চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্বোধনে অভিভূত চট্টগ্রামবাসী। চট্টগ্রামে পলোগ্রাউন্ডের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর চাটগাঁইয়া উচ্চারণে মুগ্ধ সবাই। তিনি বলেন, ‘অনরা ক্যান আছন? বেয়াগুন গম আছন নি? তোঁয়ারাল্লাই আঁর পেট পোড়ের। এতল্লাই চাইতাম আস্যি।’ রোববার (৪ ডিসেম্বর) বিকালে চট্টগ্রাম নগরের পলোগ্রাউন্ড মাঠে আয়োজিত এক জনসভায় চট্টগ্রামের ভাঙা ভাঙা ভাষায় জনসভায় জড়ো হওয়া মানুষকে স্বাগত জানান আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রামের ভাষায় স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য শুরু করায় আমরা অনুভব করার চেষ্টা করি চট্টগ্রামের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা।
প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম সফরে চট্টগ্রামবাসী কী পেয়েছেন, কী পান নি, সেটা হিসেবের জন্য না বসে আঞ্চলিক ভাষায় তাঁর স্বাগত জানানোর প্রক্রিয়া ও ভঙ্গির জন্য তাঁকে আমরা অভিনন্দিত করছি। তিনি বক্তব্যের শুরুতে ২৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এ ছাড়া আরও চারটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চট্টগ্রাম আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। তাই আমি চট্টগ্রামের কথা সব সময় মনে করি। চট্টগ্রামের উন্নয়নে আমরা সব সময় কাজ করে যাচ্ছি। আমরা উন্নয়ন করি। মানুষের কল্যাণে কাজ করি। চট্টগ্রামে আজ ২৯ প্রকল্পের উদ্বোধন ও চার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। আমি এ প্রকল্পগুলো চট্টগ্রামবাসীকে উপহার দিয়ে গেলাম।
উদ্বোধন করা প্রকল্পের নাম তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জনগণের টাকা মেরে খাই না। আমরা চাই জনগণ আর দেশের উন্নতি। চট্টগ্রামকে এগিয়ে নিতে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলায় হালদা নদী ও ধুরং খালের তীর সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, সন্দ্বীপ উপজেলার ৭২ নম্বর পোল্ডারের ভাঙনপ্রবণ এলাকায় স্লোপ প্রতিরক্ষা কাজের মাধ্যমে পুনর্বাসন প্রকল্প ও বাঁশখালী উপজেলায় পোল্ডারের সমন্বয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অংশের স্থায়ী পুনর্বাসন প্রকল্প উদ্বোধন করলাম।শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই আমাদের সন্তানরা লেখাপড়ায় এগিয়ে যাক। তারা মানুষের মত মানুষ হয়ে দেশের কল্যাণে ভূমিকা রাখবে। তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় কিছু প্রকল্প আমরা আজ উদ্বোধন করে দিয়েছি। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে সীতাকুণ্ড টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ফটিকছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং রাউজান টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবন নির্মাণ। চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানাধীন দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসার একটি ছয়তলা ভবন এবং সীতাকুণ্ড টেকনিক্যাল স্কুলের একটি পাঁচতলা ভবন ও একটি চারতলা প্রশাসনিক ভবন, ওয়ার্কশপ, একতলা সার্ভিস এরিয়া ভবন নির্মাণকাজ শুরু হবে।
বিপ্লবতীর্থ চট্টগ্রাম সবকিছুতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে ইতিহাসের অংশ হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের গৌরবময় ভূমিকা রয়েছে। আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে উল্লেখ করতে পারি, পাকিস্তান কারাগার থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্ত হয়ে ফিরে এসে এই ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসমুদ্রে চট্টগ্রামবাসীকে সম্ভাষণ জানাতে এসেছিলেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে চট্টগ্রামের উন্নয়নের যে স্বপ্নের সংযোগ স্থাপন করেছেন; তার প্রায়োগিক বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ঐতিহাসিক বিজয় দিবসকে সামনে রেখে আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রস্তুতির দিকনির্দেশনা দেন এই জনসভায়।
চট্টগ্রামকে অনন্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর নেতৃত্বে অদম্য অগ্রগতিতে এগিয়ে যাওয়া বর্তমান সরকার হাজার হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ-সম্পাদন করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন-বন্দর-ওয়াসা-রেলওয়ে-সিডিএ-পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত এসব কর্মযজ্ঞে বদলে যাচ্ছে চট্টগ্রামের দৃশপট। ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেলে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন ও এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কে সংযুক্তির উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল।
ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী আজাদীতে প্রকাশিত এক লেখায় বলেছেন, আমাদের সকলের জানা, সমুদ্রপথে কনটেইনারে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ৯৮ শতাংশ হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আমদানি-রপ্তানি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা অর্জনে বর্তমান সরকারের গৃহীত মেগা প্রকল্পের মধ্যে প্রণিধানযোগ্য হচ্ছে; পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল (পিসিটি), গভীর সমুদ্র বন্দর, পতেঙ্গা-হালিশহর উপকূলে বে-টার্মিনাল নির্মাণ ইত্যাদি।… তৈরি পোশাক খাতসহ সকল বৈদেশিক বাণিজ্য আন্তর্জাতিকভাবে সুদৃঢ় করতে পণ্য আমদানি-রপ্তানির ব্যয় ও সময় কমাতে দেশের ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা কঙবাজারের মহেশখালী দ্বীপের মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন যা চলমান মেগা প্রকল্প সমূহের অন্যতম। এভাবেই প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে দিয়ে যাবেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন-সেটাই প্রত্যাশা করেন চট্টগ্রামবাসী।