মাথা ন্যাড়া করে শিক্ষিকার প্রতিবাদ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৪:৩৩ পূর্বাহ্ণ

কাবাডি দলের ছাত্রীদের চুলে বিশেষ ধরনের বেণি করায় প্রধান শিক্ষিকার ‘বকাঝকা ও হেনস্তার’ প্রতিবাদে মাথা ন্যাড়া করে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন এক ক্রীড়া শিক্ষিকা। ঘটনাটি নগরীর ফিরিঙ্গিবাজার ব্যাপটিস্ট মিশন রোডের এয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের। এ ঘটনায় জাহিদা পারভীন নামের ওই শিক্ষিকা নিজের ন্যাড়া মাথার ছবি পোস্ট করে অভিনব প্রতিবাদের কথা জানিয়েছেন ফেসবুক স্ট্যাটাসে। গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতে ফেসবুকে দেয়া এ স্ট্যাটাসে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনা তদন্তে গতকাল শুক্রবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রামের জেলা শিক্ষা অফিসারকে আহবায়ক করে গঠিত কমিটিতে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ও জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তাকে সদস্য করা হয়েছে। কমিটি গঠনের তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. আবু রায়হান দোলন আজাদীকে বলেন, প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে সহকারী শিক্ষিকা জাহিদা পারভীনের দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টির প্রেক্ষিতে বিষয়টি সরেজমিন তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে তিন কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলেও জানান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।
এদিকে, জেলা প্রশাসনের চিঠি পাওয়ার পরপর শুক্রবারই (গতকাল) তদন্ত কাজ শুরু করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির আহবায়ক চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার মো. ফরিদুল আলম হোসাইনী। গতকাল রাত ৮টার দিকে মুঠোফোনে কথা হলে জেলা শিক্ষা অফিসার আজাদীকে বলেন, আমরা কমিটির সব সদস্য একসাথে আছি। এখন তদন্ত কার্যক্রমেই আছি। বৃহস্পতিবার রাতে সহকারী শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, ‘স্কুলের মেয়েদের মাসখানেক কষ্ট করে খেলা শিখিয়ে মাঠে নিতে যাওয়ার আগের দিন তাদের ফ্র্যান্স বেণি করে ছবি তোলা ও খেলতে যাওয়ার অপরাধ আমার স্কুলে হেড মাস্টার মেয়েদের চুল ধরে মারা ও বকার প্রতিবাদে নিজের মাথার চুল ফেলে দিয়েছি। খুব কি খারাপ দেখা যাচ্ছে? পুনশ্চঃ আমার মেয়েরা খেলার মাঠে খেলতে নামার অনুমতি পায়নি। স্কুলের সভাপতি আবার বর্তমানে চট্টগ্রামের সিডিএর চেয়ারম্যান এবং স্কুলটি উনার বড় আব্বার নামে।’
যদিও সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিপা চৌধুরী। তার দাবি, ফ্রেঞ্চ বেণি করার জন্য ছাত্রীদের কাউকে মারধর করা হয়নি। কাবাডি খেলতে যাবার আগে স্কুলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে হাসিমুখে ছবিও তুলেছেন তিনি। তবে শিক্ষিকা জাহিদা পারভীনের দাবি- ফ্রেঞ্চ বেণি করায় প্রধান শিক্ষিকা নীপা চৌধুরী স্কুলের কাবাডি দলের কয়েকজন ছাত্রীকে চুল টেনে মারধর করেন। সেই ক্ষোভ ও বেদনা থেকে প্রতিবাদ জানাতে বাসার পাশে সেলুনে গিয়ে তিনি নিজের মাথা ন্যাড়া করেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সহকারী শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন সাংবাদিকদের জানান, গ্রীষ্মকালীন খেলায় কাবাডিতে অংশ নেওয়ার জন্য অনুমতি নিয়ে টিম তৈরি