ইয়াবা এখন নানা জায়গায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কেননা মাদকের নীল দংশন পুরো দেশকে গ্রাস করে ফেলছে। এ সব মাদকের মধ্যে বর্তমানে ইয়াবার চালান একেবারে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে। লাখে লাখে পাচার হচ্ছে এ ট্যাবলেট। কখনো বাসের চাকায়, কখনো বাইকের তেলের ট্যাংকে, কখনো বা সিএনজি টেক্সির সিলিন্ডারে করে যে যেভাবে পারছে সেভাবে পাচার করছে ইয়াবা। র্যাব-পুলিশের অভিযানে ধরাও পড়ছে পাচারকারীরা। তবুও যেন থামানো যাচ্ছে না ইয়াবা পাচারকারীদের।
গত ১৮ ডিসেম্বর দৈনিক আজাদীতে ‘ব্যাগে করে আনছিল তিন কোটি টাকার ইয়াবা’ শীর্ষক প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে, বাঁশখালী থেকে সিএনজি টেক্সিতে করে তিন কোটি টাকার ইয়াবা আনার পথে র্যাবের হাতে ধরা পড়েছে ৪ মাদক কারবারি। বাকলিয়া থানার নতুন ব্রিজ এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয় বলে র্যাব জানিয়েছে।
র্যাব জানায়, বাঁশখালী থেকে সিএনজি টেক্সিযোগে ইয়াবা নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে আসার তথ্যের ভিত্তিতে শাহ আমানত সেতু সংলগ্ন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি সিএনজি টেক্সিতে তল্লাশি করে চারজনকে আটক করা হয়। পরে আটক মো. ইলিয়াসের কাঁধে থাকা একটি ব্যাগের ভেতরে বিশেষ কৌশলে লুকানো অবস্থায় স্কচটেপ ও কাগজ দ্বারা মোড়ানো ১ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ সময় মাদক পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত সিএনজি টেক্সিটিও জব্দ করা হয়।
র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নুরুল আবছার বলেন, আটককৃতরা দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ইয়াবা সরবরাহকারী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইয়াবা সংগ্রহ করে। তারা একে অপরের যোগসাজশে অধিক লাভের আশায় চট্টগ্রাম মহানগরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে আসছিল বলে স্বীকার করেছে। উদ্ধারকৃত ইয়াবার আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি টাকা। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাকলিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বহনে সহজযোগ্য হওয়ায় পাচারকারীরা নানা পন্থায় ইয়াবা পাচার করছে। বিভিন্ন পথে এ ট্যাবলেট চোরাচালানি সিন্ডিকেট পৌঁছে দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে তৈরি এ ইয়াবা বিভিন্ন ক্যাটাগরির। স্বল্পমূল্য ও বেশি মূল্যের বিভিন্ন জাতের এ সব ইয়াবা ট্যাবলেটের ক্রেতা সমাজের যুবসমাজ থেকে অভিজাত শ্রেণী পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছে। এর চাহিদা এত বেশি বেড়ে গেছে, এটাকে রোধ করা কোনোক্রমেই সম্ভব হচ্ছে না। চাহিদার কারণে নকল ইয়াবাও দেশে তৈরি হচ্ছে বলে পত্রপত্রিকায় জানা গেছে।
পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচার কষ্টসাধ্য বিধায় মাদক বিক্রেতারা এখন এখানেই ইয়াবা তৈরি করা শুরু করেছে। যাতে করে বহু পাড়া মহল্লায় এখন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইয়াবার জমজমাট ব্যবসা চলছে। মিয়ানমার থেকে ইয়াবার চালান নানা হাত হয়ে চট্টগ্রাম আসে। এতে করে একেকটা ইয়াবার পেছনে অতিরিক্ত খরচ হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এই খরচ বাঁচাতেই নকল ইয়াবা কারখানা দেয়ার চেষ্টা করছে ইয়াবা ব্যবসায়ী চক্র। চাহিদার কারণে যে নকল ইয়াবা তৈরি হচ্ছে, তা ক্যাফেইনের সঙ্গে সোডিয়াম বেনজোয়েট এবং ভেনিলা পাউডার মিশিয়ে মণ্ড তৈরি করা হয়। পরে রঙ মিশিয়ে গোলাকার ছোট ছোট দানা প্রস্তুত করে তা ডাইসে ফেলে ইয়াবার রূপ দেয়া হয়। এসব সেবনের ফলে মাদকাসক্তদের মধ্যে মস্তিষ্ক বিকৃতির ঘটনার হার বেড়েই চলেছে। এছাড়া ক্ষতিকর রাসায়নিক মানবদেহের জন্য মারাত্মক বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অভিমত রয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরও এ সব ইয়াবা ট্যাবলেটের চাহিদা কেবলই বাড়ছে। ফলে পাচার হচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। বর্তমানে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ঢাকায় প্রায় কোনো না কোনদিন ছোট বড় ইয়াবার চালান আটক হচ্ছে। ধরা পড়ছে চালানের বাহকরা। তবে সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনা হচ্ছে এ ইয়াবা পাচার রোধে মূল দায়িত্ব যাদের ওপর সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনির কতিপয় অসৎ সদস্য এ ব্যবসার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ আছে। মূলত মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা সততার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন না করলে এ ধরনের ইয়াবাসহ চোরাচালানের বিভিন্ন পণ্য সহজে পার পেয়ে যাওয়ার অবকাশ থেকে যায়। সমাজের বিভিন্ন স্তরে অসৎ ব্যক্তিদের অবস্থান যেমন রয়েছে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতেও এ ধরনের লোকজন যে নেই তা বলা যাবে না। এদের পরোক্ষ সহযোগিতায় ইয়াবা পাচারকারীরা পার পেয়ে যায়। ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের পাচারের ব্যাপারে আইনের যথাযথ প্রয়োগ দরকার। শাস্তির ব্যবস্থাও সর্বোচ্চ করা অপরিহার্য। না হয় ইয়াবার আগ্রাসন থেকে বাংলাদেশের যুব সমাজকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে।