দেশে মাথাপিছু গড় আয় বেড়েছে ৩৫ ডলার। চলতি অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে এ আয় দুই হাজার ৭৮৪ ডলার। ২০২২–২৩ অর্থবছরে মাথাপিছু আয় ছিল দুই হাজার ৭৪৯ ডলার। সোমবার ২০ মে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মাথাপিছু আয়ের এ হিসাব প্রকাশ করেছে। ডলারের দাম ১০৯ টাকা ৯৭ পয়সা ধরে এই মাথাপিছু আয়ের হিসাব করা হয়েছে।
১০৯ টাকা ৯৭ পয়সা ডলার মূল্যে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় তিন লাখ টাকার বেশি। প্রথমবারের মতো তিন লাখ টাকা ছাড়িয়েছে মাথাপিছু গড় আয়। সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছরের মাথাপিছু গড় আয় তিন লাখ ছয় হাজার ১৪৪ টাকা।
মাথাপিছু আয় একক ব্যক্তির আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরে আয়ের পাশাপাশি রেমিট্যান্স অর্থাৎ প্রবাস আয়কেও অন্তর্ভুক্ত করে মোট জাতীয় আয় হিসাব করা হয়। এ আয়কে মাথাপিছু ভাগ করে দিয়ে এই হিসাব করা হয়ে থাকে।
দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে একটি সুসংবাদ। এটা সরকারেরও বড় অর্জন। তবে দেশের শতভাগ মানুষ কখনোই একটি সরকারের সকল অর্জনকে সমান চোখে দেখবে না। আমরাও সেটা প্রত্যাশা করি না। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশ মাথাপিছু আয়ে চমক দেখিয়ে আসছে। বলা হচ্ছে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছে আপন গতিতে। এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছিলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধরন বিবেচনা করলে দেখা যায়, উভয় দেশে সাম্প্রতিককালে আয়বৈষম্য বেড়েছে। সম্পদবৈষম্যও বেড়েছে। তবে বাংলাদেশের তুলনায় ভারতে বৈষম্য বেশি। দুই দেশেই অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না। এটা মনে রাখতে হবে যে, ভারতের অর্থনীতির আকার বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বড়। আবার অনেক বড় দেশ হওয়ায় ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে অর্থনৈতিক অবস্থার বেশ তারতম্য রয়েছে। সুতরাং অর্থনীতির আকার, দেশের মধ্যে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যকার অবস্থার পার্থক্য, কোভিড অতিমারির কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক কাঠামো ও তার শক্তি প্রবৃদ্ধির ধরন, বৈষম্য পরিস্থিতি ইত্যাদির বিবেচনায় পুরো বিষয়টি দেখতে হবে।
অর্থনীতিবিদরা বলেন, আমাদের দেশে উন্নয়ন হচ্ছে ব্যাপকহারে। তবে তা সমানুপাতিক হারে সবার ভাগে পড়ছে না। সমাজে ধনীর সংখ্যা বাড়ছে তড়তড় করে। কিছু লোকের হাতে ধন সম্পদ জমা হচ্ছে এমনভাবে, যার ভাগ দেশের সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। এ অবস্থাতেও বাংলাদেশের জিডিপি বেড়েছে অবাক করা সংখ্যায়। এই অর্জনের ঘোষণা সরকারের পক্ষ থেকে আসে নি। এর স্বীকৃতি এসেছে আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেই। এবার ভাবতে হবে সীমিত আয়ের বিপুলসংখ্যক মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন নিয়ে। দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে, সর্বশ্রেণির মানুষের জীবনযাত্রার মানও সেভাবে বাড়াতে হবে।
ড. নারায়ন বৈদ্য এক লেখায় বলেছিলেন, মাথাপিছু আয় শব্দটি মোট জনসংখ্যার সাথে সম্পর্কিত। নির্দিষ্ট সময়ের মোট উৎপাদনের পরিমাণকে আর্থিকভাবে প্রকাশ করা হলে এ সময়ের মোট আয় পাওয়া যায়। এখানে উৎপাদন বলতে পণ্য ও সেবার উৎপাদনকে বুঝানো হয়। আবার মোট জাতীয় আয়ের পরিমাণকে মোট জনসংখ্যা দ্বারা ভাগ করা হলে নির্দিষ্ট সময়ের একটি অর্থনীতির মাথাপিছু জাতীয় আয় পাওয়া যায়। প্রত্যেক দেশের প্রধান উদ্দেশ্য হলো মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি করা। এ কারণে প্রত্যেক দেশ নির্দিষ্ট সময়ে পণ্য ও সেবার উৎপাদনকে বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণ করে। এর ফলে অর্থনীতি দুইভাবে লাভবান হয়। প্রথমত উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য শিল্প কারখানা স্থাপনের ফলে বস্তুগত পণ্যের উৎপাদন বাড়ে এবং একই সাথে কর্মসংস্থানের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
আবার সেবা খাতে যদি প্রকল্প হাতে নেয়া হয় তবে সেবা খাতের উৎপাদন বাড়ে এবং সে ক্ষেত্রেও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায়। শিল্পখাতের উৎপাদিত পণ্যকে যদি রপ্তানি করা যায় তবে সেইক্ষেত্রে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। অবশ্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্য একটি পথও খোলা আছে। যেসব দেশে প্রচুর জনশক্তি রয়েছে এবং উদ্বৃত্ত জনশক্তিকে ব্যবহার করা সম্ভব হয় না, সেই সব জনশক্তি বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা যায়। এর ফলে মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মোট কথায় মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধির জন্য উৎপাদন ও আয়ের পরিমাণকে বৃদ্ধি করতে হবে।