মাদুরোর অনেক অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন- ট্রাম্প

ভেনেজুয়েলার নৌকায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা আইনসঙ্গত : হোয়াইট হাউজ

| বুধবার , ৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৫:২০ পূর্বাহ্ণ

মাদক বহনের অভিযোগে ভেনেজুয়েলার নৌকায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে বৈধ আখ্যা দিয়েছে হোয়াইট হাউজ। এর মধ্য দিয়ে হোয়াইট হাউজ গত সেপ্টেম্বরে অ্যাডমিরাল ফ্র্যাংক ব্র্যাডলির সিদ্ধান্তের পক্ষেই সাফাই গাইল। খবর বিডিনিউজের।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর অনেক অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছেন, গত মাসে এক সংক্ষিপ্ত ফোন কলে এ ঘটনা ঘটেছে। আর তারপর থেকে ভেনেজুয়েলার নেতার সামনে পদত্যাগ ও মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তার অধীনে দেশত্যাগ করা ছাড়া অন্য বিকল্পগুলো ফুরিয়ে এসেছে বলে বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞাত চারটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে।

ওই সময় মাদক চোরাচালানের অভিযোগে ভেনেজুয়েলার একটি নৌকা লক্ষ্য করে একাধিক হামলার আদেশ দিয়েছিলেন মার্কিন নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল ফ্রাঙ্ক ব্র্যাডলি। সোমবার ওই হামলার সাফাই গেয়ে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট বলেছেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ অভিযানের অনুমোদন দিয়েছিলেন। কয়েক মাস ধরে ভেনেজুয়েলার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপের পর ২১ নভেম্বর টেলিফোনে দুই নেতার মধ্যে ১৫ মিনিট ধরে ওই কথোপথকন হয়।

তিনটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ফোনে মাদুরো ট্রাম্পকে বলেন, তিনি ভেনেজুয়েলা ত্যাগ করবেন, যদি তাকে ও তার পরিবারের সদস্যদের পূর্ণ আইনি ক্ষমা মঞ্জুর করা হয়, এর সঙ্গে সব মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং আন্তর্জাতিক আদালতে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নেওয়া হয়। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ভেনেজুয়েলার ওই নৌকায় প্রথম হামলায় বেঁচে যাওয়া দুজনকে হত্যা করতে দ্বিতীয় দফায় হামলা করা হয়েছিল হেগসেথের নির্দেশ মেনে, লক্ষ্য ছিল কাউকে জীবিত না রাখা। রোববার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি দ্বিতীয় দফা হামলা চাইতেন না এবং হেগসেথও এমন নির্দেশ দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

তবে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র লেভিট সোমবার জানান, ২ সেপ্টেম্বরের হামলার জন্য হেগসেথ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্র্যাডলিকে অনুমতি দিয়েছিলেন। এর পাশাপাশি তিনি ভেনেজুয়েলার শতাধিক সরকারি কর্মকর্তার ওপর থেকেও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেন। এই কর্মকর্তাদের অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার লঙ্ঘন, মাদক পাচার ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। তার ভাষায়, অ্যাডমিরাল ব্র্যাডলি নিজের তার এখতিয়ার ও কর্তৃত্বের মধ্যে থেকেই নৌকা ধ্বংস এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুমকি দূর করতে হামলা পরিচালনা করেছেন। তিনি আরও দাবি করেন, আন্তর্জাতিক জলসীমায় আত্মরক্ষার জন্যই আঘাত হানা হয় এবং তা আন্তর্জাতিক যুদ্ধবিধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় সাগর ও লাতিন আমেরিকার প্রশান্ত উপকূলজুড়ে অন্তত ১৯টি হামলা চালিয়েছে, যাতে ৭৬ জন নিহত হয়েছেন।

আইন বিশেষজ্ঞ ও কিছু রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতাও এসব হামলার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী, বিপর্যস্ত বা পানিতে ভাসমান মানুষকে আক্রমণ করা নিষিদ্ধ। জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাপক লরা ডিকিনসন বলেন, বেশিরভাগ আইনি মত অনুযায়ী এই হামলাগুলোকে সশস্ত্র সংঘাত হিসেবে ধরা যায় না, ফলে প্রাণঘাতী শক্তি ব্যবহার শেষ অবলম্বন ছাড়া বৈধ নয়। তার মন্তব্য, সশস্ত্র সংঘাতের বাইরে হলে এটি হত্যা হিসেবে গণ্য হবে। আর যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও বেঁচে থাকা লোকজনকে হত্যা করা যুদ্ধাপরাধ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইউরোপের সঙ্গে যুদ্ধ চাই না, তবে লড়তে প্রস্তুত : পুতিন
পরবর্তী নিবন্ধইমরান খান পুরোপুরি সুস্থ