মানবতার মুক্তির দিশারী ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

| শনিবার , ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

আজকের এ বিশেষ দিনে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে পালিত হচ্ছে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাতের দিন হিসেবে ১২ রবিউল আউয়াল ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এ দিনেই পৃথিবী আলোকিত হয়েছিল সেই মহামানবের আবির্ভাবে, যিনি জ্ঞানের প্রদীপ হাতে নিয়ে মানবজাতিকে অজ্ঞতার আঁধার থেকে মুক্ত করেছিলেন।

প্রতিটি মুসলমানের জীবনে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) পালন একটি বিশেষ ধর্মীয় এবং আধ্যাত্মিক গুরুত্ব বহন করে। এই দিনে আমরা শুধুমাত্র নবীজীর (সা.) জন্মদিন উদযাপন করি না, বরং তার জীবনের প্রতিটি দিক থেকে শিক্ষাগ্রহণ করি, যা মানবতার সেবা, নৈতিকতা, সহমর্মিতা এবং সামাজিক ঐক্যের এক অসামান্য দিক নির্দেশনা। পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদিসের আলোকে নবীজীর (সা.) চরিত্র, কর্ম এবং দর্শন সমকালীন সমাজের জন্য আজও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।

ঈদে মিলাদুন্নবীর মূল উদ্দেশ্য হলো নবীজীর (সা.) প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করা এবং তার জীবনের অনুকরণীয় দৃষ্টান্তগুলোর মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নৈতিকতা স্থাপন করা। ইসলামের ইতিহাসে নবীজী (সা.) একটি এমন চরিত্র যিনি শুধু ধর্মীয় নেতা হিসেবে নয়, বরং মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় ও বৈষম্যবিরোধী সংগ্রামের প্রতীক ছিলেন। তিনি দারিদ্র্য, অনাচার, বৈষম্য ও অবিচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন এবং অসহায় ও দু:খী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বহু বছর ধরে পবিত্র ১২ রবিউল আউয়ালদয়াল নবীজির পবিত্র বেলাদত (শুভাগমন) দিবস উপলক্ষে অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে মিলাদুন্নবী(সা.), জশনেজুলুস, খতমের কোরান, জিকির আজকারসহ বিভিন্ন ইবাদত বন্দেগীর মাধম্যে এ দিনটি পালন করে আসছে। উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এসব অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হুজুর (সা.)-এর প্রতি যথাযোগ্য সম্মান, দরুদ ও সালাম পেশ করা অতি উত্তম ইবাদত।

ন্যায়নিষ্ঠা, সততা ও সত্যবাদিতার জন্য হজরত মুহাম্মদ (সা.) নবুয়তপ্রাপ্তির আগেই খ্যাতি অর্জন করেছিলেন ‘আলআমিননামে। ধর্মসম্প্রদায়নির্বিশেষে সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিক গুণাবলি হিসেবে এসব সদ্‌গুণ সব কালে, সব দেশেই স্বীকৃত। আরব ভূখণ্ডের পুরো অঞ্চলটি যখন অশিক্ষা, কুসংস্কার, গোষ্ঠীগত হানাহানি, দাসপ্রথা, নারীর প্রতি চরম বৈষম্যসহ নানা রকম সামাজিক অনাচারে নিমজ্জিত ছিল। হজরত মুহাম্মদ (সা.) সেই ঘোর অন্ধকার সময়ে আবির্ভূত হন আলোর দিশারী হয়ে। অন্যায়অবিচারঅজ্ঞানতার আঁধার থেকে মানুষকে তিনি সত্য ও ন্যায়ের আলোকিত পথ দেখান।

সার্বিক অর্থে মানবজাতির মুক্তি ও কল্যাণের জন্যই আবির্ভাব ঘটেছিল এই মহামানবের। তাঁর সত্য ও ন্যায়ের আদর্শ ছিল সর্বমানবিক। তাঁর সুমহান জীবনাদর্শ থেকে মানুষের প্রতি সর্বোত্তম ব্যবহার, বিনয়ী চরিত্র, বিনম্র ব্যক্তিত্ব, আনুগত্যতা, সহযোগিতা ও পারস্পরিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনসেবা ও মানবকল্যাণ সুনিশ্চিত করাই হোক পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবীর শিক্ষা। তাই পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করে সেই মহান রবের নিয়ামত প্রিয় নবীকে স্মরণ করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মধ্যেই রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের মুক্তির পথ ও পাথেয়।

মুসলিম বিশ্বের প্রতিটি দেশের মুসলমানদের মতো বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও আজ যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করছে। বাংলাদেশের অন্তবর্তীকালীন সরকার এ দিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনে ইসলামী ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানদের নির্দেশনার মধ্যদিয়ে সরকারিভাবে পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) শুধু একটি ধর্মীয় স্মৃতিতেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি মানবিক মূল্যবোধ, নৈতিক শিক্ষা এবং সামাজিক সচেতনতার এক মহৎ উদযাপন। প্রতিটি মুসলিমকে উচিত, নবীজীর জীবনের অনুকরণে নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে সমৃদ্ধ করা এবং সমাজের কল্যাণে কাজ করা। নবীজীর (সা.) প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং তাঁর শিক্ষা অনুশীলন, আমাদের সমাজকে আরও মানবিক, ন্যায়পরায়ণ এবং শান্তিপূর্ণ করে তুলতে সাহায্য করবে। শেষ পর্যন্ত বলা যায়, ঈদে মিলাদুন্নবী আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, প্রতিটি মানুষের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত মানবতার সেবা, নৈতিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা। নবীজীর (সা.) জীবন ও শিক্ষা আমাদের জন্য এক চিরন্তন আলোকবর্তিকা, যা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে আলো ছড়াতে সাহায্য করে। আনন্দঘন এ দিনে আমরা প্রার্থনা করি, মহানবী (সা.)-এর শান্তি, মিলন ও ভ্রাতৃত্বের জীবনাদর্শই হোক আমাদের জীবনের একমাত্র পাথেয়। আমরা যেন তাঁর জীবনাদর্শ অনুসরণ করেই সব ধরনের অন্যায়অবিচার থেকে মুক্তি পেতে পারি। জাতিতেজাতিতে ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মিলেমিশে বসবাস করতে পারি। বিভিন্ন অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সংস্কারের মধ্যদিয়ে একটি বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যেতে পারি। শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়, আমরা যেন নবীজীর আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করি এবং এবং সমাজে তার বার্তাকে জীবন্ত রাখার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে