আহলে বায়তপ্রেমী মানুষের উচ্ছ্বাসমুখর উপস্থিতিতে দেশ ও বিশ্ববাসীর ওপর আল্লাহর রহমত কামনায় মুনাজাত এবং বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও হানাহানি সংঘাত থামাতে বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের জাগরণের আহবান জানানোর মধ্য দিয়ে নগরীর জমিয়তুল ফালাহর ১০ দিনব্যাপী ৩৭ তম আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিল গত ৯ আগস্ট শেষ হয়েছে। আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) ত্যাগ ও কীর্তিগাথা সকল স্তরের পাঠ্যপুস্তকে সংযোজন, যুব তরুণদের অবক্ষয় ও বিপথগামিতা রোধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হয় শাহাদাতে কারবালা মাহফিলে। শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের আয়োজনে শেষ দিনের মাহফিলে দেশি-বিদেশি আলোচক ও বক্তারা বলেছেন, কারবালা ময়দানে ইয়াজিদি নৃশংসতার কবর রচিত হলেও এখনো দেশে দেশে ইয়াজিদি প্রেতাত্মা রয়ে গেছে। শক্তিধর দেশগুলোর প্রতাপশালী শাসকরা আজ দুর্বল ছোট্ট দেশগুলোর দিকে অস্ত্র তাক করে যুদ্ধের হুঙ্কার ছেড়ে জঘন্য বর্বরতা-নির্দয়তা দেখাচ্ছে। নিষ্ঠুর শাসকদের দম্ভ চুরমার করে দেয়া, গণবিরোধী দুঃশাসন রুখে দেয়া এবং অধিকার বঞ্চিত মজলুম মানবতার পাশে দাঁড়ানোই হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ও শাহাদাতে কারবালার দর্শন ও শিক্ষা। মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন মাইজভাণ্ডার দরবারের সাজ্জাদানশীন মাওলানা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ আলহাসানী (মজিআ)। প্রধান অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
রাতে বাদে এশা দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন, সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। বিদেশি আলোচক ছিলেন, সৈয়দ আবদুল কাদের জিলানি (রা.) এর আওলাদ শাহসুফি সৈয়দ আফিফ আবদুল কাদের মনসুর আল জিলানি আলবাগদাদি। তিনি বলেন, আহলে বায়তে রাসূলের (দ.) মর্যাদা সমুন্নত করেছেন স্বয়ং আল্লাহপাক। আল্লামা সৈয়দ আফিফ জিলানী বলেন, নামাজে দরুদে আমরা প্রিয় নবী (দ.) ও আওলাদে রাসুলের (দ.) স্মরণ করি। তাঁদের স্মরণ ছাড়া কোনো ইবাদতই আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে না।
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য, প্রিয় নবী (দ.) ও আহলে বায়তে রাসূলের (দ) সন্তুষ্টি অর্জনই আমাদের লক্ষ্য। আল্লামা জালাল উদ্দিন আলকাদেরী (রহ.) এ মাহফিলের সূচনার মাধ্যমে সদকায়ে জারিয়া তথা প্রবহমান পুণ্যের ধারা রেখে গেছেন। এজন্য যুগে যুগে তিনি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
প্রধান অতিথি শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, দ্বীন ইসলামের মূলধারাই হচ্ছে সুন্নিয়ত। সুন্নিয়তের ওপর আমরা প্রতিষ্ঠিত। সুন্নিয়ত ব্যতীত ইসলামের ভিত্তি থাকতে পারে না। জশনে জুলুস ও কারবালা মাহফিল আমাদের ধর্মীয় ঐতিহ্য। দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আল্লাহকে পেতে হলে প্রিয় নবী (দ) ও আহলে বায়তের প্রেম অন্তরে ধারণ করতে হবে। আলোচনা করেন জমিয়তুল ফালাহর খতিব আল্লামা সৈয়দ আবু তালেব মুহাম্মদ আলাউদ্দিন আলকাদেরী, অধ্যক্ষ ড. এ কে এম মাহাবুবুর রহমান। কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন ক্বারী শায়খ আহমদ নায়না (মিশর) ও আহমদ বিন ইউসুফ আল আজহারী। ধন্যবাদ বক্তব্য দেন, মাহফিলের প্রধান সমন্বয়কারী মুহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ। মাহফিল সঞ্চালনায় ছিলেন ড. মাওলানা জাফর উল্লাহ। মাহফিলে অতিথি ছিলেন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, আল্লামা জালালুদ্দিন আলকাদেরীর (রহ.) সন্তান ব্যারিস্টার আবু সাঈদ মুহাম্মদ কাশেম ও আবু সাঈদ মুহাম্মদ হামেদ, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার উপাধ্যক্ষ ড. মাওলানা আবু তৈয়ব মুহাম্মদ লেয়াকত আলী, বিজিএমএর সাবেক সভাপতি এস এম আবু তৈয়ব। মিলাদ কিয়াম শেষে দেশ ও বিশ্ববাসীর শান্তি-সমৃদ্ধি-কল্যাণ এবং বিশ্বের মজলুম মানবতার পরিত্রাণ কামনায় মুনাজাত করা হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।