মাদক, অস্ত্র ও চোরাচালান রোধে কঠোর হতে হবে

| মঙ্গলবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৯:১৩ পূর্বাহ্ণ

সমপ্রতি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বেশ কয়েকটি মাদকের চালান আটক করেছে। জব্দ করা মাদকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় রয়েছে ইয়াবা। বিভিন্ন সময়ে পাচারের সঙ্গে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কথাও অনেক সময় উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে বিবিসি বাংলাসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক চক্র একসময় বাংলাদেশকে মাদকের করিডোর হিসেবে ব্যবহার করলেও এই ব্যবসায় বাণিজ্যিক লাভের যে সুযোগ আছে তাতে অভ্যন্তরীণ বাজারও তৈরি হয়েছে। ফলে মাদকবিরোধী অভিযান চললেও থামছে না মাদক পাচারের ঘটনা।

তাঁরা বলেন, ইয়াবার চালান ঠেকাতে সরকারি নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও ঠেকানো যাচ্ছে না এই মাদকের বিস্তার। এখন ইয়াবার পাশাপাশি ক্রিস্টাল মেথ বা আইসের মতো ভয়ঙ্কর মাদকও আসছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশে ইয়াবাআইসের মতো মাদক প্রবেশের অন্যতম রুট হলো কক্সবাজার ও মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষা টেকনাফ রুট।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক গবেষকরা বলেন, আশির দশকে ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা ফেনসিডিলের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছিল মাদকসেবীদের কাছে। এরপর কিছু সময় হেরোইনে আসক্ত হয় মাদকসেবীরা। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই জায়গাটা দখল করে নিয়েছে মিয়ানমার থেকে আসা ইয়াবা।

তাঁরা বলেন, স্বাধীনতার আগে থেকে টেকনাফ অঞ্চল মাদক চোরাচালানের অন্যতম রুট। আশির দশকে হেরোইন চোরাচালানের রুট হিসেবে এটা বেশ ব্যবহার করতো চোরাকারবারীরা। আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছানোর জন্য বাংলাদেশকে একটা করিডোর হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে এখন ইয়াবা পাচারের অন্যতম রুট টেকনাফের রুট। ২০০৬ সাল থেকে বাংলাদেশে যেভাবে মাদক কারবার বেড়েছে তাতে দেশের ভেতরে এর ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, মাদকসেবীদের প্রথম পছন্দই এখন ইয়াবা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থায় গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গেলের কাছাকাছি হওয়ায় সহজেই এই পথ বেছে নিতে পারছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। তারা রাতের আঁধারে বা ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে বিভিন্ন সময় এই রুট বেছে নিচ্ছেন।

এদিকে, বাংলাদেশমিয়ানমার সীমান্তের কাছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। বাংলাদেশে এসে পড়ছে কামানের গোলা ও বুলেট। বাংলাদেশে এরই মধ্যে কয়েকজন হতাহত হয়েছে। লড়াইয়ে টিকতে না পেরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) তিন শতাধিক সদস্য বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। যদিও তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এমন পরিস্থিতিতেও থেমে নেই মাদক চোরাচালান। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা শুক্রবার সকালে টেকনাফের সাবরাং থেকে তিন লাখ ইয়াবার একটি চালান জব্দ করেছেন। একই দিন বিকেলে বিজিবি রঙ্গিখালী সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে এক কেজির ওপর ক্রিস্টাল মেথ (আইস) জব্দ করে। কোনো কোনো মহল থেকে মাদকের পাশাপাশি অস্ত্র চোরাচালানেরও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দৈনিক আজাদীতে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ‘সীমান্তের অপরাধীদের হাতে ভারী অস্ত্র যাওয়ার শঙ্কা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে ভারী অস্ত্র কেড়ে নিয়েছে স্থানীয় অনেকেই। তার মধ্যে রয়েছে নাইন এমএম পিস্তলসহ একে৪৭ রাইফেল। সমপ্রতি স্থানীয় অপরাধীদের হাতে এসব অস্ত্র নিয়ে ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তবে পালংখালী ইউনিয়নের পুঠিবনিয়া এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে হেলাল উদ্দিন ও স্থানীয় জাহাঙ্গীর দুটি একে৪৭ রাইফেল নিয়ে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হলে তারা দুজন রাইফেল দুটি বিজিবির কাছে জমা দিতে বাধ্য হয়। একই দিন পালিয়ে আসা একটি গ্রুপের কাছ থেকে হাজি জালালের পুত্র রুবেল গোলাবারুদ ভর্তি একটি ব্যাগ কেড়ে নেয়। পরে লোক দেখানো কিছু গুলি জমা দিলেও বেশিরভাগ গুলি নিজের কাছে রেখে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এসব বিবেচনা মাথায় নিয়ে সীমান্তে নজরদারি আরো বাড়াতে হবে। মিয়ানমারের অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানকারীরা যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। মাদক, অস্ত্র ও চোরাচালান রোধে কঠোর হতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে