স্কুলে নিচু ক্লাসে পড়বার সময় অঙ্কের স্যার যখন আমাকে অপদার্থ বলতেন তখন মানে খুব লাগতো। অপমানে রাতে ভালো ঘুম হতো না। হতে পারে একবার আমি অঙ্কে শূন্য পেয়েছিলাম। কিন্তু সবসময়তো আর পাইনি। বিজ্ঞানের স্যার বলেছেন পদার্থ তিন প্রকার। কঠিন, তরল ও বায়বীয়। আমি কি তবে এই তিনটির একটির মধ্যেও নেই? বাংলার স্যার আমাকে খুব পছন্দ করতেন। অন্যান্য ছাত্রদের কাছে আমার রচনার প্রশংসা করতেন। একবার আমি ‘তোমার জীবনের লক্ষ্য’ রচনায় লিখলাম, আমার জীবনের লক্ষ্য পদার্থ হওয়া। বাংলার স্যার আমাকে ডেকে বললেন, তুমি যে এতো অপদার্থ তা আমি ভাবতেই পারিনি। কথাটা বলেছেন বাংলার স্যার, তাই এটা আমার মানে খুব লেগেছিল। সারারাত আমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছিলাম।
ঘরের পোষা কুকুরটা যখন পাড়ার কোনো কুকুরের সাথে মারামারি করে হেরে যেতো তখন মনে হতো আমিই হারলাম। এই হারাটা আমার জন্যে ছিলো অপমানকর। মোরগের লড়াই দেখে মজা পেতাম। এখনো পাই। আমাদের লড়াকু মোরগটা লড়াইয়ে সব সময় জিততো। একবার পাড়ার একটা তরুণ মোরগের কাছে হেরে গেলা। এটা আমার মানে লাগলো। বিশ্বসেরা বক্সার মোহাম্মদ আলী একবার বক্সিং এ জো ফ্রেজিয়ার–এর কাছে হেরে গেলেন। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলাম। আমার মানে লেগেছিলো।
আমাদের গ্রামের বাড়িতে রান্না ঘরের পাশে একটা মানকচু গাছ আপনা আপনি জন্মেছিলো। মা প্রায়ই মানকচু গাছটির গোড়ায় ছাই ঢালতেন। ছাই মান কচুর অন্যতম খাদ্য। এই খাদ্যটির গুণে মানকচু গাছটি স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠলো। গ্রামের মানুষ আমাদের এই দৃষ্টিনন্দন গাছটি দেখতে আসতো। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা খবরটা পেয়ে গাছটি দেখতে আসলেন। তাঁরা কৃষিমেলায় আমাদের মানকচুটি প্রদর্শনী হিসাবে রাখলেন। দর্শক এই বৃহৎ আকারের মানকচুটি দেখে অবাক হয়ে গেলো। আমরা পুরস্কারও পেলাম। এতে আমাদের পরিবারের মান বাড়লো।
মান মাপবার যন্ত্র থাকলে ভালো হতো। মেপে বুঝতে পারতাম আমার মান কতটুকু। মাঝে মাঝে খবরের কাগজে মানহানির মামলার খবর দেখি। যাঁরা মামলা ঠুকেন তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ মানহানির জন্যে কোটি টাকার উপরে টাকা দাবি করেন। জানি না টাকার অঙ্কে আমার মান কতটুকু।