মাদকের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার

| বুধবার , ৩০ জুন, ২০২১ at ৭:০৯ পূর্বাহ্ণ

করোনাভাইরাসের কারণে সব কিছু বন্ধ থাকলেও ইয়াবা ব্যবসা থেমে নেই। একদিনের জন্যও বন্ধ হয়নি ইয়াবা পাচার। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইয়াবা প্রবেশের অন্যতম স্থান টেকনাফ থেকে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন স্থানে গেছে ইয়াবার চালান। এসব ইয়াবা পরিবহনে কৌশলও পাল্টেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে ইয়াবা পরিবহন করে আসছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে এসব ইয়াবার চালান। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নিয়মিত ধরাও পড়ছে ইয়াবার চালান। তবে যারা ধরা পড়ছেন তারা মূল ইয়াবা ব্যবসায়ী নন, বহনকারী মাত্র। নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া তাদের কাজ। তারা পুলিশ, র‌্যাবের হাতে ধরা পড়লেও আড়ালে থেকে যান মূল ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। টাকার লোভে পড়ে ইয়াবার চালান নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়া বহনকারীরা পুলিশ, র‌্যাবের হাতেও ধরা পড়লেও অন্য কোনো তথ্য দেন না। এ কারণে পুলিশ মূল ইয়াবা ব্যবসায়ীকে মামলায় আসামিও করতে পারে না। কড়া চেকপোস্ট ও তল্লাশী থাকা সত্ত্বেও কক্সবাজার থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবার চালান আসে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায়। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামে প্রবেশমুখ চুনতি এলাকায় আটক হয় বেশ কয়েকটি চালান। এছাড়া করোনার শুরু থেকে গত চার মাসে চট্টগ্রামে ছোট বড় অনেক চালান আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। টেকনাফ থেকে ইয়াবা নিয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাওয়ার পথে পুলিশ ও র‌্যাবের হাতে আটক হয় এসব ইয়াবার চালান। অসংখ্য ছোট বড় ইয়াবার চালান আটক হলেও এবং র‌্যাব, পুলিশের কড়া নজরদারিতে ধরা পড়ার পরেও থেমে নেই ইয়াবার পাচার।
গত ২৭ জুন দৈনিক আজাদীতে দুটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সংবাদ দুটির শিরোনাম : ‘পারিবারিকভাবেই তারা ইয়াবা ব্যবসায়ী’ ও ‘দেড় কোটি টাকার ইয়াবা জব্দ, চালকসহ আটক ২’। প্রথম সংবাদে বলা হয়েছে, পারিবারিকভাবেই তারা ইয়াবা ব্যবসায়ী। গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে নগরীর জামালখান এলাকার শরীফ কলোনির একটি ভবনে অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ পিস ইয়াবাসহ একই পরিবারের ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ইয়াবা বিক্রির নগদ ২ লাখ টাকা। কোতোয়ালী থানার ওসি নেজাম উদ্দীন আজাদীকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, কক্সবাজারের উখিয়া থেকে কম দামে ইয়াবা সংগ্রহ করে জামালখানের একটি বাসায় রেখে বিক্রি করতেন ওই পরিবারের সদস্যরা। গ্রেপ্তার চারজন হলেন মো. জোবাইর ওরফে জুবাইর (৫৫), তার দুই ছেলে মো. ফারেছ (২৬) ও মালেক (২৪) এবং মেয়ের জামাই নিয়াজ মোর্শেদ (২৮)। এদের মধ্যে ফারেছের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে একটি মামলা আছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দ্বিতীয় সংবাদে বলা হয়েছে, কর্ণফুলী থানার চর ফরিদ এলাকায় আনুমানিক ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা মূল্যের ৪৮ হাজার ইয়াবাসহ একটি ট্রাক জব্দ করেছে র‌্যাব-৭। এ ঘটনায় ট্রাকের চালকসহ দুজনকে আটক করা হয়েছে। আটককৃতরা হলেন কর্ণফুলী থানার ঈদগাঁও কাঁচা বাজার এলাকার মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে ট্রাকচালক ফরহাদুর রহমান শাওন (৩১) ও একই এলাকার মৃত জমিরের ছেলে মো. তৌফিক (২১)। র‌্যাব-৭ কর্তৃক গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার রাত সোয়া ১২টার দিকে কঙবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হযরত তৈয়বশাহ সিএনজি ফিলিং স্টেশনের পার্শ্ববর্তী র‌্যাবের চেকপোস্টের সামনে একটি ট্রাক থামানো হলে এর চালকসহ দুজন পালিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। আটক করে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ট্রাকের এয়ার সিলিন্ডারের মধ্যে সুকৌশলে লুকানো ৪৮ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
ইয়াবার চালান বন্ধ না হওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রশাসনের লোকজন এর জন্য কিছুটা দায়ী। অভিযোগ আছে, পুলিশের সঙ্গে একটা অঘোষিত চুক্তি থাকে ইয়াবা পাচারকারীদের। তাই তাদের ভরসা পেয়ে ওরা কাজ করে। এর বড় আরেকটা দিক হচ্ছে চাহিদা। ইয়াবার চাহিদাতো কমেনি। সারাদেশেই আছে। ফলে ইয়াবা চোরাকারবারিরা তাদের ব্যবসার নতুন পথ খুঁজে নিচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হলে প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন। মাদকের বিরুদ্ধে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন দরকার। সেটাও গড়ে তোলার চেষ্টা করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে