সেদিন রাত প্রায় দশটা। বাড়ি থেকে ফিরছিলাম। নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি ঢুকেছি মাত্র দেখি এক ছেলে তিন মেয়ে মাটিতে পড়ে আছে যন্ত্রণায় চিৎকার করে কাঁদছে। যাদের বয়স দশের বেশি নয়। গাড়ি থেকে নেমেই তাদের কাছে ছুটে যাই আমি ও আমার বর। দেখলাম দুইজন তরুণও আছে আমাদের পাশে তাদের সাহায্যের জন্য। রাস্তা থেকে তাদের তোলার চেষ্টা করলাম। একজন মেয়ের নড়াচড়া প্রায় বন্ধ! আশেপাশের মানুষ থেকে জানতে চাইলাম কোনো গাড়ি কি ধাক্কা দিলো তাদের? দেখছি একটা ময়লার ভেনগাড়ি। শুনলাম রাস্তার উপর দাঁড়ানো ঐ ভেনগাড়িটিতেই চড়ে যাচ্ছিল এই চারজন ছেলেমেয়ে, গাম শুঁকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দাঁড়ানো ছিলো। আর চালকও ছিলো নেশাগ্রস্ত বারো বছরের ছেলে। গাড়ি উল্টে এই অবস্থা। তাদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করানো হয়। ইতোমধ্যে আশেপাশে মানুষের কাছ থেকে জানতে পারলাম এই ধরনের নিরপরাধ পথশিশুদের মাদক সেবনের কথা। কী ভয়ংকর! নগরীর বিভিন্ন স্টেশনে ও তার আশেপাশের এলাকায় চলে মাদকের রমরমা ব্যবসা ড্যন্ডি, জুতার গাম, গাঁজা, হিরোইন আরো কত কি! ফিরে আসি বাসায়। এই ছোট ছোট শিশুগুলো হত দরিদ্র পরিবারের হলেও কত আদরের সন্তান। অনেকের পরিবার জানে তাদের কচিকাঁচাদের মাদক গ্রহণের কথা। কিন্তু পরিত্রাণের কোনো উপায় নেই। হায়! কেউ দেখারও নেই। এরা সুবিধাবঞ্চিত শিশু! শুধু প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধিগণ যদি সোচ্চার হন তবে এই শিশুদের মাদক সেবন অনেকটুকু সংখ্যায় কমানো যাবে বলে মনে হয়। এগুলো কি প্রশাসনের চোখে পড়ে না! নিরপরাধ পথশিশুদের প্রতি আমাদের কি কোনো দায়িত্ব নেই? এই পথশিশুগুলো পিছিয়ে থাকলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো কতটুকু! তাই যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার মধ্যে দিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনকে সুন্দর ও পরিশীলিত করতে সকলের এগিয়ে আসা উচিত। লেখক: প্রাবন্ধিক, শিক্ষক