মাদক পাচারের সাথে সংশ্লিষ্টদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে

| রবিবার , ৭ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:১০ পূর্বাহ্ণ

মাদকদ্রব্য মানুষের সর্বনাশ ডেকে আনে। মানুষ জানেই না যে তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায় মাদক। দেশে এখন কত রকমের মাদকের তৎপরতা চলছে, তার হিসেব মেলা ভার। ইয়াবা, ফেনসিডিল ও হেরোইন- সর্বনাশা এসব মাদকদ্রব্য পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে যেমন আসছে, তেমনি দেশেও ভেজাল উপকরণ দিয়ে তৈরি হচ্ছে। ফলে একই সঙ্গে মাদক ও ভেজাল দু’ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে সেবনকারীরা। চিকিৎসার মাধ্যমে নেশার থাবা থেকে মুক্তি মিললেও ভেজাল মেশানো মাদক গ্রহণের ক্ষেত্রে সে সুযোগও পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে মৃত্যু বা পঙ্গুত্ববরণ এড়ানো যায় না। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, দেশে ইয়াবা, হেরোইন ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আইস নামের ভয়ংকর এক মাদক। এ আইসের প্রবেশ ঠেকাতে হবে যে কোনো উপায়ে। মাত্র কয়েক হাজার টাকার কাঁচামাল দিয়ে অন্তত এক লাখ ইয়াবা তৈরি করা যায়, যার মূল্য প্রায় দুই থেকে তিন কোটি টাকা। ফলে লোভে পড়ে অনেকেই এটি তৈরি করছে। চাহিদা থাকায় অলিগলিতে তৈরি হচ্ছে মাদকদ্রব্য। নিষিদ্ধ মাদক যেহেতু গোপনে বিক্রি হয়, সেহেতু এসব যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ থাকে না। মাদকদ্রব্য কেনাবেচা ও সেবনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হচ্ছে ভয়ংকর সব অপরাধ। কাজেই মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব না হলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা আরও বাড়বে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকার পরও মাদকের অবৈধ প্রবেশ ও ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। বিশেষজ্ঞদের মতে, চাহিদার কারণেই এমনটি হচ্ছে। তাছাড়া শর্ষের ভূতের কারণেও এক্ষেত্রে সুফল মিলছে না। মাদকের বিস্তার রোধে সরকারকে অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলাও জরুরি।
সম্প্রতি ‘জাগি প্রাণের উচ্ছ্বাসে, গড়ি মাদক মুক্ত সোনার বাংলাদেশ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে এক যুব সমাবেশের আয়োজন করেছে কারিতাস চট্টগ্রাম অঞ্চলের ‘স্মাইল প্রকল্প’। আজাদীতে গত ৩ নভেম্বর প্রকাশিত খবরে আমরা এই সমাবেশের মূল বক্তব্য সম্পর্কে অবগত হই। সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, মাদকের বিষাক্ত ছোবল শেষ করে দিচ্ছে তারুণ্যের শক্তি ও সম্ভাবনা। সর্বনাশা মাদক ধ্বংস করে মানুষের শরীর, মন, জ্ঞান-বিবেক ও তার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা তার পরিবারের সব স্বপ্নকে এবং তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতকে। মাদকের কালো থাবা ধ্বংস করে একটি সমাজকে, একটি জাতিকে এবং পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে এটি বৃহৎ আকার ধারণ করে একটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। তরুণ তাজা প্রাণের অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়ায় পিছিয়ে পড়ছে সমাজ।
ভয়াবহ এ সংকট থেকে উত্তরণে তরুণ ও যুব সমাজকে বাঁচাতে নৈতিক মূল্যবোধ তৈরি ও মোটিভেশনাল প্রোগ্রামসহ মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান করার ওপর জোর দেয়া হয়। বক্তারা বলেন, তরুণ ও যুবসমাজের মনে মাদকের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করতে হবে। মাদক পাচারের সাথে সংশ্লিষ্টদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। মাদক পাচার রোধ ও মাদকের সহজপ্রাপ্যতা বন্ধ করতে হবে। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কার্যকর করতে হবে। তাঁরা বলেন, একজন মাদকাসক্ত শুধু পরিবার নয়, রাষ্ট্রের বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। দেশে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন হচ্ছে। কোনো উন্নয়নই টেকসই হবে না, যদি মাদককে নির্মূল করা না যায়। মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন নয়, মাদক নির্মূল আইন চাই।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে মাদক পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলেও মাদকবিরোধী অভিযানে কর্তৃপক্ষের বড় ধরনের সাফল্য দৃশ্যমান নয়। মিয়ানমার থেকে দেশে বিভিন্ন রকম মাদক প্রবেশের বিষয়টি বহুল আলোচিত। গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার কারণে এটি এখন ওপেন সিক্রেট যে, দেশের দীর্ঘ সীমান্ত অরক্ষিত থাকায় সহজেই প্রবেশ করছে নানা রকম মাদক। এসব ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে হবে। নারী-শিশু পাচার ও মাদক চোরাচালানের ক্ষেত্রে প্রশাসনকে থাকতে হবে জিরো টলারেন্সে। তবে সামাজিক সচেতনতা ছাড়া শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও নারী শিশু পাচার বন্ধ করা সম্ভব নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে