মানবতার সেবার ব্রত রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট

এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম | সোমবার , ৮ মে, ২০২৩ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

যে সকল মানুষ তাদের ব্যক্তিত্ব, কৃতিত্ব ও কর্মপন্থা দিয়ে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রেখে যেতে সক্ষম হয়েছেন জীন হেনরী ডুনান্ট তাদের মধ্যে অন্যতম। রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা জীন হেনরী ডুনান্ট এর জন্ম ১৮২৮ সালের ৮ই মে সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের রুভারদেইনি নামক স্থানের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। পিতা জীন জ্যাকুয়াস ডুনান্ট ছিলেন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ও একজন সক্রিয় সমাজকর্মী। মা এন্টো ইনেট ডুনান্ট কোলাডনও ছিলেন একজন উদার ও নৈতিক চরিত্রের ধার্মিক মহিলা। ডুনান্টের চরিত্র গঠনে তার মায়ের প্রভাব ছিল অপরিসীম।

জীন হেনরী ডুনান্টের বাল্যশিক্ষা শুরু হয় অন্য শিশুদের তুলনায় বেশ আগে। মানবিক মূল্যবোধের দীক্ষাও নেন অতি অল্প বয়সে। বালক ডুনান্ট ফ্রান্সের সমুদ্র নগরী টুলন ভ্রমণে গিয়ে পরিদর্শন করেন সেখানকার জেলখানা। দেখতে পান বন্দিদের নানা দুর্দশা, অনুভব করেন বন্দিত্বের কষ্ট। সহানুভূতিশীল ডুনান্ট এরপর নিয়মিত জেলখানায় যেতেন এবং বন্দিদের চিঠি লেখা দেয়া সহ বিভিন্ন রকম সাহায্য সহযোগিতা করতেন।

১৮ বছর বয়সে জীন হেনরী ডুনান্ট Geneva Society for Alms Giving নামক একটি সেবা সংগঠনে যোগ দেন। একই বছর বন্ধুদের নিয়ে গঠন করেন Thursday Association নামে একটি সেবা সংস্থা। ব্যাংকিং ব্যবসা শেখার জন্য শিক্ষানবিশ হিসেবে মুদ্রা বিনিময়করী প্রতিষ্ঠান Lullinet Sautterএ যোগ দেন ১৮৪৯ সালে। এর সফল পরিসমাপ্তির পর তিনি একজন ব্যাংকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৮৫২ সালে ৩০শে নভেম্বর প্রতিষ্ঠা করেন Young Men’s Christian Association(YMCA) এর জেনেভা শাখা এবং তারই প্রচেষ্টায় প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় এই সংগঠনের প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলন।

জীন হেনরী ডুনান্ট ১৮৫৩ সালে Colonies Suiss de Setif নামক একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হয়ে আলজেরিয়া, তিউনিশিয়া এবং সিসিলি ভ্রমণ করেন। এই সফরের অভিজ্ঞতা ১৮৫৮ সালে তিনি প্রকাশ করেন তার প্রথম বই “An Account of the Regency in Tunis.” ১৮৫৬ সালে ডুনান্ট ফ্রান্সের উপনিবেশ আলজেরিয়ায় একটি ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু জমির দখল নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতায় কিছুটা বাধাগ্রস্ত হন। তিনি সিদ্ধান্ত নেন ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের সাথে দেখা করে তার সাহায্য কামনা করবেন। পরবর্তীকালে সম্রাটের সাথে দেখা করতে এসে তিনি সলফেরিনো যুদ্ধের বিভীষিকাময় করুণ পরিণতির সম্মুখীন হন। এই যুদ্ধের ভয়াবহ স্মৃতি তুলে ধরে ১৮৬২ সালে ডুনান্ট প্রকাশ করেন তার বিখ্যাত বই “A Memory of Solferino”. এই বইয়ে তিনি বিশ্বের সকল সচেতন নাগরিকের আবেদন জানিয়ে বলেন “আমরা কি পারিনা প্রতিটি দেশে এমন একটি সেবা সংগঠন গঠন করতে যা শত্রুমিত্র নির্বিশেষে সকল যুদ্ধাহতের সেবা করবে?” ডুনান্টের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন সমাজের নানা স্তরের মানুষ। গঠিত হয় আজকের রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের ভিত্তি। অনুষ্ঠিত হয় প্রথম জেনেভা কনভেনশন। সৃষ্টি হয় আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের।

