অতি দুর্লভ মনুষ্য জীবন। অন্যান্য জীবের মধ্যে একমাত্র মানুষের বুদ্ধিদীপ্ত জ্ঞান ও মনের ভাব প্রকাশের শ্রুতিমধুর মুখের ভাষা রয়েছে। মানুষের মধ্যে আবেগ, অনুভূতি, উদারতা, মনুষ্যবোধ ও মানবতার গুণরাশি বিদ্যমান। মানুষ সর্বদা ভালো কাজের মাধ্যমে নিজের ক্ষুদ্র জীবনকে আলোকিত করতে চায়।মানুষ তার নিজস্ব মেধা–মনন–চিন্তনে সদা সর্বত্র উন্নত মানসিকতার আত্ম–পরহিতে কল্যাণমূলক কাজ করে দুর্লভ মানবজীবনকে সার্থক করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকে। কবি কামিনী রায়ের কবিতায় লাইনে বলি, আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে/ আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে,/ সকলের তরে সকলে আমরা / প্রত্যেকে মোরা পরের তরে”।
মানুষ সামাজিক জীব। মানুষের জীবন কখনো সমান্তরালভাবে চলমান থাকে না। সবসময় জোয়ার ভাটার মতো সুখ দুঃখেরও পালাবদল ঘটে। আমরা কেহ জানিনা কালকের দিনটা কেমন হবে! তাইতো বলা হয়, আজ মরি কি কাল মরি, মরণের কি আছে কাল, তৈরি থাকো সর্বকাল, এমন মৃত্যু চিন্তায় যেন করি সর্বক্ষণ। জীবন সবর্দা পরিবর্তনশীল। বর্তমানকে সঠিকভাবে জানতে, যে কোন কঠিন মুহূর্তে জ্ঞান দ্বারা বিবেচনা করে ধৈর্য্য ধারণ করা। বিচলিত না হয়ে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়া। মানবসমাজের কর্তব্য যে কোন ক্রান্তিলগ্নে রোগ, শোক, অভাব, অভিযোগ, দুঃখ, দুর্দশা, সংকট, দুর্যোগ, বিপর্যয় ও নানাবিধ কষ্টে মানুষের পাশে আশার বাতিঘর হয়ে মানবতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। মানব সমাজের মহত্ব ও মমত্ববোধে মানবপ্রাচীর হয়ে ভুক্তভোগী মানুষের মনোবল চাঙ্গা করে ক্ষণিকসময়ে মানুষের মুখে স্বর্গীয় হাসি ফোটানোর আন্তরিক প্রচেষ্টাই হলো মানুষের প্রতি মানুষের প্রকৃত ভালোবাসা ও সহমর্মিতা। তাইতো মাদার তেরেসা সূদুর যুগোস্লাভিয়া থেকে কলকাতায় এসে মানবতার মূর্ত প্রতীক হয়ে সমগ্র মানবজাতির শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মনকে জয় করেছেন।
মায়ানমার ও থাইল্যান্ডে ২৮শে মার্চ প্রাকৃতিক বিপর্যয় স্মরণাতীত কালের ৭.৭ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্পে সাজানো গোছানো পরিপাটি শহর মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হলো সমাধিস্থলে। কে জানতো সুখের সংসার বিলীন হয়ে প্রিয়জনের লাশ ধ্বংসস্তুপে চাপা পড়বে আর খোলা আকাশের নীচে বিনিদ্র রাত যাপন করতে হবে! প্রকৃতির শক্তির কাছে বিজ্ঞানও অচল। ভবিষ্যৎ জানি না কেউ, যে কোন মুহূর্তে মানবজীবন দুর্বিষহ যন্ত্রণায় পতিত হতে পারে। তাই অহং বা মান ত্যাগ করে সহজ সরল সাধারণ জীবনের অভিমুখে পথ চলতে শিখি, আর মানুষের উপকার করতে না পারি, অপকার যেন না করি এই হোক প্রকৃত শিক্ষা।
মানুষের এমন কঠিন বেদনার্ত দুঃসময়ে সমবেদনা জানানোর সাথে সাথে সার্মথ্য অনুসারে সহযোগিতার হাত প্রসারিত হওয়া মানবধর্মের দায়িত্ব। চলুন আমরা প্রত্যেকে করুণাভরে তাদের অন্তর্জগতের চলমান ভূকম্পনের মতো ব্যথাতুর হার্টবিট অনুভব করার চেষ্টা করি। আমরা নিজেদের মাসিক খরচকে সংকুচিত করে নিজের খাবারকে শেয়ার করার মতো বা অতিথি সেবার মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করুণায় ভঙ্গুর জনপদকে ঘুরে দাঁড়াতে আন্তরিক হই। নিঃসন্দেহে সবার সম্মিলিত আলো মশাল হয়ে অন্ধকার দূরীকরণে আলোকবর্তিকা হয়ে প্রকৃত ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। মানবকল্যাণে এগিয়ে আসুন, মানুষের মমত্ববোধ ও ভালোবাসার জয় হোক। আসুন ভালোবাসায় একে অপরের হাতটা ধরি, মানুষের সুখে সুখী হই, দুঃখে দুঃখী হই। ভালোবাসা একমাত্র ভালোবাসা দিয়ে বিশ্ব গড়ি, বিশ্বপ্রেমে মানবজীবন সুখ শান্তিতে ভরে উঠুক। আর কোন ধ্বংস নয় সৃষ্টি সুখের হোক– মানবপ্রেমের জয় হোক সর্বত্রই।