গত ১১ জুন ‘মাদক ব্যবসার কারণে বছরে পাচার ৫ হাজার কোটি টাকা’ শিরোনামে বিভিন্ন পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে মাদকের কারণে প্রতি বছর পাচার হয়ে যায় ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। আর মাদক কেনাবেচা করে অর্থ পাচারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। এশিয়ার দেশগুলো বিবেচনায় নিলে মাদকের মাধ্যমে টাকা পাচারের ঘটনায় বাংলাদেশ একেবারে শীর্ষে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে মাদকের কারণে প্রতিবছর পাচার হয়ে যায় ৪৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ৫ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। আর মাদক কেনাবেচা করে অর্থপাচারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। এশিয়ার দেশগুলো বিবেচনায় নিলে মাদকের মাধ্যমে টাকা পাচারের ঘটনায় বাংলাদেশ একেবারে শীর্ষে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি করেছে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ‘আংকটাড’। আঙ্কটাডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মাদকের অবৈধ অর্থপ্রবাহের দিক থেকে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে মেক্সিকো। এশিয়ায় বাংলাদেশ শীর্ষে। অপর চারটি দেশ হলো যথাক্রমে মালদ্বীপ, নেপাল, আফগানিস্তান ও মিয়ানমার। ২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫ বছরের তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে মাদকের মাধ্যমে অবৈধ অর্থপ্রবাহের এই চিত্র প্রথমবারের মতো তুলে ধরেছে আঙ্কটাড।
মাদক কেনাবেচা করে অর্থ পাচারের দিক দিয়ে বিশ্বে পঞ্চম অবস্থানে বাংলাদেশ কিংবা এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের শীর্ষে থাকার খবরে আমরা বিস্মিত। আমাদের নানা অগ্রগতির পাশাপাশি এই ‘অগ্রগতি’ রীতিমত দুঃখজনক। একে কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।
এই মাদক ব্যবসার কারণে বছরে ৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হওয়ার ঘটনা অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। একইসঙ্গে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। ১৩ জুন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাস হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট দায়ের করেন। রিটে মাদক বেচাকেনার মাধ্যমে বছরের কোটি কোটি টাকার অর্থপাচার ঠেকাতে বিবাদীদের ব্যর্থতাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়েছে আবেদনে।
আইন মন্ত্রণালয় সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, বিএফআইইউ, পুলিশের মহাপরিদর্শক, এনবিআর ও সিআইডিসহ ১২টি সংস্থা ও ব্যক্তিকে বিবাদী করা হয়েছে।
মাদকদ্রব্যের বিস্তার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। শহর থেকে গ্রামাঞ্চল– সর্বত্রই এখন হাতের নাগালে পাওয়া যায় এসব। বিগত বছরগুলোয় এর বিস্তার ঘটেছে আশঙ্কাজনকভাবে। তাঁরা বলেন, প্রকৃত চিত্রটি আসলে ভয়াবহ। মাদক পাচারের বেশিরভাগ ঘটনাই উদ্ঘাটিত হয় না; যে পরিমাণ মাদক ধরা পড়ে, তা খুবই সামান্য। মাদকাসক্তি বাংলাদেশে অন্যতম একটি জাতীয় সমস্যার নাম। নেশাকে সংজ্ঞায়িত করতে হলে বলতে হয় এমন কিছু দ্রব্য, ঔষধ কিম্বা উত্তেজক ঔষধ, উপাদান যা ব্যবহারে একধরনের মানসিক প্রশান্তি, কল্পনা ও বাস্তবের মাঝা–মাঝি বিচরণ, স্নায়ু বৈকল্যের কারণে দেহে তীব্র সুখানুভূতি, হেলুসিনেশন, মতিভ্রম হতে পারে যা খুব সাময়িক। মূলত এই ঘোর লাগাটা বেশিদিন থাকেনা। মাদকের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান মানব দেহের উপর স্থায়ী এবং ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে এর উপর নির্ভরতা সৃষ্টি করে। নেশাজাতীয় দ্রব্যের বিস্তারে সেবনকারীর আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থা রোধ করা না গেলে একটি প্রজন্মের চিন্তার জগতে সৃষ্টি হবে বন্ধ্যত্ব। দীর্ঘমেয়াদে এর ফল কতটা ভয়াবহ হবে, তা সহজেই অনুমেয়। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারের ফলে সামাজিকভাবে যেমন অস্থিরতা, অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে ঠিক তেমনি মাদকাসক্তরা আমাদের এক নাম্বার জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিভাবকদের উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা ক্রমশ ঘৃণায় রূপান্তরিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে মাদকাসক্তরা নিক্ষিপ্ত হচ্ছে অন্ধকার গলিতে। মানুষের মধ্যে মানবিকতা ও মূল্যবোধের শূন্যতা নানাবিধ কারণে ঘটে। তবে বর্তমান সময়ে মাদকাসক্ততা সমাজজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে; এটি যেকোনো মানুষ অনায়াসে স্বীকার করবেন। এর বিস্তার রোধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রশাসনকে এ বিষয়ে কঠোর হতে হবে।