করি। স্কুলের ১৩ জন ছাত্রীকে নিয়ে দল করা হয়। ৭ সেপ্টেম্বর স্কুলের মডেল টেস্টের পর দলের জার্সি পড়ে গ্রুপ ছবি তোলার কথা। কাবাডির নিয়ম অনুযায়ী খেলার সময় ক্লিপ বা কোনো ধাতব জিনিস শরীরে রাখা যায় না। সেকারণে তাদের ফ্রেঞ্চ বেণি করতে বলি। ওই সময় ওয়াশরুমে গেলে ফ্রেঞ্চ বেণি দেখে প্রধান শিক্ষিকা ছাত্রীদের ডেকে বকাঝকা করে দুই বেনি করতে বলে এবং কয়েকজনকে মারধরও করে। আমি বের হয়ে তাদের বকা না দেওয়ার অনুরোধ করি এবং চুলের দুই বেনি করে স্কুলের মাঠে গিয়ে উনাকে নিয়ে ছবি তুলে নিই।
এ ঘটনায় তিনি মর্মামত হন জানিয়ে বলেন, পরদিন (৮ সেপ্টেম্বর) স্কুলের খেলা ছিল খাস্তগীর স্কুলের মাঠে সেন্ট স্কলাসটিকা স্কুলের সাথে। মডেল টেস্ট চলার কারণে সকালে আমাদের দেরি হবে বলে আয়োজকদের জানাই। পরদিন সকালে খাস্তগীর স্কুলে পৌঁছাতে দেরি হওয়ার কারণে স্কলাসটিকা স্কুলকে ওয়াকওভার দিয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে আয়োজক স্কুলের গেম টিচারকে জিজ্ঞেস করেও কোনো প্রতিকার পাইনি। এ ঘটনার থানা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে প্রতিবাদ করি।’
জাহিদা পারভীন জানান, এ ঘটনার পর শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি চার দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এরপর ১৪ সেপ্টেম্বর স্কুলে যোগদান করলেও ঘটনার প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন (‘বিমুক্তিকরণপত্র’ দেন)। ওইদিনই প্রধান শিক্ষিকার মারধরের প্রতিবাদে স্থানীয় একটি সেলুনে গিয়ে মাথা ন্যাড়া করেন বলে জানান তিনি। অবশ্য পদত্যাগ করার পরও কয়েকদিন বিদ্যালয়ে গেছেন জানিয়ে শিক্ষিকা জাহিদা বলেন, বিমুক্তি চেয়েছি পরিচালনা কমিটির সভাপতির কাছে। কিন্তু গত ২২ সেপ্টেম্বর (বৃহস্পতিবার) প্রধান শিক্ষিকা আমাকে স্কুলে আসতে মানা করে দেন।’ সেদিন (২২ সেপ্টেম্বর) রাতেই ফেসবুকে পোস্ট দেন ওই শিক্ষিকা।
নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে এয়াকুব আলী দোভাষ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নীপা চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি (জাহিদা) বেণি করায় মারধরের যে অভিযোগ করেছেন তা একেবারেই ভিত্তিহীন। তাদের মারধর করলে হাসিমুখে গ্রুপ ছবি কেন তুলব? যেটি শিক্ষিকা জাহিদা পারভীন নিজেই তুলেছেন।
প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘৮ সেপ্টেম্বর সকাল নয়টায় খেলা থাকলেও জাহিদা ম্যাডাম ছাত্রীদের নিয়ে দশটার দিকেই স্কুল থেকে বের হয়েছিলেন। কিন্তু স্কুল ত্যাগের পর থেকে তিনি আমার ফোন আর রিসিভ করেননি। তার সাথে থাকা স্কুলের দপ্তরির মাধ্যমে জানতে পারি দেরিতে যাবার কারণে সেন্ট স্কলাসটিকা স্কুলকে ওয়াকওভার দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে জাহিদা ম্যাডাম খাস্তগীর স্কুলের গেমটিচারের সাথে অশোভন আচরণও করেছেন।’ জাহিদা পারভীনকে কোনো কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, তার বিমুক্তিকরণ পত্রের বিষয়টি আমি পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে অবহিত করি। গত ১৭ সেপ্টেম্বর কমিটির সভায় তার আবেদন গ্রহণ করা হয়। এরপর তাকে (জাহিদা) চিঠি নিতে বলা হলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচেয়ারে বসা নিয়ে দুই গ্রুপে সংঘর্ষ
পরবর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বাড়াতে মার্কিন অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে : প্রধানমন্ত্রী