজন্য আমি তাঁকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। এই না যাওয়ার কারণে তাকে জীবন দিতে হয়েছে। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে শিক্ষা এবং সমাজে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন লায়ন প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ। স্বাধীনতার পর পিতার হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব নেন তিনি। সাংস্কৃতিক জগতে একজন বড় মাপের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তিনি। তার উদ্যোগে সম্পন্ন হয়েছে অনেক ভালো ও কৃতিত্বপূর্ণ কাজ। ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী মানুষ হিসেবে সমাজের প্রতিটি মানুষের কাছে তিনি প্রিয় ছিলেন। মানুষের জন্য তিনি সব সময় নিবেদিত। প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহ এমন একজন মানুষ যার ভেতর মানবতা ছিল জাগ্রত। তিনি প্রতিনিয়ত মানুষের কাজে তার জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি ছিলেন আমাদের সমাজের প্রেরণা, বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধার মানুষ।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহের কাছে আমাদের এই বাংলাদেশ ঋণী। যে বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন দিয়েছেন তিনিও তার মধ্যে একজন। তিনি দেশকে ভালোবেসে দেশ ছেড়ে যাননি। প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহের কথা বলতে হয়। তার সাথে আমার পারিবারিক সম্পর্ক তৈরি হয়। তিনি লায়নিজম করতেন। তার মতো মহৎপ্রাণ মানুষ এই সমাজে বিরল।

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহীত উল আলম বলেন, অতীত সব সময় সামনের দিকে পথ দেখায়। অনেকে মনে করেন অতীতে গেলে সামনের পথ ভুলে যাবে। কিন্তু না। অতীতের রাস্তা হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য টর্চলাইটের মতো। লায়ন প্রফুল্ল রঞ্জন সিংহের পিতা নূতন চন্দ্র সিংহ মেয়েদের জন্য রাউজানের গ্রামের বাড়িতে স্কুল নির্মাণ করেছেন। গ্রামাঞ্চলের মেয়েদের শিক্ষার জন্য তিনি যে অবদান রেখেছেন সেটি স্বীকার করতে হবে। তিনি উদ্যেমী পুরুষ ছিলেন। উদ্যোমী পুরুষরা সব সময় স্বপ্ন দেখেন। যখন যুদ্ধকালীন তাকে হত্যা করা হয়, তখন তার অপরাধ কি ছিলো, তার একমাত্র অপরাধ ছিলো তিনি হিন্দু ছিলেন। নূতন চন্দ্র সিংহের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা আজকের এই বাংলাদেশ পেয়েছি।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক বেনু কুমার দে এবং চট্টগ্রাম লায়ন্স ফাউন্ডেশন ও ইস্টার্ন গ্রুপের চেয়ারম্যান লায়ন মো. নাসির উদ্দিন চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন, কুণ্ডেশ্বরী অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি মনোয়ারা বেগম তামান্না। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন কুণ্ডেশ্বরী অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মার্চেলিনা বিশ্বাস ও রাঁখি সেন। শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম রেল স্টেশনের স্থপতি মোবাশ্বের হোসেনের ইন্তেকাল
পরবর্তী নিবন্ধবিভিন্ন স্থানে শীতবস্ত্র বিতরণ