চলন্ত গাড়ি থেকে স্ক্র্যাপ চুরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে নগরীর ভাসমান শিশু কিশোরের দল। মাদকের বিনিময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত আটটি স্পটে প্রতিনিয়ত স্ক্র্যাপ চুরি করছে তারা। কারখানামুখী চলন্ত গাড়িতে উঠে পথে পথে স্ক্র্যাপ ফেলে দেয় তারা। পরে রাস্তা থেকে সেগুলো কুড়িয়ে আবার বিক্রি করা হয়। নির্বিঘ্নে এ কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করতে তারা পকেটে রাখে ধারালো অস্ত্র। প্রতিরোধ করতে গিয়ে ঘটছে খুনের ঘটনা। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে হালিশহর–পাহাড়তলী হয়ে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত এলাকায় গত দুই বছরে চলন্ত পরিবহন থেকে লোহার রড তৈরির কাঁচামাল (স্ক্র্যাপ) চুরির ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পুলিশের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে নগরী থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত আটটি স্পটে স্ক্র্যাপ চুরির ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে মহাসড়কে চলাচলকারী স্ক্র্যাপ বোঝাই গাড়ি থেকে এ চক্রটি লোহা চুরি করে আসছিল। আমদানি করা স্ক্র্যাপ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাসের পর খোলা ট্রাক, ডাম ট্রাক অথবা অল্প সংখ্যক কাভার্ড ভ্যানের মাধ্যমে কারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। কারখানাগুলোর অধিকাংশের অবস্থান সীতাকুণ্ড এলাকায়। সিএমপির অতিরিক্ত উপ–কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা জানান, ডিবিতে থাকা কারণে এ বিষয়ে বিস্তারিত কাজ করেছিলাম। নগরীর মাঝিরঘাট, বারিক বিল্ডিং মোড়, ঈদগাহ বাসস্ট্যান্ড, বার কোয়ার্টার পিবিআই অফিসের সামনে, অলঙ্কার মোড়, সীতাকুণ্ডের সেবা ফিলিং স্টেশনের সামনে, পাকা রাস্তার মাথা ও কালু শাহ ব্রিজ– এই আটটি স্পটে স্ক্র্যাপ চুরির ঘটনা ঘটে বলে আমাদের অনুসন্ধানে উঠে আসে। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে স্ক্র্যাপবহনকারী পরিবহন চালকদের সঙ্গে ছিনতাইকারী চক্রের যোগসাজশ থাকে। নির্ধারিত স্পটগুলোতে গিয়ে চালক গাড়ির গতি কমিয়ে দেন। এ সুযোগে লাফ দিয়ে ১০–১২ জন একসঙ্গে উঠে যায়। সমপরিমাণ কিংবা তার চেয়ে বেশি সদস্য রাস্তায় থাকে। যারা গাড়িতে উঠে তারা স্ক্র্যাপগুলো নাড়াচাড়া করে গাড়ি থেকে রাস্তায় ফেলে দেয়। অন্যরা সেগুলো কুড়িয়ে নেয়। মোটামুটি এটাই তাদের স্ক্র্যাপ চুরির পদ্ধতি।
ক্রমশঃ বেপরোয়া হয়ে ওঠা এই চক্রের সদস্যরা এখন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে জানিয়ে পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রো এএসপি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম আজাদীকে বলেন, ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে সীতাকুণ্ডের পাকা রাস্তার মাথা, কালু শাহ ব্রিজ এলাকায় তারা অবস্থান করে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক এই িচক্রের নেতৃত্ব দেয় মিরাজ, ম্যাগনেট, বাবুল ও জসীম। তাদের নিয়ন্ত্রণ করে আলাউদ্দিন আলো।
নগরীর মাঝির ঘাটকেন্দ্রিক চক্রে আছে মনির, নয়ন, আশরাফ, নোমান, সাগর, আশিকের নেতৃত্বে শতাধিক সদস্য। মনির এবং তোরাব ফকির তাদের নেতৃত্ব দেয়।
চট্টগ্রাম বন্দর সংলগ্ন টোলরোডের আব্বাসপাড়া এলাকায় সক্রিয় এই চক্রের সদস্যদের নেতৃত্বে আছে তৈয়ব, সাদ্দাম হোসেন মিন্টু, সুজন, তানভীর, জাকির, ফরহাদ, মানিক, তুষার, রুবেল, ফয়সাল ও ইমতিয়াজ। এদের মধ্যে মূল নেতা হল তৈয়ব ও সাদ্দাম।
উত্তর কাট্টলী–কর্ণেলহাট এলাকায় আজাদ, মুন্না, জসীম, সুমন, লিটন, রাশেদ, আব্বাস, ডালিম, রকি ও খালেদের সঙ্গে শতাধিক সদস্য আছে।
নগরীর হালিশহরে সাহেব–বাবুর বৈঠকখানা এলাকায় মামুনের নেতৃত্বে ১০–১৫ জন সদস্য অবস্থান করে। চট্টগ্রাম বন্দরের টোল রোড সংলগ্ন এছাক কন্টেনার ডিপো এলাকায় রুবেল, হাছান, সাকিব, জুয়েল, সাগরের নেতৃত্বে শতাধিক সদস্য আছে। সদরঘাট থেকে বন্দর পর্যন্ত এলাকায় ১৬ জনের আরও একটি সক্রিয় চক্র আছে। এদের মধ্যে ছয়জনকে সর্বশেষ সদরঘাট থানায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি সদস্যরা হল– নয়ন, ইলিয়াছ, বেলা, সজীব, নূর, গেদ্যা, রাসেল, সাকিব, সাগর, ইমন, সোহাগ, আনোয়ার, রাতুল। নগরীর হালিশহর থেকে আকবর শাহ থানার একে খান হয়ে সীতাকুণ্ডের লতিফপুর এবং বার আউলিয়া পর্যন্ত এলাকায় সক্রিয় অন্তত ৬০ জন।