মাধ্যমিকে বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই পরের ক্লাসে সবাই

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নভেম্বরেও খুলছে না আগামী বছর এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা যথাসময়ে

আজাদী ডেস্ক | বৃহস্পতিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২০ at ৯:০০ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এবার বার্ষিক পরীক্ষা না নিয়েই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ওপরের শ্রেণিতে তোলা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। পাশাপাশি আগামী নভেম্বর মাসেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে না বলে ধারণা দিয়েছেন তিনি। গতকাল বুধবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, এবার যে পরিস্থিতি, কোনো বার্ষিক পরীক্ষা হচ্ছে না। তবে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ঘাটতি পূরণের জন্য ৩০ কর্মদিবসে শেষ করা যায় এমন একটি সিলেবাস এনসিটিবি প্রণয়ন করেছে। ওই সিলেবাসের আলোকে শিক্ষার্থীদের প্রতি সপ্তাহে একটি করে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে। সেই অ্যাসাইনমেন্টের মূল্যায়ন করে শিক্ষার্থীদের ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তী ক্লাসে তা পূরণের চেষ্টা করা হবে। শিক্ষার্থীদের পরের ক্লাসে ওঠার ক্ষেত্রে অ্যাসাইনমেন্টের মূল্যায়নের যে কোনো প্রভাব থাকবে না, তা স্পষ্ট করে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, এই মূল্যায়নটার মাধ্যমে যেন কোনো চাপ সৃষ্টি করা না হয়। এই মূল্যায়ন শুধুমাত্র আমাদের বোঝার জন্য যে শিক্ষার্থীদের কোথায় কোথায় দুর্বলতা আছে, সেগুলো পরের ক্লাসে কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা করব।
নভেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে না, সেই আভাস দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত যে অবস্থা তাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে যেখানে খুলেছিল অধিকাংশ জায়গায় সেখানে বন্ধ করার পর্যায়ে আছে। আমরা যখন মনে করব যে আমাদের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই বা খুবই সামান্য, হয়তো বা যে রিস্কটুকু নেওয়া সম্ভব, সে রকম একটা অবস্থায় যদি যায়, তখন আমরা খুলতে পারব। সেটি কবে হবে সেটি আমাদের কারো পক্ষেই এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি না হওয়ায় এবার পঞ্চম ও অষ্টমের সমাপনী পরীক্ষা যে হবে না, সে কথা সরকার আগেই জানিয়েছিল। আর এইচএসসি পরীক্ষা না নিয়ে অষ্টমের সমাপনী এবং এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা হবে বলেও ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। তবে আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি এবং এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার আগ্রহের কথা জানিয়ে সেজন্য শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আমি বলব, যাদের সামনের বছর এসএসসি ও এইচএসসি আছে, তারা অবশ্য অবশ্যই নিজেরা নিজেদের সবার কাছে বই আছে, যতদূর সম্ভব অনলাইনে অ্যাকসেস করবেন। সমস্ত ক্লাসগুলো আছে আপনারা আপনাদের পড়াশোনাগুলো চালিয়ে যান। কারণ পরীক্ষা যদি কিছুদিন পরেও হয়, সময়মত হয়ত করার আমরা চেষ্টা করব, সময়মত হলে তো হলই, না হলে যদি কিছুদিন পরেও হয় তাহলেও কিন্তু পরীক্ষা হবে। সেক্ষেত্রে আপনাদের প্রস্তুতিটি ভালোভাবে নিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
সমাপনী সনদ পাবে অষ্টমের শিক্ষার্থীরা : এবার জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষা না হলেও অষ্টম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে সমাপনী সনদ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সনদ ও বৃত্তির বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত পরে জানিয়ে দেব।
বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য- এই তিন বিভাগের মধ্যে কে কোন বিভাগে ভর্তি হবে সেই সিদ্ধান্ত অষ্টম শ্রেণি পাস করে নিতে হয়। এনিয়ে এক প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অভিভাবক এবং শিক্ষকরা দেখছেন তাদের অ্যাসেসমেন্ট। তারা যে বিভাগে যেতে চাইবে সেভাবে দেওয়া হবে। তারপরও সমস্যা দেখা দিলে খুব বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত না হলেই ভালো। শিক্ষার্থীরা যেন যতেটা সম্ভব লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেন।
অভিভাবকদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করুন : করোনার কারণে চাকরি হারানো বা আয়-রোজগার কমে যাওয়া অভিভাবকদের সন্তানদের টিউশন ফির বিষয়ে মানবিক হতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। যারা চাকরি হারিয়েছেন বা আয়-রোজগার হারিয়েছেন, তাদের যতটা সম্ভব ছাড় দেওয়া বা কিস্তিতে পরিশোধ করার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বারবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বলেছি, অভিভাবকদেরও বলেছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে, তার মানে এই নয় যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খরচ বন্ধ আছে। কারণ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি দিতে হচ্ছে। বেসরকারি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুধু হয়তো প্রতিদিনকার বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল লাগছে না। কিন্তু আরও বহু খরচ তাদের লাগছে। সবাই যেহেতু অনলাইনে ক্লাস করাচ্ছে সেক্ষেত্রেও তাদের অতিরিক্ত কিছু খরচ হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও চলতে হবে। কোনো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষার্থীর জন্য কিন্তু একটা বিরাট সমস্যা তৈরি হবে। এরকম বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হলে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর সমস্যা হবে। কাজেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও চালু রাখতে হবে, শিক্ষকদেরও জীবন-জীবিকা চালিয়ে নিতে হবে। তাদেরও তো পরিবার রয়েছে, তাদেরও তো আয়-রোজগারের বিষয়টি রয়েছে। তাই দুপক্ষকেই বিষয়টি মানবিক ভাবে দেখতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও চালু রাখতে হবে, আমাদের শিক্ষকদেরও জীবন-জীবিকার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। কাজেই ঢালাওভাবে বেতন বাদ দিয়ে দেওয়া বা এখন বেতন দেওয়া হবে না, এ জাতীয় কোনো সিদ্ধান্ত একেবারেই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফরম পূরণের কিছু টাকা ফেরত পাবে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা
পরবর্তী নিবন্ধরেলের ১৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন