মাথায় গুলি নিয়ে কাতরাচ্ছে ১৬ মাসের শিশুটি

| মঙ্গলবার , ২৮ জুন, ২০২২ at ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ

এক বছর চার মাস বয়সী সুসান্না ত্রিপুরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে কিছুক্ষণ পরপর ব্যথায় কাতরাচ্ছে। মা রুংদতি ত্রিপুরা নানাভাবে চেষ্টা করেও তার কান্না থামাতে পারছিলেন না। ছোট্ট মেয়েটির মাথা, বুক ও মুখে গুলি লেগেছে, সে কারণে থেকে থেকে ব্যথায় কেঁদে উঠছিল সে। চিকিৎসকরা বলছেন, মাথায় রয়ে যাওয়া ছড়রা গুলির কারণে তার এ অবস্থা। খবর বিডিনিউজের।

হাসপাতালে আছে মুখে গুলি লাগা চার বছর বয়সী ছেলে অনন্ত ত্রিপুরাও। সে রুংদতির আরেক সন্তান। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার দুর্গম বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম পাড়ায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে স্বামী ও শ্বশুরকে হারানো রুংদতি এখন শোককে পাথর চাপা দিয়ে সুসান্নাকে বাঁচানোর যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই দিন নিহত হন তার স্বামী সুভাষ চন্দ্র ত্রিপুরা (৩০), শ্বশুর বিছাই চন্দ্র ত্রিপুরা (৫০) এবং পাশের বাড়ির কিশোর ধনরাং ত্রিপুরা (১৫)। এ ঘটনার জন্য স্থানীয় লোকজন পাহাড়ে গড়ে ওঠা নতুন সংগঠন ‘কুকি-চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টকে’ (কেএনএফ) দায়ী করছে। রুংদতি এখনও জানে না তার স্বামী-শ্বশুরের কী দোষ ছিল? কিংবা বা কী কারণেই তার দুই শিশু গুলিবিদ্ধ হয়েছে?

ওই দিন সন্ধ্যায় রান্নাঘরে থাকায় বেঁচে যান এই নারী। তার বড় ছেলে চার বছর বয়সী অনন্ত ত্রিপুরার মুখের বামপাশে গুলি লাগলেও সে এখন শঙ্কামুক্ত। হাসপাতালে বোনের আশেপাশে থাকলেও তার ছোটবোনের কী হয়েছে, তা নিয়ে সে নির্বিকার। সাইজাম পাড়ায় স্বামী, শ্বশুর, শ্বাশুড়ি, ননদ ও দুই সন্তান নিয়ে রুংদতির পরিবার। শ্বাশুড়ি পূর্বতী ত্রিপুরা বিলাইছড়িতে আত্মীয়ের বাড়িতে থাকায় তিনি বেঁচে যান।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে রুংদতি ত্রিপুরা বলেন, সন্ধ্যাবেলা আমি রান্না করছিলাম। আমার দুই ছেলে-মেয়ে বাড়ির বারান্দায় তাদের দাদুর সাথে খেলছিল। আমার স্বামীও ঘরের ভেতরে ছিল। হঠাৎ করে ২৫-৩০জন লোক এসে এলোপাথাড়ি গুলি করে পালিয়ে যায়। এসময় আমার শ্বশুর বিছাই ত্রিপুরা ও স্বামী সুভাষ ত্রিপুরা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। দাদুর সাথে থাকায় আমার দুই ছেলে-মেয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। আমি কোনোরকমে সেখান থেকে পালিয়ে প্রথমে কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে তাদের নিয়ে যাই।

সেখানকার ডাক্তাররা মেয়েকে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলে। শুক্রবার সন্ধ্যায় এখানে ভর্তি করেছি। ডাক্তাররা বলেছেন, মাথায় গুলি লেগেছে। কয়দিন থাকতে হবে জানি না। মেয়ে যখন ঘুমে থাকে, তখন কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু ঘুম ভাঙলেই কাঁদতে থাকে। এর মধ্যে সুসান্নার মাথার সিটি স্ক্যান করানো হয়েছে, রোববার তার প্রতিবেদন দেখে চিকিৎসকরা বলছেন, ছরড়া গুলি মাথায় রয়ে গেছে। তবে বয়স খুব কম হওয়ায় গুলি বের করার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহফুজুল কাদের বলেন, তার বুকে ও মাথায় গুলি রয়েছে। এখন শারীরিক পরিস্থিতি ঠিক আছে। পরে গুলি বের করার বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকারো পুড়ল জমির দলিল কারোর টাকা
পরবর্তী নিবন্ধদেশে ৫ থেকে ১২ বছর বয়সীরা পাবে ফাইজারের টিকা