বিশ্ব শান্তি ও মানবিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ১৯০১ সালে Peace League প্রতিষ্ঠাতা ফ্রেডারিক পেসির সাথে যৌথভাবে শান্তির জন্য প্রবর্তিত প্রথম নোবেল পুরস্কারে অলংকৃত করা হয়। এরপর ১৯০৩ সালে হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি তাকে সম্মানজনক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। ১৯১০ সালের ৩০শে অক্টোবর ৮৩ বছর বয়সে লাখো মানুষের বেদনা আর ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে জীন হেনরী ডুনান্ট চলে গেলেন অমৃতলোকে।

যে ভাবে জন্ম হয় রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট : ১৮৫৯ সালের ২৪শে জুন উত্তর ইতালির সলফেরিনো নামক স্থানে ফ্রান্স ও অষ্ট্রিয়ার মধ্যে এক ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে প্রায় চল্লিশ হাজার সৈন্য হতাহত হয়। আহত সৈন্যরা বিনা চিকিৎসায় যুদ্ধক্ষেত্রেই মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। সেই সময় সুইজারল্যান্ডের যুবক জীন হেনরী ডুনান্ট ব্যবসা সংক্রান্ত ব্যাপারে ফ্রান্সের সম্রাট তৃতীয় নেপোলিয়নের সাথে সাক্ষাৎ করতে যাচ্ছিলেন। যুদ্ধক্ষেত্রের এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেথে তিনি ব্যথিত হন এবং তিনি আশপাশের গ্রামবাসীকে ডেকে এনে আহতদের তাৎক্ষণিক সেবা ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাদের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ডুনান্ট এই যুদ্ধের ভয়াবহ ও বিভীষিকাময় স্মৃতি ও তার প্রতিকারের জন্য ১৮৬২ সালে “এ মেমোরি অব সলফেরিনো” নামে একটি বই রচনা করেন। বইটিতে একটি আহবান করেন “আমরা কি পারিনা প্রতিটি দেশে এমন একটি সেবা সংগঠন গঠন করতে যা শত্রুমিত্র নির্বিশেষে সকল যুদ্ধাহতদের সেবা করবে?” ১৮৬৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জ্বীন হেনরী ডুনান্ট চারজন জেনেভাবাসীকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন, যা “কমিটি অফ ফাইভ” নামে পরিচিত। পরবর্তীতে এই কমিটির নাম পরিবর্তিত হয়ে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি নামে পরিচিত হয়। একই বছর এই কমিটি ১৬টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে জেনেভায় আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বান করে। সম্মেলনে ডুনান্টের মহতি প্রস্তাবগুলো গৃহীত হয় এবং তারই পরিপ্রেক্ষিতে রেড ক্রস জন্ম লাভ করে। ১৯৪৮ সালের ৮ই মে রেড ক্রসের প্রতিষ্ঠাতা জীন হেনরী ডুনান্টের জন্ম বার্ষিকীতে সারা বিশ্বে প্রথমবারের মত রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস পালন করা হয়। ১৯৮৪ সাল থেকে দিনটি “বিশ্ব রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস” হিসেবে উদযাপন হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের মূলনীতি : আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের মূলনীতি ৭টি। যথাঃ ১.মানবতা, .পক্ষপাতহীনতা, .নিরপেক্ষতা, .স্বাধীনতা, .স্বেচ্ছামূলক সেবা, .একতা, . সর্বজনীনতা। ১৯৬৫ সালের অক্টোবরে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত ২০তম আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সম্মেলনে রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনের মূলনীতিসমূহ গৃহীত হয় এবং ১৯৮৬ সালে ২৫তম আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সম্মেলনে মূলনীতিসমূহ সংগঠনের সংঘবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি : ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হবার পর সরকারের সহযোগী ত্রাণ সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭২ সালে জেনেভা কনভেনশনে বাংলাদেশ স্বাক্ষর করে। ১৯৭৩ সালের ৩১শে মার্চ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি পিও ২৬ জারি করে। ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটিকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ১৯৭৩ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটিকে ‘আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি’ স্বীকৃতি প্রদান করে। একই সময়ে সোসাইটি তৎকালীন লিগ অব রেড ক্রসের সদস্য পদ লাভ করে। পরবর্তীতে ১৯৮৮ সালের ৪ঠা এপ্রিল রাষ্ট্রপতির আদেশবলে বাংলাদেশ রেড ক্রস সোসাইটির নাম পরিবর্তন করে ‘ বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ’ করা হয়।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর আহত ও অসুস্থ সৈন্যদের সেবাশুশ্রুষা করা, মানুষের দুর্ভোগ লাঘব ও অবস্থার উন্নতি করা, সকল জাতির মধ্যে শান্তি স্থাপন ও তা বজায় রাখা, ঘূর্ণিঝড় ও দুর্যোগকালীন সচেতনতা মূলক বার্তা প্রদান, নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া, ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান ও পুনর্বাসন, স্বাস্থ্যের উন্নতি, রোগ প্রতিরোধ ও উপশমের ব্যবস্থা করা, মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা, নার্সিং ও প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, মাতৃ ও শিশুমঙ্গল প্রতিষ্ঠা পরিচালনা করা, দেশের যুব সমাজকে সুসংগঠিত করা, এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস পরিচালনা করা, হাসপাতালে রোগীদের কল্যাণে নিত্য ব্যবহার্য ও উপহার সামগ্রী সরবরাহ করা, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট আন্দোলনে প্রতিনিধিত্বের মাধ্যমে এর উদ্দেশ্য অর্জন ও বাস্তবায়নে সহায়তা করা, জেলাউপজেলা পর্যায়ের সাথে জাতীয় পর্যায়ের সমন্বয় করা, সোসাইটি কর্তৃক অনুমোদিত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে।

