চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর এলাকা থেকে এক লাখ পিস ইয়াবাসহ এক নারী মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে র্যাব–৭ চট্টগ্রাম। উদ্ধার হওয়া মাদকের আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে রায়পুরের দক্ষিণ পরুয়াপাড়া এলাকার একটি বসতঘরে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা মজুদ রয়েছে। এ সংবাদের ভিত্তিতে গত ১৭ জুলাই রাত আনুমানিক ১১টায় র্যাব–৭ এর একটি আভিযানিক দল দক্ষিণ পরুয়াপাড়ার আনোয়ার মাঝির বাড়িতে অভিযান চালায়। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েকজন দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে র্যাব সদস্যরা আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পারুয়াপাড়া গ্রামের আনোয়ার মাঝির স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪৩)কে আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সামনে আটক মনোয়ারাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার দেখানো ও সনাক্ত মতে ঘরের বারান্দায় খাটের নিচে রাখা একটি নীল ও কালো রঙের ব্যাগ থেকে বিশেষভাবে স্কচটেপে মোড়ানো ১০টি ইট সদৃশ প্যাকেট উদ্ধার করা হয়। ওই প্যাকেটগুলোতে মোট ১ লাখ পিস ইয়াবা পাওয়া যায়।
মাদকদ্রব্যের বিস্তার উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে বলে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র থেকে জানা গেছে, সমীক্ষায় দেশের আট বিভাগের ১৬টি জেলা থেকে ৫ হাজারের বেশি মানুষের তথ্য বিশ্লেষণ করে মাদকাসক্তির হিসাব তৈরি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে গবেষকেরা স্বীকৃত গবেষণা পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। গবেষণার ফলাফলের অংশে বলা হয়, দেশে প্রাক্কলিত মাদকাসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৮৩ লাখ, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ। তখনকার জনসংখ্যা ধরা হয়েছে ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ৩০ হাজার।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শহর থেকে গ্রামাঞ্চল– সর্বত্রই এখন হাতের নাগালে পাওয়া যায় এসব। বিগত বছরগুলোয় এর বিস্তার ঘটেছে আশঙ্কাজনকভাবে। তাঁরা বলেন, প্রকৃত চিত্রটি আসলে ভয়াবহ। মাদক পাচারের বেশিরভাগ ঘটনাই উদ্ঘাটিত হয় না; যে পরিমাণ মাদক ধরা পড়ে, তা খুবই সামান্য। মাদকাসক্তি বাংলাদেশে অন্যতম একটি জাতীয় সমস্যার নাম। নেশাকে সংজ্ঞায়িত করতে হলে বলতে হয় এমন কিছু দ্রব্য, ঔষধ কিংবা উত্তেজক ঔষধ, উপাদান যা ব্যবহারে একধরনের মানসিক প্রশান্তি, কল্পনা ও বাস্তবের মাঝামাঝি বিচরণ, স্নায়ু বৈকল্যের কারণে দেহে তীব্র সুখানুভূতি, হেলুসিনেশন, মতিভ্রম হতে পারে যা খুব সাময়িক। মূলত এই ঘোর লাগাটা বেশিদিন থাকে না। মাদকের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান মানব দেহের উপর স্থায়ী এবং ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে এর উপর নির্ভরতা সৃষ্টি করে। নেশাজাতীয় দ্রব্যের বিস্তারে সেবনকারীর আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থা রোধ করা না গেলে একটি প্রজন্মের চিন্তার জগতে সৃষ্টি হবে বন্ধ্যত্ব। দীর্ঘমেয়াদে এর ফল কতটা ভয়াবহ হবে, তা সহজেই অনুমেয়। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারের ফলে সামাজিকভাবে যেমন অস্থিরতা, অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে ঠিক তেমনি মাদকাসক্তরা আমাদের এক নম্বর জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অভিভাবকদের উদ্বেগ–উৎকণ্ঠা ক্রমশ ঘৃণায় রূপান্তরিত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে মাদকাসক্তরা নিক্ষিপ্ত হচ্ছে অন্ধকার গলিতে। মানুষের মধ্যে মানবিকতা ও মূল্যবোধের শূন্যতা নানাবিধ কারণে ঘটে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাদক যেভাবে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে, তাতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো এর কারণ খুঁজে বের করে তা দূর করার ব্যবস্থা নেওয়া। একটি নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি মাদক পেলে মাদকসেবীর শাস্তি হতে পারে। তবে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সচেতন মানুষ আশা করছে, এখন যেহেতু নতুন আইন হয়েছে, মাদকের ভয়াবহ বিস্তার রোধে এই আইন কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
আইনজীবীসহ অনেকের অভিযোগ, পুলিশ বা গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জানেন, মাদক ব্যবসা কাদের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু তাদের ধরা হয় না। ধরা পড়ে চুনোপুঁটি, যারা পরিবহন বা সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করে। এছাড়া আদালতে বিচারের মাধ্যমে অপরাধী প্রমাণিত না হলে কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না।
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার এবং অবৈধ পাচার রোধে সোচ্চার হতে হবে। মাদকাসক্তির কারণে কিশোর, তরুণ ও যুবসমাজের বড় একটা অংশের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়েছে। পারিবারিক অশান্তি ও সহিংসতা বৃদ্ধির একটা বড় কারণ মাদকাসক্তির বৃদ্ধি। তাই দেশে এখন মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক ও আইনি যুদ্ধ প্রয়োজন।