স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মাদকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে। আমাদের দেশে মাদক তৈরি হয় না। আমরা কাউকে মাদক তৈরি করতে দিই না। বিদেশ থেকে মাদক আসে। মাদক রোধের জন্য আমরা আইন পরিবর্তন করেছি। মাদকের সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করেছি। মাদক রোধের জন্য সীমান্তে সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। বিজিবি এবং কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করা হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। কোনোক্রমেই আমরা মাদক দেশে ঢুকতে দেব না। নতুন প্রজন্মকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করতে হবে-এটা আমাদের ওয়াদা। এজন্য জনপ্রতিনিধিসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের দেশে জেলখানার ধারণ ক্ষমতা ৪১ হাজার। কিন্তু এটা ৮০ হাজারের নিচে নামে না। অনেক সময় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার পর্যন্ত হয়। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ মাদক ব্যবসায়ী। আমরা কাউকে ছাড় দিই না। মাদক দমনের জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চলছে। সরকারি চাকরিতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
গতকাল সাতকানিয়ার মাদার্শা বাবুনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবিরোধী সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। বন্দুকের নলে বিশ্বাস করে না। জনগণের উপর আওয়ামী লীগের বিশ্বাস আছে। জনগণের ভোটের উপর বিশ্বাস আছে। শুনছি বিএনপি নাকি ঢাকায় ৩০-৪০ লাখ লোক নিয়ে যাবে। ঢাকা নাকি দখল
করে ফেলবে। তারা নাকি সরকার গঠন করবে। জনগণের প্রতি তাদের কোনো আস্থা নেই। তারা সবসময় ষড়যন্ত্র নিয়ে থাকে। সারা দেশের লোকজন বলছে আগামী বারেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাবে। জনগণের উপর আমাদের আস্থা আছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যেকোন মূল্যে মাাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমন করতে হবে। পুরো দেশে উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে। পনের বছর আগে আমরা কোথায় ছিলাম আর এখন কোথায় আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলে উন্নয়নের মাধ্যমে দেশটিকে একটি নক্ষত্রে পরিণত করেছে।
সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা নদভীর সভাপতিত্বে ও সাতকানিয়া পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ জোবায়েরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সহসভাপতি এম ইদ্রিচ, সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব সিআইপি, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট জহির উদ্দিন, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক গোলাম ফারুক ডলার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজ আহমদ লিটন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ শাহজাহান।
লোহাগাড়া ফায়ার স্টেশন উদ্বোধন : লোহাগাড়া প্রতিনিধি জানান, লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকায় গতকাল লোহাগাড়া ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন উদ্বোধন করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল দেশের সব উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন হবে। শুধু উপজেলাভিত্তিক না, প্রয়োজনে আমরা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়ও ফায়ার স্টেশন স্থাপন করেছি। প্রয়োজন মতো দেশের শিল্প এলাকা, এমনকি নৌ পথেও ফায়ার স্টেশন স্থাপন করে যাচ্ছি। একটিই উদ্দেশ্য, আকস্মিক অগ্নিকাণ্ডে দেশের জনগণের জানমাল ও সম্পদ রক্ষা করা। আজ থেকে লোহাগাড়া ফায়ার স্টেশন জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকবে। এটি দেশের ৪৯২তম ফায়ার স্টেশন।
মাদক কারবারিদের গুলিতে ডিজিএফআই কর্মকর্তা নিহত হওয়ার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা যেখানে অবস্থান করে, সেটি নোম্যান্সল্যান্ড এলাকা। মাদক ব্যবসায়ীরা সবসময় সশস্ত্র অবস্থায় থাকে। গোয়েন্দা তথ্য মতে সেখানে মাদক ব্যবসায়ী এবং মাঝে মাঝে অস্ত্রধারীরাও একত্রিত হয়। মূলত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করার জন্য একটি বাহিনী সেখানে যায়। হঠাৎ এসব অস্ত্রধারী মাদক ব্যবসায়ীর সম্মুখে পড়ে যাওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা নদভী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাঈন উদ্দিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব শহীদ আতাহুর হোসেন, প্রকল্প পরিচালক আতাউর রহমান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের এডিশনাল ডিআইজি প্রবীর কুমার সরকার, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, জেলা পুলিশ সুপার শফি উল্লাহ, ক্রাইম অ্যান্ড অপস সুদীপ্ত সরকার, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ডেপুটি পরিচালক আনিসুর রহমান, উপ-সহকারী পরিচালক মুুহাম্মদ আবদুল্লাহ, ডিএসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান, এ এম এম ওয়াসিম ফিরোজ, সাতকানিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব, লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী, লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) এম ইব্রাহিম কবির ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন হিরু।