কোভিড১৯ টিকা কার্যক্রমে ৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২১ হতে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক ১৫টি উপজেলায় এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত টিকাদান কেন্দ্র সমূহে যুব স্বেচ্ছাসেবকরা সফলতার সাথে কাজ করেছে। গত ২৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ঠা মার্চ ২০২৩ পর্যন্ত সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজে প্রায় ১৮০০ যুব স্বেচ্ছাসেবকের অংশগ্রহণে ৭ম বিভাগীয় যুব রেড ক্রিসেন্ট ক্যাম্প ২০২৩ চট্টগ্রাম সম্পন্ন হয়েছে।

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট কর্তৃক পরিচালিত প্রকল্প ও কার্যক্রমসমূহ হল: জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মাতৃসদন হাসপাতাল, জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট নাসিং ইনিস্টিটিউট, জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মিডওয়াইফারি ইনিস্টিটিউট, এইচএসবিসি রেড ক্রিসেন্ট থ্যালাসেমিয়া রিসার্চ সেন্টার, ফাতেমা বেগম রেড ক্রিসেন্ট রক্ত কেন্দ্র, জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট প্যাথলজি এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট ডেন্টাল ইউনিট, জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মেডিসিন ও ডায়াবেটিক ইউনিট, জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস, যুব রেড ক্রিসেন্ট কার্যক্রম ও পরিবার পুনঃস্থাপন কার্যক্রম ইত্যাদি। চট্টগ্রাম সিটি ইউনিট কর্তৃক আন্তর্জাতিক রেড ক্রিসেন্ট কমিটির সহযোগিতায় যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে আহত ব্যক্তিদের প্রাথমিক চিকিৎসায় Other Situations of Violence(OSV) কার্যক্রম, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সহযোগিতায় ফিজিওথেরাপি সেন্টার পুনবার্সন কেন্দ্র কার্যক্রম।

পিও ২৬/ ১৯৭৩ অনুযায়ী জেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যানগণ বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জেলা ইউনিটসমূহের পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই পিও অনুযায়ী আমি বিগত ২৮ নভেম্বর হতে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। দায়িত্ব নেয়ার পর গৃহীত কার্যক্রম ইউনিট ও জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালে সমস্যাসমূহ চিহ্নিত করার পর আমি আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা এবং সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছি যার কিছুটা আমি তুলে ধরেছি আমি প্রায় প্রতিদিন হাসপাতালের আউটডোর ও ইনডোর পরিদর্শন করার কারণে হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কাজে গতিশীলতা এসেছে। পরিবেশের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা হয়েছে। হাসপাতালের সকল ড্রেনসমূহ পরিষ্কার করা হয়েছে। সকল প্রকার ক্যাশ লেনদেন বন্ধ করা হয়েছে। সকল লেনদেন চেকের মাধ্যমে সম্পাদন করা হচ্ছে। ১৯৪ জন ডাক্তার, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সার্ভিস বইসমূহ তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন নেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের আলোকে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। জেমিসন রেড ক্রিসেন্ট মিডওয়াইফারী কোর্সের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন প্রণয়ন, পরীক্ষা ও রেজাল্ট জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে সম্পাদন করা হয়েছে। ডাক্তারদের রোস্টার ডিউটি অনুযায়ী হাসাপাতালে উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে টাইম রিডিং মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। গাড়ি জন্য লগ বুকের ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে গাড়ির খরচ বছরে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা সাশ্রয় হবে। হাসপাতালের জন্য জেলা পরিষদ হতে ইতোমধ্যে ৩০ লক্ষ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ওটি ও লেবার রুমের যন্ত্রপাতি মেরামত, গেইট নির্মাণ, গ্রিল স্থাপন, কেবিনসমূহ ও ফ্লোরে ইলেকট্রিক মেরামত, জেনারেটরে ওভার হোলিং করণ, কেবিনসমূহে সেনিটারী মেরামত, কেবিন ও বারান্দায় রংয়ের কাজ, কাঠের দরজা জানালা মেরামত, লোহার পেসেন্ট বেড মেরামত, বেবি কট ও বেড সাইড লকার মেরামত, কেবিনের জন্য বেডশীট, পর্দা, রাবার শীটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ হতে হাসপাতালে রেট্রোফিটিংস এর জন্য ১৪ লক্ষ টাকার প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। হাসপাতালের নতুন ভবনের জায়গার মামলায় মৌজার নামে যে ভুল ছিল তা যথাযথ আদালতের মাধ্যমে সংশোধন করা হয়েছে। এখন নামজারী প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ডাক্তারদের সাথে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। যাবতীয় ক্রয়কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনয়ন করা হয়েছে। সকল সভার আপ্যায়ন ও সম্মানী আপাতত বন্ধ করা হয়েছে। হাসপাতালে সকল বিপদজ্জনক ইলেকট্রিক কানেকশনগুলো পরিবর্তন করা হয়েছে। বিদ্যুৎ বিলের অপচয়রোধে ৪টি পৃথক পৃথক মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। অক্সিজেন পরিবহনের অপচয় রোধ করা হয়েছে। সফটওয়্যার ব্যবহারে বিদ্যমান সমস্যাসমূহ সমাধান করা হয়েছে। হাসপাতালের প্রদত্ত সেবার ক্ষেত্রে সকল প্রকার ডিসকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে। জেনারেটরে তেলের খরচের ক্ষেত্রেও লগ বই ব্যবহার করা হচ্ছে। ২ মাসের বকেয়া বেতন প্রদান করা হয়েছে এবং চলতি মাস হতে নিয়মিত বেতন প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। হাসপাতালের রোগীর সংখ্যা আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দৈনিক হাসপাতালের আয় ব্যয়ের রিপোর্টের প্রচলন করা হয়েছে। প্যাথোলজি বিভাগে খরচ কমানোর মাধ্যমে আয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। সকল ব্যয়ের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান মহোদয়ের অনুমোদন নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সকল ক্রয় কাজে পিপিআর এর আলোকে সম্পাদনের জন্য পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। নতুন ১৪ তলা হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত জায়গার মামলায় মৌজার নাম সংশোধনের বিষয়টি উপযুক্ত আদালতের মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে এবং বর্তমানে নামজারী প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আগামী ডিসেম্ববের মধ্যে ১৪ তলা ভবনের কাজ শুরু করা হবে ইনশাল্লাহ।রেড ক্রিসেন্ট নার্সিং কলেজ, ব্লাড ব্যাংক, থ্যালাসেমিয়া ইউনিট এবং সর্বোপরি নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপন জন্য জঙ্গল সলিমপুর মৌজায় ৫.০০ একর জায়গা বরাদ্দ চেয়ে জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম বরাবরে ইতোমধ্যে আবেদন করা হয়েছে। রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট কোন প্রকার পক্ষপাতিত্ব করে না। অথবা জাতিগত, আদর্শগত, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কোন প্রকার মতবিরোধে সামিল হয় না। এটি মানুষের দুঃখদুর্দশা লাঘব করার জন্য অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে জন্ম লগ্ন থেকেই। এটি একটি মানবসেবী সংগঠন।

লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি,

চট্টগ্রাম জেলা ইউনিট ও জেলা পরিষদ, চট্টগ্রাম।

অনুলিখন: ইস্তাকুল ইসলাম চৌধুরী ইশান, যুব প্রধান, যুব রেড ক্রিসেন্ট, চট্টগ্রাম।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস
পরবর্তী নিবন্ধসিএনজি চালককে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন হাসপাতালে ভর্তি