মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে এগারো জুলাই হতে ঢাকা প্রেসক্লাবের সামনে মাধ্যমিক শিক্ষকরা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করতে শিক্ষকদের এই কর্মসূচি পালন করার বিকল্প নেই বলে তারা দাবি করছেন। জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে শিক্ষকদের উপচে পড়া ভীড় চোখে পড়ার মতো। সারাদেশ থেকে প্রায় দু‘লক্ষাধিক শিক্ষক এতে অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) সভাপতি অধ্যক্ষ বজলুর রহমানের ভাষ্যমতে, তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরে যাবেন না। শিক্ষকদের ভাষ্যমতে, দীর্ঘদিনের বৈষম্য হতে মুক্তির জন্য তারা এই আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন। ২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ণের পর শিক্ষকরা আশাবাদী ছিলো কিন্তু ২০২৩ সালে এসে আদৌ তা আলোর মুখ দেখেনি। শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন হলে এদেশে শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হতো। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩৬০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন। ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৬০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন। এদিকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে আদৌ সরকার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি কিন্তু স্মার্ট শিক্ষকও আমাদের প্রয়োজন সেটা আমরা বেমালুম ভুলে যাচ্ছি। টেকসই উন্নয়নের জন্য স্মার্ট শিক্ষক ও কিন্তু আমাদের প্রয়োজন যেটা ছাড়া আদৌ দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে শুধু শিক্ষকরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন তা নয় এতে করে শিক্ষার্থীদের মাঝে ও বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থী ২০/২৫ টাকা বেতনে পড়ার সুযোগ পাচ্ছে সেখানে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী পড়ছে ২৫০/৩০০ টাকা বেতন দিয়ে। ক্ষেত্র বিশেষে কোনো কোনো বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫০০/১০০০ টাকা বেতন ও নিচ্ছে। গ্রামীণ খেটে খাওয়া পরিবারের একজন শিক্ষার্থীর জন্য মাসিক বেতন ২৫০/৩০০ টাকা দেয়া অনেক কষ্টকর যেটা জাতীয়করণ করলে হবে ২০/২৫ টাকা। সুতরাং চোখ বন্ধ করে বলা চলে, মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ অতি আবশ্যক। আরেকটা বিষয় খেয়াল করলে দেখা যায়, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা অবসরে যাওয়ার তিন থেকে পাঁচ বছরেও তাদের অবসর ভাতা পান না। অবসর ভাতা পেতে শিক্ষকদের অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই কারিকুলাম, একই সিলেবাস, এবং উত্তর পত্র মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও কোনো বৈষম্য নেই, শুধুমাত্র বেতন ভাতার ক্ষেত্রেই বিরাট বৈষম্য যেটা অবাক করার মতো। পুরো দেশের বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকগণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছেন। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের ফলে শিক্ষকদের মধ্যে যেমন বৈষম্য দূর হবে তেমনি শিক্ষার্থীদের মাঝে ও বেতন বৈষম্য দূর হবে।